মিয়ানমার কথা দিয়েছে, রাখবে কি না সন্দেহ

মাদক নিয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমার মহাপরিচালক পর্যায়ের চতুর্থ দ্বিপক্ষীয় ভার্চ্যুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। মঙ্গলবার ঢাকায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে বাংলাদেশ অংশের প্রতিনিধিরা
ছবি: প্রথম আলো

আগের তিনটি বৈঠকের মতো এবারও মাদক নিয়ন্ত্রণে নানা ইস্যুতে বাংলাদেশের সঙ্গে একমত হয়েছে মিয়ানমার। তবে শেষ পর্যন্ত দেশটি কথা রাখবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে আছে বাংলাদেশ।

মঙ্গলবার বাংলাদেশের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও মিয়ানমারের সেন্ট্রাল কমিটি ফর ড্রাগ এবিউজ কন্ট্রোলের মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এটি ছিল চতুর্থ দ্বিপক্ষীয় বৈঠক, যা ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আহসানুল জব্বার, মন্ত্রণালয় ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মোট ১৮ জন অংশ নেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৭ সালের পর মঙ্গলবারই প্রথম মিয়ানমার বৈঠকে বসতে সম্মত হলো। সম্মেলনের তারিখ পেছাতে হয়েছে বেশ কয়েকবার। এর আগের তিনটি বৈঠকের একটিতেও বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্তে মিয়ানমার সই করেনি। এবারও ১১টি বিষয়ে দেশ দুটি ঐকমত্যে পৌঁছেছে। তারপরও মিয়ানমার বৈঠকের কথা মনে রাখে কি না, তা নিয়ে কর্তৃপক্ষ চিন্তায় আছে। তবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আহসানুল জব্বার বলেন, বাংলাদেশ মিয়ানমারকে সীমান্ত এলাকার ইয়াবা উৎপাদনকারী গোপন কারখানার তালিকা দিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে মিয়ানমার বলেছে, তারা দেশটির শান, রাখাইন ও মংডুতে ইয়াবা উৎপাদকদের ওপর ব্যবস্থা নিয়েছে।

অন্যান্য মাদকের পাশাপাশি জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত তারা ৩১ কোটি ৪০ লাখ ইয়াবা ধ্বংস করাসহ ৭৫৪৯টি মামলা করেছে। বৈঠকে তারা উদ্ধার করা ইয়াবার ছবিও দিয়েছে। তারা বলেছে, চীন ও থাইল্যান্ড থেকে সিইডোঅ্যাফিড্রিনসহ ইয়াবা বানানোর অন্যান্য উপকরণ পাচার হয়ে মিয়ানমারে ঢুকছে। তাদের দেশে এখন ইয়াবাসেবীর সংখ্যা সাড়ে ৩ লাখ বলেও জানায় তারা।

মাদকের উৎস, মাদক পাচারের রুট ও স্পটের তথ্য বিনিময়, জেলে, মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারের ডেটাবেইজ তৈরি, মাদক পাচারের নিত্যনতুন কৌশল ও গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার একমত হয়েছে। দেশ দুটি মাদকপাচারের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের তালিকা নিয়মিতভাবে হস্তান্তর করবে বলে রাজি হয়েছে। তা ছাড়া মিয়ানমার এবার সীমান্তে যৌথ টহলের প্রস্তাব করেছে।

ইয়াবা পাচারে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সম্পৃক্ততা নিয়ে কোনো কথা উঠেছিল কি না, এমন প্রশ্নে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বিরুদ্ধে কেউই গাফিলতির কোনো অভিযোগ তোলেনি।

সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে আরও জানতে চাওয়া হয়, এর আগের তিনটি বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্তের অগ্রগতি কতটুকু। সে সম্পর্কেও সংবাদ সম্মেলনে পরিষ্কার জবাব পাওয়া যায়নি।

কুরিয়ার সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বৈঠক
গত ১৩ ডিসেম্বর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে কুরিয়ার সার্ভিসের সঙ্গে একটি কর্মশালা আয়োজিত হয় অধিদপ্তর কার্যালয়ে। সম্প্রতি কুরিয়ারে করে মাদক পাচার চেষ্টার বেশ কটি ঘটনা ঘটার পরিপ্রেক্ষিতে এ কর্মশালা হয়। বৈঠকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ, র‍্যাব, এনএসআই, ডিজিএফআই, বিজিবি, কোস্টগার্ড, ডাক অধিদপ্তর, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি ও চেয়ারম্যান এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিসের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। কর্মশালায় কুরিয়ার সার্ভিস জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যতা যাচাই–বাছাইয়ের অধিকার চেয়েছে। এতে তারা প্রাপক–প্রেরককে চিনতে পারবে বলে জানিয়েছে। পাশাপাশি কুরিয়ার সার্ভিসকে ‘আপনার সেবাগ্রহীতাকে জানুন’ সংরক্ষণ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। পরদিন মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র এবং এসব কেন্দ্রে চিকিৎসাধীনদের ব্যাপারে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয় পৃথক আরেকটি কর্মশালায়।