শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রগুলোর অচল দশা

  • গাজীপুর, টঙ্গী ও যশোরে ৩টি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র আছে।

  • কেন্দ্র তিনটিতে মোট আসনের বিপরীতে দেড় গুণ বেশি, ৯০২ জন নিবাসী আছে।

  • কেন্দ্রের শিশুদের জন্য মাথাপিছু মাসিক বরাদ্দ ৩,৫০০ টাকা।

পুলেরহাটে অবস্থিত যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র (বালক)
ছবি: প্রথম আলো

২০১৪ সালের কথা। নিজেদের শরীরের রক্ত ঝরিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিল কিশোরেরা। যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের ১৫ কিশোর কাচ দিয়ে শরীর চিরে সেদিন প্রতিবাদ করেছিল। বলেছিল, ওরা ভালো নেই। ছয় বছর পর একই কেন্দ্রে ঘটে গেল আরেকটি নির্মম ঘটনা। কেন্দ্রের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের পিটুনিতে মারা গেল তিন কিশোর। সঙ্গে আহত আরও কয়েকজন।

গাজীপুর, টঙ্গী ও যশোরে তিনটি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র আছে। এগুলোতে মোট আসনের বিপরীতে দেড় গুণ বেশি, ৯০২ জন নিবাসী আছে। তাদের জীবনমান, খাবারদাবার অত্যন্ত নিম্নমানের বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। নামে উন্নয়ন কেন্দ্র, আদতে জেলখানার চেয়ে বাজে অবস্থা এসব কেন্দ্রের—এমনটাই অভিযোগ সেখানে বসবাসকারী কিশোর ও তাদের অভিভাবকদের। আছে ‘বড় ভাই’ কালচার। যার জাঁতাকলে পরে কিশোরদের জীবন ওষ্ঠাগতপ্রায়। সম্প্রতি একটি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে জামিনে বের হওয়া এক কিশোর জানাল কেন্দ্রের ভেতরকার দুর্বিষহ জীবনের কথা।

ট্রাকচালক রোকা মিয়ার ছেলে পারভেজ হাসান ওরফে রাব্বি এক অপরাধে অভিযুক্ত হয়ে খুলনা কারাগারে ছিল তিন মাস। এরপর গত আট মাসের বেশি সময় ধরে ছিল যশোরের পুলেরহাটের শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে। অনেক দিন ধরেই ছেলে বলছিল, কেন্দ্রে সে থাকতে চায় না। ১৩ আগস্ট ফোন করে বলেছিল, ‘আব্বু, তুমি আমারে এইখান থেকে বাইর করলা না? জন্মনিবন্ধনের বয়স বাড়াইয়া আমারে এইখান থাইকা নিয়া যাও। দরকার হইলে সারা জীবন অন্য জেলখানায় থাকমু।’ সেটাই ছিল ছেলের সঙ্গে রোকা মিয়ার শেষ কথা। রাতেই খবর পেলেন নির্যাতনে কেন্দ্রের ভেতরেই তাঁর ছেলেসহ তিন কিশোর মারা গেছে।

রোকা মিয়ার দুই মেয়ে, আর ছেলে ছিল একটাই। মুঠোফোনে তিনি বলেন, ‘ছেলে তো সরকারের হেফাজতে ছিল, ওরে ভালো বানানোর কথা ছিল। কিন্তু ভালো হইবে কেমনে? ওইটা তো জেলখানাই ছিল। হেফাজতে নিয়া ছেলেরে তো মাইরাই ফালাইল।’

এই বাবার বর্ণনার সঙ্গে মিল পাওয়া গেল যশোরের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেনের বক্তব্যের। ১৫ আগস্ট যশোরে প্রেস ব্রিফিংয়ে এই কর্মকর্তা জানান, কেন্দ্রের ১৯ কর্মকর্তা-কর্মচারী এক বৈঠকে অচেতন না হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্রের প্রধান প্রহরীকে আঘাত করা কিশোরদের পেটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১৮ কিশোরকে আবাসিক ভবন থেকে ধরে এনে তাদের দুই হাত জানালার গ্রিলের সঙ্গে আটকে, পা বেঁধে ও মুখে গামছা গুঁজে দিয়ে রড ও ক্রিকেটের স্টাম্প দিয়ে পেটানো হয়। এতে মারা যায় তিন কিশোর। গুরুতর আহত হয় ১৫ জন।

