মানিকগঞ্জে ইলিশ শিকারে ‘টোকেন’ বাণিজ্য
সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মানিকগঞ্জে যমুনা ও পদ্মা নদীতে চলছে ইলিশ নিধন। স্থানীয় কতিপয় জনপ্রতিনিধির ছত্রচ্ছায়ায় প্রজনন মৌসুমে ইলিশ শিকার করছেন একশ্রেণির মৌসুমি জেলে। টাকার বিনিময়ে এসব জনপ্রতিনিধি ওই জেলেদের ‘টোকেন’ দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
গত বুধবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা গেছে, দৌলতপুর উপজেলার জিয়নপুর ইউনিয়নে যমুনা নদীর বিভিন্ন স্থানে অর্ধশতাধিক নৌকায় জেলেরা জাল দিয়ে ইলিশ শিকার করছেন। এর এক কিলোমিটার উজানে বাঘুটিয়া ইউনিয়নে যমুনা নদীর মধ্যে শতাধিক নৌকায় বসে জাল ফেলে ইলিশ ধরতে দেখা যায় জেলেদের। এ সময় কথা হলে পাচুরিয়া চরের আজমত শেখ (৫৫) ও বাঘসাইট্টা গ্রামের আলী হোসেন (৫০) বলেন, তাঁরা প্রতিবছরই এ মৌসুমে নদীতে ইলিশ ধরেন। এবারও জাল ও নৌকা নিয়ে নদীতে নেমেছেন। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার নদীতে ইলিশ খুবই কম পাওয়া যাচ্ছে।
কয়েকজন জেলে জানান, নদীতে অভিযান পরিচালনার কথা তাঁরা আগেই জেনে যান। তাঁদের সহযোগীরা উপজেলা পরিষদের আশপাশে ছদ্মবেশে থাকেন। অভিযানের খবর তাঁরাই মুঠোফোনে তাঁদের জানান। এরপর জাল উঠিয়ে তাঁরা নৌকা নিয়ে সটকে পড়েন।
চলতি মাসের ১৪ তারিখ থেকে আগামী ৪ নভেম্বর, ২২ দিন সরকার ইলিশের প্রজনন মৌসুম নির্ধারণ করেছে। এ সময় ইলিশ শিকার, কেনাবেচা, পরিবহন ও মজুত করা নিষিদ্ধ।
এ ব্যাপারে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইমরুল হাসান বলেন, এমন অভিযোগ তিনি শুনেছেন। মঙ্গলবার অভিযানে আটক এক জেলের কাছ থেকে টোকেন উদ্ধারও করা হয়েছে। তবে সুনির্দিষ্ট কারও নাম পাওয়া যায়নি।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হরিরামপুরের সিলিমপুর, হরিণা, আজিমনগর, সূতালড়ি এলাকায় পদ্মা নদীতেও ইলিশ শিকার চলছে। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে অধিকাংশ সময় রাতের বেলায় চলে ইলিশ শিকার।
এ বিষয়ে জ্যেষ্ঠ সহকারী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রীতি কণা পাল বলেন, ইলিশ শিকার বন্ধে প্রতিদিনই অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। জেল–জরিমানা করা হচ্ছে। তবে দেশের এই সম্পদ রক্ষায় প্রশাসনের পাশাপাশি সমাজের প্রত্যেক নাগরিকের সহযোগিতা প্রয়োজন।
চলতি মাসের ১৪ তারিখ থেকে আগামী ৪ নভেম্বর, ২২ দিন সরকার ইলিশের প্রজনন মৌসুম নির্ধারণ করেছে। এ সময় ইলিশ শিকার, কেনাবেচা, পরিবহন ও মজুত করা নিষিদ্ধ। তবে এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে দৌলতপুর ও শিবালয় উপজেলায় যমুনা এবং হরিরামপুর উপজেলায় পদ্মায় ইলিশ শিকার করছেন মৌসুমি জেলেরা।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মা ইলিশ শিকার বন্ধে প্রতিদিনই নদীতে অভিযান পরিচালনা করছে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ ও মৎস্য বিভাগের লোকজন। প্রায় প্রতিদিনই জেলেদের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড, জাল ধ্বংস ও নৌকা নষ্ট করা হচ্ছে।
রোববার (২৫ অক্টোবর) পর্যন্ত ১৭৫টি অভিযান ও ৭৮টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। এসব অভিযানে ১ হাজার ১৮০ জনকে আটক করা হয়। আদালতের মাধ্যমে ২৯৩ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড এবং ৫ লক্ষাধিক টাকা জরিমানা করা হয়। এসব অভিযানে প্রায় ৪৯ লাখ মিটার কারেন্ট জাল, ২৪২ কেজি ইলিশ জব্দ করা হয়।
নদীতে অভিযান পরিচালনার কথা আমরা আগেই জেনে যাই। আমাদের লোকজন উপজেলা পরিষদের আশপাশে ছদ্মবেশে থাকে। অভিযানের খবর তাঁরাই মুঠোফোনে আমাদের জানায়। এরপর জাল উঠিয়ে আমরা নৌকা নিয়ে সড়ে পড়ি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন জেলে বলেন, বাচামারা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সাইফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁরা নদীতে ইলিশ শিকার করছেন। তবে ইউপি সদস্য সাইফুল এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এ ছাড়া অভিযোগ রয়েছে একই ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম, স্থানীয় প্রভাবশালী সালাম শেখ ও আরিফ শেখ টোকেন বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। তাঁরা টাকা নিয়ে নদীতে ইলিশ শিকারের জন্য জেলেদের টোকেন দিচ্ছেন। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি সদস্য নজরুল উল্টো দাবি করেন, ইলিশ শিকার বন্ধে তিনি এলাকাবাসীদের সচেতন করছেন।
এমন অভিযোগ আমি শুনেছি। মঙ্গলবার অভিযানে আটক এক জেলের কাছ থেকে টোকেন উদ্ধারও করা হয়েছে। তবে সুনির্দিষ্ট কারও নাম পাওয়া যায়নি।