লোভ ও সহজলভ্যতার কারণে মাদকের বিস্তার

এম ইমদাদুল হক
এম ইমদাদুল হক

দেশে মাদকের অব্যাহত বিস্তারের পেছনে লোভ ও সহজলভ্যতা —এই দুই কারণই প্রধান। অবৈধ মাদক কারবার মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সক্ষমতারও অভাব রয়েছে। অনেক আসামিই তাঁদের ছয় মাসের বেশি আটকে রাখা যাবে না বলে দম্ভোক্তি করেন। এ ক্ষেত্রে বিচার বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সক্ষমতা আরও বাড়াতে হবে।

বাংলাদেশ তিন দিক থেকে মাদক উৎপাদনকারী দেশ দ্বারা বেষ্টিত। এখানে প্রায় ৭০ লাখ মাদকসেবী রয়েছে। এটি মাদক উৎপাদনকারী দেশগুলোর জন্য একটি বিশাল বাজার। তাই তারা প্রতিনিয়ত নানা উপায়ে এখানে মাদক সরবরাহ করে যাচ্ছে। করোনাভাইরাসের এই সময়টা তাদের আরও সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আগের মতো তৎপর থাকতে পারছে না, যার কারণে মাদক ব্যবসায়ীদের কার্যক্রম বেড়েছে।

রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও ন্যায়নিষ্ঠতা নির্ধারণ করতে হবে। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বারবার ‘জিরো টলারেন্সে’র ঘোষণা আসছে। এই ঘোষণাকে কার্যকর করতে হবে। বহুবার শুদ্ধি অভিযানের কথা আলোচনায় এসেছে। একসঙ্গে দায়িত্ব নিয়ে আন্তরিকভাবে শুদ্ধি অভিযান চালালে সুফল পাওয়া যাবে। সমস্যা কী এবং ধাপে ধাপে করণীয় কী, সেটা আগে নির্ধারণ করা উচিত।

টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাদক ব্যবসায়ীদের বাড়িতে গায়েবি হামলা এবং অগ্নিসংযোগের যে ঘোষণা দিয়েছেন, তা নিতান্তই আবেগতাড়িত। মাদক নিয়ন্ত্রণে যে আইন রয়েছে, তার যথাযথ বাস্তবায়নই মাদক নির্মূলে কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম। এই আইনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে পরোয়ানা ছাড়াই তল্লাশির ক্ষমতা, অপরাধীদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এমনকি একই ব্যক্তি দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করলে তাকে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার বিধানও রয়েছে। আইনে এত ক্ষমতা থাকার পরও ওসি যে বক্তব্য দিয়েছেন, মাদক নিয়ন্ত্রণে তার কোনো প্রয়োজনই পড়ে না।

বাংলাদেশে মাদকবিরোধী অভিযানকে সফল করতে হলে আরও কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। দেশে মাদকের চাহিদা যেমন ব্যাপক, জোগানেরও কমতি নেই। চাহিদা ও জোগান কোনোটাই কমানো যাচ্ছে না বলে একদিকে এর প্রবেশ ঠেকালে অন্যদিক থেকে ঢুকছে। ইয়াবা কারবারিরা এখন ভারত সীমান্ত কিংবা সাগরপথে এসে শুধু জলপথ ধরে মূল ভূখণ্ডে ঢুকছে। অনেক সময় আসছে প্রচলিত পথ এড়িয়ে।

যে জিনিসটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তা হলো, টেকনাফ এলাকায় সর্বাত্মক অভিযান। এর মূলমন্ত্র হতে হবে অপরাধীদের স্থান নেই। এই অভিযানে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির স্থানীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতাদের যুক্ত করতে হবে। এমন অভিযান হলেই সর্বত্র সঠিক বার্তা চলে যাবে।

লেখক: অধ্যাপক ও মাদকবিষয়ক গবেষক