লৌহজংয়ে মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকে ভিটা থেকে উচ্ছেদ

মুন্সিগঞ্জ জেলার ম্যাপ

মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার হাটভোগদিয়া গ্রামে স্বামীর কবর ও মাথা গোঁজার ঠাঁই ভিটাবাড়ি হারিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মালেক মোড়লের বৃদ্ধা মা কমলা বেগম (৮৫)। গত শনিবার স্থানীয় একটি চক্র সম্পত্তি দখলের উদ্দেশে৵ বাড়িঘর ভেঙে পরিবারটিকে উচ্ছেদ করে দেয়।
এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা সূত্রে জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধা মালেক স্বাধীনতার চার বছর পরই মারা যান। কয়েক মাস পরেই মালেকের বাবা তাইজদ্দিন মোড়লও মারা যান। ছেলে ও স্বামীকে হারিয়ে বেঁচে থাকার জীবনযুদ্ধ শুরু হয় কমলা বেগমের। পরে ছোট দুই সন্তানকে নিয়ে কমলা স্বামীর ভিটামাটিতে অর্ধাহারে-অনাহারে বাস করতে থাকেন। এটাই ছিল তাঁদের শেষ সম্বল। পাশের কুড়িগাঁও গ্রামের প্রভাবশালী জয়নাল আকন কমলাকে ভিটাবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে তা দখল করে নেন।

কমলা অভিযোগ করে জানান, তিন দিন ধরে তাঁর বাড়ির আশপাশে লাগানো ১০-১১টি কড়ইগাছ (যার মূল্য প্রায় তিন লাখ টাকা) কেটে নিয়ে যান জয়নাল ও তাঁর লোকজন। পরে গত শনিবার রাতে জয়নাল কিছু সন্ত্রাসী নিয়ে তাঁর (কমলা) বসতবাড়িতে হামলা চালিয়ে ঘর ভেঙে তাঁকে উচ্ছেদ করে দেন। লুট করে নেওয়া হয় আসবাবপত্রসহ সব মালামাল। তাঁর স্বামী ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তানের স্মৃতিবিজড়িত কবরও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা আবদুর রাজ্জাক বলেন, গত শনিবার জয়নাল তাঁর সন্ত্রাসী লোকজন নিয়ে কমলার বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় তারা দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে কমলার ভোগদখলে থাকা বাড়ি থেকে তাঁকে উচ্ছেদ করে দেয়।

লৌহজং মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার মো. মহিউদ্দিন বাবুল মুন্সি জানান, মালেক মোড়ল একজন সরকারি তালিকাভুক্ত (গেজেট) মুক্তিযোদ্ধা। মালেক ১৯৭৫ সালে অসুস্থ হয়ে মারা যান। কমলা তাঁর ছেলের মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাচ্ছেন। এই পরিবারকে উচ্ছেদের খবর পেয়ে তাঁরা স্থানীয় প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে কথা বলতে জয়নালের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। তাই এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। লৌহজং থানার ওসি রিয়াজুল হক জানান, এ ঘটনায় কমলার ছোট ছেলে কুদ্দুস মোড়ল বাদী হয়ে জয়নালকে প্রধান আসামি করে থানায় গত শনিবার রাতে একটি মামলা করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।