স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুক ও নির্যাতনের অভিযোগে দায়ের করা মামলা তুলে নিতে স্ত্রীকে অপহরণ করে সন্তানসহ দীর্ঘ আড়াই বছর আটকে রাখা হয়েছিল। গত রোববার নারায়ণগঞ্জ থেকে সন্তানসহ অপহৃত নারীকে উদ্ধার করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) রংপুর কার্যালয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুস সালাম এসব তথ্য জানান।
পিবিআই সূত্র ও মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ১৩ এপ্রিল রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার তালুক সাহবাজ গ্রামের ওমেদ আলীর মেয়ে মাহফুজা বেগম ও তাঁর তিন বছরের মেয়ে জেরিনকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে কাউনিয়া থেকে মাইক্রোবাসে তুলে অপহরণ করা হয়। ওই দিনই অপহৃত মাহফুজার বড় ভাই জহুরুল হক বাদী হয়ে তাঁর বোনের স্বামী পীরগাছা উপজেলার কালা গ্রামের সামসুল হকের ছেলে মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে কাউনিয়া থানায় একটি গুমের মামলা করেন। দীর্ঘদিনেও পুলিশ মা-মেয়েকে উদ্ধার করতে না পারায় ছয় মাস আগে পিবিআইয়ের ওপর মামলার ভার দেওয়া হয়। নারায়ণগঞ্জের রূপপুর উপজেলার গাউছিয়া এলাকায় মা-মেয়ের সন্ধান পাওয়া যায়। পুলিশের তৎপরতা টের পেয়ে মেয়েসহ মাহফুজাকে গাউছিয়া এলাকার একটি খোলা জায়গায় রেখে পালিয়ে যান মনিরুজ্জামান।
মাহফুজার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী পিবিআই কর্মকর্তা আবদুস সালাম জানান, বিয়ের পর থেকেই মনিরুজ্জামান যৌতুকের টাকার জন্য মাহফুজার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালাতেন। স্বামীর অত্যাচারে টিকতে না পেরে মাহফুজা একমাত্র শিশু মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়ি পীরগাছায় চলে যান। পরে মাহফুজা ২০১২ সালে রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে মনিরুজ্জামানসহ স্বামীর পরিবারের আরও পাঁচজনের বিরুদ্ধে যৌতুক নিরোধ আইনে মামলা করেন। এ মামলা তুলে নিতে বাধ্য করতেই স্ত্রী-কন্যাকে অপহরণ করে নারায়ণগঞ্জের একটি বাড়িতে আটকে রাখেন মনিরুজ্জামান। এ সময় মামলা তুলে নিতে এবং সংসার করতে সম্মতি আদায়ে মাহফুজাকে হুমকিধমকি দেওয়াসহ নানাভাবে নির্যাতন করতেন মনিরুজ্জামান।
এসব বিষয়ে মনিরুজ্জামানের বাবা সামসুল হক বলেন, তাঁর ছেলে তাঁদের সঙ্গে থাকেন না। তিনি এত দিন কোথায়, কীভাবে ছিলেন তাঁরা জানেন না। তবে মাহফুজার মামলার কথা স্বীকার করেন তিনি। এ ছাড়া আর কোনো কথা বলতে রাজি হননি সামসুল হক।
পুলিশ মনিরুজ্জামানকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে। বর্তমানে মাহফুজা পুলিশের হেফাজতে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে আছেন।