রিমান্ডে ‘অসুস্থ’ দাবি আকবরের, হাসপাতাল জানাল সুস্থ

গ্রেপ্তারের পর বরখাস্ত এসআই আকবর হোসেন ভূঁঞা
সংগৃহীত

সিলেটে পুলিশি হেফাজতে রায়হান আহমদের মৃত্যুর ঘটনায় সাত দিনের রিমান্ডে আছেন প্রধান অভিযুক্ত বরখাস্ত উপপরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁঞা। রিমান্ড চলাকালে গতকাল শুক্রবার রাতে তিনি হঠাৎ নিজেকে ‘অসুস্থ’ দাবি করেন। এরপর তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা কোনো ধরনের অসুস্থতা খুঁজে পাননি। ফলে তাঁকে আবারও রিমান্ডে নেওয়া হয়।

এদিকে পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে রায়হানকে নির্যাতনকালে বদলে ফেলা শার্ট ও রায়হানের মুঠোফোন উদ্ধার করে মামলার আলামত হিসেবে সংরক্ষণ করার দাবি জানিয়েছেন তাঁর মা ছালমা বেগম। আজ শনিবার দুপুরে নগরীর আখালিয়ার নিহারিপাড়ায় রায়হানের বাসায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে এই দাবি জানানো হয়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পিবিআই পরিদর্শক আওলাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, রিমান্ড চলাকালে গতকাল রাতে অসুস্থতার কথা জানান আকবর। এরপর রাত নয়টার দিকে তাঁকে সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকেরা তাঁর সুস্থতার বিষয়টি জানালে রাত সাড়ে ৯টার দিকে পুনরায় তাঁকে রিমান্ডে নেওয়া হয়।

আরও পড়ুন

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের একজন চিকিৎসক প্রথম আলোকে বলেছেন, আকবর আগ বাড়িয়ে অসুস্থ বলছিলেন। কিন্তু কী অসুস্থতা, এ ব্যাপারে কিছু বলছিলেন না। প্রয়োজনীয় কিছু পরীক্ষার পর তাঁর অসুস্থতা ধরা না পড়ায় তাঁকে আবার পিবিআই নিয়ে গেছে।

গত ১০ অক্টোবর রাতে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে ধরে নেওয়া হয় মো. রায়হান আহমদকে (৩৪)। সেখানে তাঁকে নির্যাতন করে এসআই আকবরের নেতৃত্বাধীন একদল পুলিশ। পরদিন ১১ অক্টোবর রায়হানের মৃত্যু হয়। ওই দিন রাতেই রায়হানের স্ত্রী বাদী হয়ে হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন।

পুলিশ জানায়, ঘটনা তদন্তে মহানগর পুলিশের অনুসন্ধান কমিটি নির্যাতনের সত্যতা পাওয়ায় ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবরসহ চার পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত এবং তিন পুলিশ সদস্যকে ফাঁড়ি থেকে প্রত্যাহার করে। এ ঘটনার পরপরই গা–ঢাকা দেন আকবর। পলাতক থাকার ২৭ দিন পর ৯ নভেম্বর সকালে সিলেটের কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত থেকে আকবরকে গ্রেপ্তার করে জেলা পুলিশের একটি দল।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন রায়হান আহমদের মা ছালমা বেগম। শনিবার দুপুরে সিলেট নগরীর আখালিয়ায়
প্রথম আলো

প্রতিবাদী কর্মসূচির বদলে চলবে আইনি লড়াই

রায়হান নিহতের ঘটনার পরপরই এলাকাবাসীকে নিয়ে বৃহত্তর অখালিয়া সংগ্রাম পরিষদ (বার হামছায়া) নামের একটি সর্বদলীয় মোর্চা গঠন হয়। এই সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে আজ শনিবার দুপুরে রায়হানের বাসায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন হয়। সেখানে রায়হানের মা ছালমা বেগম বলেছেন, ‘এ ঘটনার মূলহোতা পলাতক বরখাস্ত এসআই আকবর হোসেন ভূঁঞা গ্রেপ্তার হওয়ার পর আমরা ন্যায়বিচার পাওয়ার আশা করছি। এখন মামলার তদন্ত দ্রুত ও গুরুত্বপূর্ণ আলামত যথাযথভাবে সংরক্ষণ করার দাবি আমাদের।’

মূলহোতা আকবর ধরা পরার পর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে পুলিশ ও তদন্তকারী সংস্থার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়। সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ও সিটি করপোরেশনের স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মখলিছুর রহমান কামরান লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘রায়হানকে নির্যাতন করে হত্যার ঘটনার প্রধান হোতা আকবর পলাতক ছিলেন। আমাদের একটিই দাবি ছিল, আকবরকে গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করা। পালানোর ২৭ দিন পর হলেও আকবর গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাই আমরা এখন প্রতিবাদী কর্মসূচির বদলে ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য আইনি লড়াই চালিয়ে যাব।’

বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনের আগের রাতে নীল শার্ট পরেই বেরিয়েছিলেন রায়হান। কিন্তু রায়হানের মরদেহে ছিল লাল শার্ট। এ ছাড়া মৃতদেহ হস্তান্তরের সময় রায়হানের মুঠোফোনও ফিরিয়ে দেয়নি পুলিশ।
ছালমা বেগম, রায়হানের মা

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে সিলেটের সাবেক সরকারি কৌঁসুলি ও সংগ্রাম পরিষদের উপদেষ্টা মিসবাহউদ্দিন সিরাজ জানান, তাঁরা রায়হান হত্যা মামলার আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে ইতিমধ্যে চারজন আইনজীবীর সমন্বয়ে একটি প্যানেল গঠন করেছেন। এই প্যানেল আদালতে মামলা চলাকালে রাষ্ট্রপক্ষ ও বাদীপক্ষের আইনজীবীদের স্বেচ্ছায় সর্বাত্মক সহায়তা করবে।

সংবাদ সম্মেলনের শেষ দিকে বক্তব্য দেন রায়হানের মা ছালমা বেগম। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, পুলিশি হেফাজতে একটি হত্যা ঘটনার পর সংবাদকর্মীরা যেভাবে ভূমিকা রেখেছেন, তাতে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শেষ করার মতো নয়। ন্যায়বিচার পাওয়া পর্যন্ত সংবাদকর্মীদের সহায়তা করার আহ্বান জানিয়ে ছালমা বেগম বলেন, তিনি চান দ্রুত তদন্ত ও দ্রুত বিচার। আকবরকে পালাতে সহায়তাকারী বক্তিদের চিহ্নিত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার পাশাপাশি রায়হানকে পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে পোশাক বদল করার ঘটনারও তদন্ত চান। রায়হানের ব্যবহৃত মুঠোফোন ও পুরোনো পোশাক উদ্ধার করে মামলার আলামত হিসেবে সংরক্ষণ করার দাবি জানান তিনি।

রায়হানের মা আরও বলেন, বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনের আগের রাতে নীল শার্ট পরেই বেরিয়েছিলেন রায়হান। কিন্তু রায়হানের মরদেহে ছিল লাল শার্ট। এ ছাড়া মৃতদেহ হস্তান্তরের সময় রায়হানের মুঠোফোনও ফিরিয়ে দেয়নি পুলিশ।

আরও পড়ুন