সকালে বাবা-মাকে ফোন করে কান্নাকাটি করেছেন আয়শা

রিফাত শরীফ হত্যা মামলার রায় ঘোষণার পর আয়শা সিদ্দিকাকে বরগুনা কারাগারে নেওয়া হয়
প্রথম আলো ফাইল ছবি

বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ও নিহতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা বৃহস্পতিবার সকালে বাবা-মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময় কান্নাকাটি করেছেন। আয়শার বাবা মোজাম্মেল হোসেন প্রথম আলোকে দুপুরে এ কথা বলেন। বুধবার আয়শাসহ ছয়জনের মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পর তাদের বরগুনা কারাগারে নেওয়া হয়। সেখানে তাদের কনডেম সেলে রাখা হয়েছে।
আয়শার বাবা মোজাম্মেল হোসেন দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সকাল ১০টার দিকে মিন্নি (আয়শা সিদ্দিকা) আমার ও আমার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছে। সে খুব কান্নাকাটি করেছে। কারাগারে সে ভালো নেই। তাঁকে একা একটি নির্জনকক্ষে রাখা হয়েছে।’ তিনি দাবি করেন, ‘আমার মেয়ে নির্দোষ। একটি কুচক্রী মহল ষড়যন্ত্র করে আমার মেয়েকে এই মামলায় ফাঁসিয়েছে। একটি প্রভাবশালী মহলকে আড়াল করার জন্যই এটা করা হয়েছে। আমি রায়ের কপি পাওয়া আবেদন করেছি। এটি হাতে পেলে দ্রুত উচ্চ আদালতে এই  রায়ের বিরুদ্ধে  আপিল করবে। আমি আশাবাদী আমার মেয়ে উচ্চ আদালতে নির্দোষ প্রমাণিত হবে।’
মোজাম্মেল হোসেন আরও বলেন, ‘সারা দেশের মানুষ ভিডিওতে দেখেছে আমার মেয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাঁর স্বামী রিফাত শরীফকে সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রক্ষার আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। আহত রিফাতকে একাই হাসপাতালে নিয়ে গেছে। অথচ এই মামলায় আমার মেয়েকে ফাঁসানো হলো।’

বরগুনা জেলা কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক (জেল সুপার) মো. আনোয়ার হোসেন বৃহস্পতিবার দুপুরে বলেন, এই কারাগারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্য কোনো নারী আসামি নেই। ফলে আয়শা একাই কনডেম সেলে আছেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর পাঁচ আসামিকেও কনডেম সেলে রাখা হয়েছে। রিফাত হত্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ছয় আসামি ছাড়া কনডেম সেলে আপাতত অন্য কোনো বন্দী নেই।
কারা সূত্র জানায়, বুধবার রায় ঘোষণার পর ছয় আসামিকে বিকেল তিনটার দিকে কারাগারে নেওয়া হয়। এরপর তাদের কারাগারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের জন্য নির্ধারিত কনডেম সেলে রাখা হয়। রায় শোনার পর থেকে আয়শা বিষণ্ন হয়ে পড়েন। কারাগারে নেওয়ার পর আয়শা চুপচাপ ছিলেন। কারাগারের নেওয়ার পর স্বজনদের দেখা পাননি। কারও সঙ্গে তেমন কথাও বলেননি। রাতে খাবার-দাবার দেওয়া হলে সামান্য খেয়েছেন। বাকি পাঁচ আসামি স্বাভাবিক অবস্থায় আছেন।
জেল সুপার মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, কারাবিধি অনুযায়ী ছয় বন্দীকেই কনডেম সেলে থালা, বাটি ও কম্বল দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রতি আসামিকে কারাগারের পক্ষ থেকে দুই সেট পোশাক দেওয়া হয়েছে। এখানে তাঁরা কারা বিধি অনুযায়ী এই পোশাক পরবেন।

কারা সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন কারাগারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৪৯ জন নারী আসামি কনডেম সেলে আছেন।
বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামান বুধবার এই মামলার রায়ে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির মধ্যে ছয়জনকে মৃত্যুদণ্ড ও চারজনকে খালাস দেন। বাকি অপ্রাপ্ত বয়স্ক ১৪ আসামির বিচার কার্যক্রম চলছে শিশু আদালতে।


২০১৯ সালের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে রিফাত শরীফকে স্ত্রী আয়শার সামনে কুপিয়ে জখম করেন সন্ত্রাসীরা। পরে ওই দিন বিকেলে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। তাঁকে কোপানোর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে এটি আলোচিত হয়।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ছয় আসামি হলেন রাকিবুল হাসান ওরফে রিফাত ফরাজী (২৩), আল কাইয়ুম ওরফে রাব্বি আকন (২১), মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত (১৯), রেজোয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয় (২২), মো. হাসান (১৯) ও রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা ওরফে মিন্নি (১৯)। খালাস পাওয়া চার আসামি হলেন মুসা (২২), রাফিউল ইসলাম রাব্বি (২০), সাগর (১৯) ও কামরুল হাসান সায়মুন (২১)। মুসা এখনো পলাতক। রায়ে খালাস পাওয়া বাকি তিনজনকে বুধবার রাতেই মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
রায়ে আদালত বলেছেন, আয়শা তাঁর স্বামীকে হত্যার ষড়যন্ত্রে যুক্ত ছিলেন, প্রসিকিউশন তা প্রমাণ করতে পেরেছে। রায়ের পর্যবেক্ষণ আদালত বলেছেন, ‘রিফাত হত্যা মামলার আসামিদের নির্মমতা, বর্বরতা মধ্যযুগীয় কায়দাকেও হার মানিয়েছে। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দিলে তাদের অনুসরণ করে অন্য যুবকেরাও ধ্বংসের পথে যাবে। এ জন্য এসব আসামি সর্বোচ্চ শাস্তি পাওয়ার যোগ্য।’

আরও পড়ুন