মা–বাবার পাশ থেকে শিশুকে অপহরণের পর হত্যায় ৩ জনের যাবজ্জীবন

আদালত পর্যবেক্ষণে ঘটনাটিকে মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক উল্লেখ করে বলেছেন, অভিযুক্ত আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেওয়া উচিত। তবে আসামিদের বয়স বিবেচনায় সর্বোচ্চ শাস্তি না দিয়ে যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়েছে।

বাগেরহাটে ঘুমন্ত মা-বাবার পাশ থেকে শিশুকে অপহরণের পর হত্যার ঘটনায় যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামিপ্রথম আলো

বাগেরহাটে ঘুমন্ত মা-বাবার পাশ থেকে শিশু অপহরণ করে হত্যার দায়ে তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ৬৫ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছর করে সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ রোববার দুপুরে বাগেরহাটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যাল–২–এর বিচারক মো. নূরে আলম আসামিদের উপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করেন।

দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা হলেন বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার গুলিশাখালী গ্রামের মো. হৃদয় ওরফে রাহাত হাওলাদার (২১), মো. মহিউদ্দিন হাওলাদার (২২) ও মো. ফায়জুল ইসলাম (২৮)। তাঁরা সবাই আত্মীয়।

এই তিনজনের বিরুদ্ধে ঘরে ঢুকে ঘুমন্ত মা-বাবার পাশ থেকে তিন মাসের শিশু আবদুল্লাহকে অপহরণ, মুক্তিপণ আদায় ও হত্যার তিনটি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত আইনের তিনটি পৃথক ধারায় আলাদা আলাদাভাবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। পাশাপাশি দুটি ধারায় প্রত্যেক আসামিকে ২০ হাজার করে ৪০ হাজার টাকা এবং একটি ধারায় ২৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত।

রায়ে সাজাগুলো একই সঙ্গে কার্যকরের কথা জানিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের সহকারী কৌঁসুলি (এপিপি) রণজিৎ কুমার মণ্ডল বলেন, আদালত শিশু অপহরণের পর হত্যার ঘটনাটিকে মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক বলে উল্লেখ করেছেন। আদালত বলেছেন, অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তিন আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হওয়ার কথা। তবে আসামিদের সবার বয়স কম। বয়স বিবেচনায় সর্বোচ্চ শাস্তি না দিয়ে আদালত তাঁদের যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছেন।

মামলার নথির বরাত দিয়ে আইনজীবী রণজিৎ কুমার মণ্ডল বলেন, ২০১৯ সালের ১১ মার্চ দলিল লেখক সোহাগ হাওলাদারের বাড়ির জানালার গ্রিল কেটে তাঁদের পাশে ঘুমিয়ে থাকা ছেলে আবদুল্লাহকে অপহরণ করেন দুর্বৃত্তরা। এরপর শিশুটিকে ফিরিয়ে দিতে আবদুল্লাহর পরিবারের কাছে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন তাঁরা। এ ঘটনায় ওই দিনই শিশুটির বাবা মোরেলগঞ্জ থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে একটি মামলা করেন।

পরের দিন শিশুটির বাবা সোহাগ তাঁদের দাবি করা মুক্তিপণের টাকা দিলেও তাঁরা শিশুটিকে আর ফিরিয়ে না দিয়ে পালিয়ে যান। সে সময় স্থানীয় লোকজন তাঁদের ধাওয়া করলে তাঁরা একটি মোটরসাইকেল ফেলে যান। পুলিশ ওই মোটরসাইকেলের সূত্র ধরে প্রথমে মো. হৃদয় ওরফে রাহাত হাওলাদারকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বাদীর বাড়ির অদূরে মাছের ঘেরের শৌচাগারের সেপটিক ট্যাংক থেকে আবদুল্লাহর লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে মহিউদ্দিন ও ফায়জুলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আবদুল মতিন ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর তিনজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে শিশুটির বাবা সোহাগ হাওলাদার বলেন, আর যেন কোনো মা–বাবাকে এভাবে সন্তানহারা না হতে হয়। কেউ যেন আর এমন অপরাধের সাহস না পান।

তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. এনামুল হোসেন বলেন, ‘আমরা এই মামলায় ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছি। শুধু প্রধান আসামি হৃদয়ের ১৬৪ ধারার জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করে ফায়জুল ও মহিউদ্দিনকে দণ্ড দেওয়া হয়েছে। রায়ের কপি হাতে পেলে আমরা উচ্চ আদালতে যাব।’