বিদেশে পলাতক আসামি
রেড নোটিশ ৭৩, ফেরত ১৭ জন
বিদেশে পলাতক ৭৩ জনের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি। ১৭ বছরে আনা গেছে কেবল ১৭ জনকে।
বাংলাদেশে বিভিন্ন গুরুতর অপরাধের অভিযোগ মাথায় নিয়ে বিদেশে পলাতক ৭৩ জনের বিরুদ্ধে এখন আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি রয়েছে। তাঁদের মধ্যে ২০০৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত, অর্থাৎ গত ১৭ বছরে কেবল ১৭ জনকে ফেরত আনা গেছে। পুলিশ সদর দপ্তরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এর মধ্যে সর্বশেষ ৯ জুন ঢাকার মতিঝিলের আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম (টিপু) হত্যার অন্যতম প্রধান আসামি সুমন শিকদারকে (মুসা) ওমান থেকে ফিরিয়ে আনা হয়।
এনসিবি সূত্রে জানা গেছে, রেড নোটিশ জারি হওয়া বেশির ভাগ আসামি পালিয়ে আছেন ভারত, নেপাল, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, জাপান, লন্ডন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও দক্ষিণ আফ্রিকাসহ আরও কয়েকটি দেশে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবির দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক মহিউল ইসলাম জানান, রেড নোটিশ জারি হওয়া ৭৩ জনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট দেশের এনসিবির মাধ্যমে ১৭ জনকে ফেরত আনা হয়েছে। বাকি ৫৬ জনকে এখনো আনা যায়নি।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, রেড নোটিশ আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নয়, রেড নোটিশ জারি থাকলে ওই আসামি এক দেশ থেকে অন্য দেশে সহজে যাতায়াত করতে পারেন না। গত ১৭ বছরে যাঁদের ফেরত আনা গেছে, তাঁদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে নাজমুল মাকসুদ ও মো. আবুল কালাম, কাতার থেকে মোহাম্মদ হৃদয় ও মোসেন মোহাম্মদ, ভারত থেকে নুর হোসেন ও চান্দু মোহাম্মদ সদরুদ্দিন, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আরিফুল ইসলাম (শিমুল), ইরান থেকে নান্নু মিয়া, মালয়েশিয়া থেকে আবদুর রহমান ও পেয়ার আহমেদ, সিঙ্গাপুর থেকে মোহাম্মদ ফারুক হোসেন, সৌদি আরব থেকে আবু তাহের আল নূর ও কামরুল ইসলাম, নিউজিল্যান্ড থেকে আবদুর রহিম মিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে সাঈদ ও তারেক মোহাম্মদ। সর্বশেষ ৯ জুন ওমান থেকে আনা হয় মুসাকে।
পালিয়ে যাওয়ার তিন মাসের মধ্যে মুসাকে দেশে আনা গেলেও বহুল আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের পরিচালনায় যুক্ত শেখ সোহেল রানাকে ৯ মাসেও ফিরিয়ে আনা যায়নি।
গ্রাহকের প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ মাথায় নিয়ে ঢাকার বনানী থানার তৎকালীন পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল রানা গত বছরের সেপ্টেম্বরে দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে গ্রেপ্তার হন। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচার ও সম্পদ গড়ারও অভিযোগ আছে। তাঁকে দেশে আনতে না পারায় ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে হওয়া ৯ মামলার তদন্ত এগোচ্ছে না বলে জানান তদন্ত–সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, সোহেল রানাকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। ৯ মাসেও কেন আনা যায়নি? জানতে চাইলে এনসিবির কর্মকর্তা মহিউল ইসলাম গত শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, ভারতের কারাগারে থাকা একটি মামলায় সোহেল রানার বিচার চলছে। বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত হয়তো তাঁকে বাংলাদেশে হস্তান্তর করবে না।
তবুও তাঁকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে বাংলাদেশের এনসিবি ভারতের এনসিবিকে আট দফা চিঠি দিয়েছে। চিঠির উত্তরে তারা সোহেল রানাকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে কিছু বলেনি। প্রতিবারই সোহেল রানার বিরুদ্ধে সেখানে মামলা থাকার কথা জানিয়েছে তারা। সোহেল রানার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি করা আছে।
এ ছাড়া ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি হরকাতুল জিহাদের দুই সদস্য মহিবুল মুত্তাকিন ও তাঁর সহোদর আনিসুল মুরসালিনও ভারতে গ্রেপ্তার হয়ে ১৭ বছর ধরে সে দেশের কারাগারে আছেন। তাঁদেরও এখন পর্যন্ত ফেরত আনা যায়নি। সর্বশেষ হাজার কোটির বেশি টাকা আত্মসাৎ করে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার গত ১৩ মে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গ্রেপ্তার হন।
সোহেল রানা, পি কে হালদার বা মুরসালিন ও মুত্তাকিনের মতো আসামিদের ভারত থেকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে কোনো বাধা আছে বলে মনে করেন না পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) মোখলেসুর রহমান।
তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দি বিনিময় চুক্তির আওতায় ইন্টারপোলের মাধ্যমে এসব আসামিকে দেশে ফেরত আনার জন্য যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে।