শিশু হত্যা, লাশ নিয়ে বিক্ষোভ

সাগর শহরের হারুয়া সওদাগর পাড়ার মো. বকুল মিয়ার ছেলে। সে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।

কিশোরগঞ্জে চুলের কাটিং মিলে যাওয়ায় গত মঙ্গলবার রাতে মো. সাগর মিয়া (১২) নামের এক শিশুকে ছুরিকাঘাতে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে গতকাল বুধবার দুপুরে লাশ নিয়ে নিহতের স্বজনসহ শতাধিক নারী-পুরুষ শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেন।

সাগর শহরের হারুয়া সওদাগর পাড়ার মো. বকুল মিয়ার ছেলে। সে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।

সাগরের পরিবার, পুলিশ ও এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত সোমবার শহরতলির কাতিয়ারচর এলাকায় বৈশাখী মেলায় মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা নিয়ে হারুয়া বউ বাজার গলির আবু হানিফ ওরফে হাছুর সঙ্গে হারুয়া সওদাগর পাড়ার লাদেন মিয়ার ঝগড়া হয়। এ সময় লাদেনকে হাছুর লোকজন মারধর করেন। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এ নিয়ে লাদেনের লোকজন হাছুর লোকজনকে ধাওয়া করেন। পরে রাত সাড়ে আটটার দিকে শহরের পুরোনো স্টেডিয়ামের বৈশাখী মেলা থেকে লাদেনের প্রতিবেশী সাগর তার দুই বন্ধুকে নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের ফটকের সামনে পাঁচ–ছয়জন মুখোশধারী তাঁদের আটকায়। এ সময় অন্য দুজন দৌড়ে পালিয়ে গেলেও লাদেনের সঙ্গে সাগরের চুলের কাটিংয়ে মিল থাকায় দুর্বৃত্তরা তাকে লাদেন মনে করে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে ফেলে যায়। স্থানীয় লোকজন রক্তাক্ত অবস্থায় সাগরকে পাশের সদর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে জখম গুরুতর হওয়ায় তাঁকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে রাত সাড়ে ১১টার দিকে মারা যায়।

এদিকে গতকাল দুপুরে স্বজন ও শতাধিক এলাকাবাসী নিহত সাগরের লাশ নিয়ে শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও হারুয়া এলাকায় মানববন্ধন করেন। বিক্ষোভকারীরা আবু হানিফ ওরফে হাছু, তাঁর ছেলে সাফি, হাছুর ভাতিজা দুদুল, বাবু, শহীদ ও জিমেলের ছবি হত্যাকারী হিসেবে মানববন্ধনের ব্যানারে দিয়ে তাঁদের ফাঁসির দাবি করেন।

সাগরের প্রতিবেশী হান্নান মিয়া বলেন, সাগর ছেলেটি খুব নম্র–ভদ্র ছিল। কোনো সময় তাকে কোনো ঝামেলায় জড়াতে দেখা যায়নি। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সে সবার ছোট ছিল। এমনকি সে তাঁর পরিবারকে সহায়তা করার জন্য অবসর সময়ে পাগলা মসজিদের সামনে বসে কুরআন শরীফ ও কিতাব বিক্রি করত। অথচ এই শিশুকেই অকালে প্রাণ দিতে হলো।

নিহত সাগরের বাবা বকুল মিয়া বলেন, এলাকার অন্য আরেকটি ঝগড়াকে কেন্দ্র করে হাছু, হাছুর ছেলে ও ভাতিজারা মিলে তাঁর সন্তানকে নির্মমভাবে হত্যা করেন। তাঁর ছেলে মারা যাওয়ার আগে সরাসরি হাছুর নির্দেশে এ ঘটনা ঘটেছে বলে তাঁকে জানিয়ে গেছে। এ বিষয়ে তিনি হত্যা মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

এ বিষয়ে কথা বলতে আবু হানিফা ওরফে হাছুর মুঠোফোনে বারবার ফোন দিলেও সেটা বন্ধ পাওয়া যায়।

কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আববুকর সিদ্দিক জানান, লাশের ময়নাতদন্ত হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এ পর্যন্ত চারজনকে আটক করা হয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে তিনি আটক ব্যক্তিদের নাম বলতে চাননি।