যশোরের এ শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রসহ মোট তিনটি (একটি মেয়েদের জন্য) কেন্দ্র সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সমাজসেবা অধিদপ্তর পরিচালনা করছে। ঘটনার পর সমাজসেবা অধিদপ্তর, যশোর জেলা প্রশাসন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন তথ্যানুসন্ধানে কমিটি গঠন করে তদন্ত করছে।

সমাজসেবা অধিদপ্তরে ২৯ বছর ধরে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালনকারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রগুলোতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দুর্ঘটনা আগেও ঘটেছে। তবে কেন্দ্রের ভেতরে তিন শিশুর নিহত হওয়ার মতো ঘটনা এবারই প্রথম ঘটেছে, যা খুবই দুঃখজনক ও অনভিপ্রেত।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম এর আগে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে সচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। নাছিমা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক ও মর্মান্তিক। সেখানে দায়িত্বরত ব্যক্তিরা এই ঘটনার দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারবেন না। কেন্দ্রের ভেতরে তিন কিশোর নিহত হওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। আর তাঁরা কিছু জানেন না, তা গ্রহণযোগ্য নয়। এই ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা হওয়া উচিত।

নিবাসীরা কেমন আছে

যশোর কেন্দ্রে তিন কিশোরের নিহত হওয়ায় আবার আলোচনায় এসেছে সরকারের পরিচালিত তিনটি কেন্দ্র কেমন চলছে বা নিবাসীরা কেমন আছে।

১৯৭৪ সালের শিশু আইন বাস্তবায়নে (বর্তমানের শিশু আইন ২০১৩) ১৯৭৮ সালে গাজীপুরের টঙ্গীতে এবং ১৯৯৫ সালে (কার্যক্রম শুরু) যশোরের পুলেরহাটে ছেলেশিশুদের জন্য এবং ২০০৩ সালে গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে (মেয়েদের জন্য) উন্নয়ন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে পরিচালিত তিনটি কেন্দ্রের মোট আসনসংখ্যা ৬০০। সমাজসেবা অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী যশোরে আসনসংখ্যা ১৫০, তবে বর্তমানে সেখানে আছে ২৮৩ জন। টঙ্গীতে আসনসংখ্যা ৩০০, সেখানে নিবাসীর সংখ্যা ৫৩৩। আর মেয়েদের জন্য উন্নয়ন কেন্দ্রের আসনসংখ্যা ১৫০, সেখানে আছে ৮৩ জন। সব মিলিয়ে ৬০০ আসনের বিপরীতে নিবাসী আছে ৯০২ জন। অর্থাৎ আসনের চেয়ে দেড় গুণের বেশি নিবাসী নিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো চলছে। কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সীমিত বাজেট, প্রশাসনিক দুর্বলতা, অপর্যাপ্ত জনবল, অনুন্নত সংশোধন প্রক্রিয়া, পুনর্বাসন কার্যক্রমসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ নিয়ে কেন্দ্রগুলো পরিচালিত হচ্ছে।

এবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আছে যশোরের উন্নয়ন কেন্দ্র। ১৯৯৫ সালে যশোরের কেন্দ্রটির নাম ছিল ‘কিশোর অপরাধী সংশোধন প্রতিষ্ঠান’। ২০০২ সালে কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র এবং ২০১৭ সালে তার নামকরণ করা হয় শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র। ৫ দশমিক ২২ একর জায়গার প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে অবস্থান করা নিবাসীদের মধ্যে ৬৭ জন হত্যা মামলা, ৭০ জন নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা, ৬৫ জন মাদক মামলা, ৪ জন অস্ত্র মামলাসহ বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্তরা আছে। নিবাসীদের মধ্যে বিভিন্ন মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ১০ জন। ১৩ থেকে ১৬ বছর বয়সী নিবাসীর সংখ্যা ১২৭। ৯৮ জনের বয়স ১৭ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বিভিন্ন শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে ৭৫ জন, আর ১৬০ জন অটোমোবাইল, ইলেকট্রিক্যাল, ওয়েল্ডিং ও সেলাই প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। কেন্দ্রটিতে অনুমোদিত পদ ৪৯, এর মধ্যে বর্তমানে বিভিন্ন পদে কর্মরত ২৬ জন। সহকারী তত্ত্বাবধায়ক, প্রসিকিউশন অফিসার, সোশ্যাল কেস ওয়ার্কার, হাউস প্যারেন্টসহ ২৩টি পদই শূন্য।

