মায়েদের অভিযোগে মাদকাসক্ত সন্তানদের দণ্ড

প্রতীকী ছবি

এক যুগ আগেও কিশোরগঞ্জের ভৈরবের সুরাইয়া বেগমের (৫০) বসতঘরটি ছিল পরিপাটি। দামি আসবাব আর ইলেকট্রনিক পণ্যে সজ্জিত। এখন সেই ঘরে তেমন কিছু নেই। নেশার টাকার জন্য মাদকাসক্ত ছেলে মো. শাহিন (৩৪) বেশির ভাগ জিনিসই বিক্রি করে দিয়েছেন। ভাত খাওয়ার থালাবাসনও লুকিয়ে রাখতে হয়। নেশার টাকা চেয়ে না পেলে মাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করতে একটুকু হাত কাপে না ছেলের। ছেলের মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার সইতে না পেরে সোমবার দুপুরে পুলিশের কাছে নালিশ করেন মা। পুলিশ ছেলেকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতে হাজির করে। শাহিনকে এক বছর আট মাসের কারাদণ্ড এবং ৫০০ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে তিন দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
একই দিন একই অভিযোগে মো. নুরুন্নবী (২৩) নামের আরেক মাদকাসক্তকে এক বছর ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং ৫০০ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে তিন দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লুবনা ফারজানা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।

ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্র জানায়, শাহিন পৌর শহর কমলপুর এলাকার রুস্তম মিয়ার ছেলে। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান তিনি। এক যুগের বেশি সময় ধরে তিনি মাদকাসক্ত। তাঁর এই আসক্তির কারণে বিয়ের কয়েক বছর পর স্ত্রী চলে যান। ছেলের উৎপাত সইতে না পেরে মা সোমবার সকালে ভৈরব থানায় গিয়ে অভিযোগ করেন।
সুরাইয়া বলেন, ‘মায়ের গায়ে সন্তান হাত তোলে, এ কথা কাউকে বলা যায় না। সে কারণে বহুদিন এ কথা লুকাইয়া রাখছিলাম। এখন আর পারতেছি না। থানা-পুলিশের সাহায্য নিলাম। নেশা আমার ছেলের চোখ থাইক্কা লাজশরম সব উঠাইয়া নিয়া গেছে।’
অপর দণ্ডপ্রাপ্ত নুরুন্নবীর বাড়ি পৌর শহরের কমলপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায়। বাবা মুক্তার মিয়া বেঁচে নেই। মা শামসুন্নাহার বেগম। চার ভাই-বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। নুরুন্নবী পেশায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালক। দুই বছর আগে তিনি মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। নেশার টাকা জোগাতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের মুঠোফোন সেট একাধিকবার চুরি করেছেন নুরুন্নবী। নগদ টাকা ঘরে রাখা যায় না। আসবাবপত্রও বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন টাকার জন্য মায়ের শরীরে হাত তুলছেন নিয়মিত। মা আজ পুলিশের দ্বারস্থ হন।
দুঃখ করে মা শামসুন্নাহার বলেন, ‘ইয়াবার কারণে বউ-সন্তান গেছে। মা ভুলছে। এলাকার লোকজন ঘেন্না করে। তবুও যদি শরম হইতো।’
ভ্রাম্যমাণ আদালতের প্রধান লুবনা ফারজানা বলেন, আদালতে দুজনই মাদক সেবন ও মায়েদের ওপর শারীরিক নির্যাতন করার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে তাদের পৃথক মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে। মাদক নির্মূল করা না গেলে এই ধরনের অভিযোগ না কমে বরং বেড়ে চলার আশঙ্কা আছে।