কেন্দ্রের শিশুদের জন্য মাথাপিছু মাসিক বরাদ্দ ৩ হাজার ৫০০ টাকা। এর মধ্যে খাদ্য ও জ্বালানি বাবদ ২ হাজার ৫০০ টাকা বরাদ্দ। শিক্ষা খাতে বরাদ্দ ২০০ টাকা। চিকিৎসায় বরাদ্দ ১০০ টাকা। প্রশিক্ষণে ১৫০ টাকা, পোশাক ৩০০ টাকা, তেল, সাবানসহ অন্যান্য খাতে বরাদ্দ ২৫০ টাকা।

এক কিশোরের অভিজ্ঞতা

প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে কলেজপড়ুয়া এক ছেলে প্রায় তিন মাসের বেশি সময় টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে ছিল। করোনাভাইরাসের বিস্তারের পর ভার্চ্যুয়াল আদালতের মাধ্যমে বর্তমানে সে জামিনে আছে।

মুঠোফোনে কথা হলো তার সঙ্গে। তার ভাষায়, কেন্দ্রে থাকা একটু বেশি বয়সীদের মধ্য থেকে হাউস ক্যাপ্টেন ঠিক করে দেন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক। ক্যাপ্টেন বা কেন্দ্রের ভাষায় এই ‘বড় ভাই’ আবার তার পছন্দের নিবাসীদের নিয়ে দল গঠন করে। জুনিয়র ব্যাচ, সিনিয়র ব্যাচ, রিমোট পাস, বাকেট পাস (পানির ড্রামে বসার যোগ্যতা অর্জনকারী), চৌকি পাস (কয়েকটি তোশক দিয়ে বানানো) বিভিন্ন নামের দলগুলো বিভিন্ন ফ্লোরে ও রুমে রাজত্ব করে।

কিশোর জানায়, কেন্দ্রে নতুন সদস্য গেলে তাকে ‘পাবলিক’ বলে ডাকা হয়। বড় ভাইয়ের নির্ধারণ করে দেওয়া ৩৬৫টি নিয়ম মানতে হয় পাবলিককে। বড় ভাইয়ের চোখের দিকে তাকানো যাবে না, বড় ভাই বারান্দায় হাঁটলে সবাইকে ঘরের মধ্যে ঢুকে যেতে হবে। এ ধরনের নিয়ম পালনে একটু ব্যত্যয় ঘটলেই কিডনি লক, গামছা ভিজিয়ে গুটলি পাকিয়ে তা দিয়ে মারাসহ ১৪৪টি নির্ধারিত মার খেতে হয়। অপরাধ অনুযায়ী এ মারগুলো দেওয়া হয়।

এই কিশোর মার খেয়েছে কি না, জানতে চাইলে বলে, ‘৩৬৫টা নিয়ম তো আর মানা যায় না, তাই পাবলিককে মাইর খাইতেই হয়।’

এই কিশোরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ১০ বছরের কম বয়সীদের একসঙ্গে রাখা হয়। আর ১০ বছরের বেশি বয়সীদের আলাদা ফ্লোরে রাখা হয়। বড় ভাই ও ভাইয়ের অনুগত সদস্যদের থাকার জায়গা ‘হাইফাই’ থাকে। অনেকে নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে টাকা দিয়ে বড় ভাইয়ের বডিগার্ড হিসেবেও নিয়োগ পায়। বড় ভাই চাইলেই কেন্দ্রের গার্ড ও কর্মচারীদের দিয়ে বাইরে থেকে যেকোনো জিনিস ঘরে আনাতে পারে। বড় ভাইয়ের ‘বডিগার্ড’ হিসেবে দায়িত্ব পালনকারীরাও ক্ষমতাশালী। খাবারের প্লেটে ভাত নির্দিষ্ট পরিমাণে দেওয়া থাকে (পেট ভরে না ওই ভাতে)। মেনু অনুযায়ী মুরগি, ডিমসহ অন্যান্য তরকারি দেওয়া হয়। তবে হাউস ক্যাপ্টেন সবার প্লেট থেকে মুরগির রান, মাছের বড় পিস তুলে নিয়ে যায়। ফলে মুরগির রান বা ভালো টুকরা খাওয়ার সুযোগ কম পাওয়া যায়। সাবানসহ অন্যান্য বরাদ্দ করা জিনিসের বেলায়ও একই নিয়ম।

এই কিশোর জানায়, কেন্দ্রের পানি খুব খারাপ, তাই প্রায় সবার শরীরে খোসপাঁচড়া হয়েছে। তবে গুরুতর আহত বা সমস্যা না হলে চিকিৎসকের দেখা মেলে না। এই কিশোরও শুনেছে কেন্দ্রের ভেতরে বিভিন্ন সময়ই অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে।

কেন্দ্রগুলোতে বিভিন্ন ঘটনা ঘটছেই

কেন্দ্রের ভেতরে তিন শিশুর একসঙ্গে নিহত হওয়ার ঘটনা এবার প্রথম ঘটেছে। তবে কেন্দ্রগুলোতে বিভিন্ন ঘটনা এর আগেও ঘটেছে। ঘটনা ঘটার পর হাইকোর্টের নির্দেশনা, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত কমিটি গঠনসহ বিভিন্ন তৎপরতা এর আগেও নেওয়া হয়েছে।

২০১৪ সালের মে মাসের প্রথম সপ্তাহে যশোরের শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের ১৫ কিশোর কাচ দিয়ে শরীর চিরে প্রতিবাদ জানিয়েছিল। তারা কেন্দ্রের কয়েকটি ভবনের জানালার কাচ ভাঙচুর করে। পরে সীমানাপ্রাচীরের গায়ে থাকা পানির পুরোনো পাইপ বেয়ে পালিয়ে গিয়েছিল ছয় কিশোর। তারা সবাই খুনের মামলায় আদালতের মাধ্যমে এই কেন্দ্রে এসেছিল। ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে টঙ্গীর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের ২০ কিশোর আত্মঘাতী প্রতিবাদ করেছিল।

টঙ্গী কেন্দ্রের শিশুরা আবার সংবাদের শিরোনাম হয় ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। খাবার না দেওয়া ও নির্যাতনের প্রতিবাদে কেন্দ্রের পাঁচ কিশোর নিজেদের শরীর কেটে ক্ষতবিক্ষত করে। ক্ষতস্থানে সেলাই দিতে হয়েছিল।

২০১৫ সালের জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে, পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে যশোরের কেন্দ্র থেকে শিপন (১৫) নামের এক কিশোর পালিয়ে গেছে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিটি ঘটনায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কমিটি গঠন, দায়ী ব্যক্তিদের সাময়িক বরখাস্তসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছিল। তবে ঘটনা থামেনি।

শিশুদের সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্তদের আচরণ

গত বছরের জুনের শেষ সপ্তাহে পুলিশি হেফাজতে থাকা অবস্থায় কিশোরী ধর্ষণের ঘটনায় দুই পুলিশসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। এক কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ঘটনায় পুলিশের দুই সদস্যসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা হয়। গাজীপুরের শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের (বালিকা) তত্ত্বাবধায়ক তাসনিম ফেরদৌসী বাদী হয়ে রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় মামলাটি করেছিলেন।

চলতি বছরের মার্চে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের সামনে পুলিশই সিগারেট এনে ধরিয়ে দিয়েছিল টঙ্গী উন্নয়ন কেন্দ্রের দুই কিশোরকে। এই দুই কিশোর হাজিরা দিতে এসেছিল সেদিন।

২০১৭ সালে আকস্মিকভাবে পরিদর্শনে গেলে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে কাছে পেয়ে টঙ্গী ও কোনাবাড়ী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের শিশুরা খাবারের মান ভালো না-সহ বিভিন্ন সমস্যার কথা জানিয়েছিল।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রতিষ্ঠান) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সৈয়দ মো. নুরুল বাসির। তিনি মার্চে এ দায়িত্বে এসেছেন। যশোরে তদন্তে থাকা এই কর্মকর্তা মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা ঘটার পেছনে কোনো না কোনো কারণ তো আছেই। আমরা এখানে দায়িত্বপ্রাপ্তদের কোনো গাফিলতি ছিল কি না, পেছনের কারণ, ভবিষ্যতে যাতে আর এ ধরনের ঘটনা না ঘটে তার জন্য করণীয় চিহ্নিত করাসহ সব দিক খতিয়ে দেখার চেষ্টা করছি। তিনটি উন্নয়ন কেন্দ্রসহ অধিদপ্তরের শূন্য পদ পূরণে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রের ভেতরের “বড় ভাই” নামে যে কালচার গড়ে উঠেছে, সে বিষয়টিও আমরা দেখছি।’