সরকারি চাল নিয়ে অনিয়ম করা আ.লীগ নেতা পেলেন সমাজসেবা সম্মাননা

অপরাধ
প্রতীকী ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় করোনাকালে সরকারি চাল নিয়ে অনিয়ম করা আওয়ামী লীগ নেতা শাহ আলমকে সমাজসেবা সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বেশ সমালোচনা হয়। কোন প্রক্রিয়ায় ও কীভাবে তাঁকে এই সম্মাননা দেওয়া হলো, গতকাল রোববার সমাজসেবা কার্যালয়ের কাছে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে লিখিত ব্যাখ্যা চেয়েছেন জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান।

গত শনিবার দুপুরে জাতীয় সমাজসেবা দিবস উপলক্ষে জেলা সার্কিট হাউসে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে জেলা সমাজসেবা কার্যালয় এই সম্মাননা দেয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মাহমুদুল হাসানকে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলেছেন জেলা প্রশাসক।

শাহ আলম পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউতলী এলাকার বাসিন্দা। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক। তিনি একই সঙ্গে এফবিসিসিআইয়ের সদস্য, ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কর্মহীন দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষে মধ্যে বিশেষ ওএমএস কার্যক্রম চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এর আওতায় প্রতি মাসে ১০ টাকা কেজি দরে ২০ কেজি করে চাল বিতরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ওয়ার্ড কাউন্সিলরের মাধ্যমে ১২টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে ৫০০ জনকে ওএমএস চাল দিতে ৬ হাজার দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের তালিকা প্রস্তুত করে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অধিদপ্তরে জমা দেয়।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রথম দফায় জমা দেওয়া ৬ হাজার দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের তালিকা যাচাই-বাছাই করে আওয়ামী লীগ নেতাসহ সামর্থ্য ও বিত্তবান ৯১ জনের নাম পায় জেলা প্রশাসন ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অধিদপ্তর। তালিকায় শাহ আলম হতদরিদ্র হিসেবে নিজের স্ত্রী মমতাজ আলম, মেয়ে আফরোজা, কাতারপ্রবাসী শ্যালকের স্ত্রী জান্নাতুল ইসলাম, আরেক শ্যালকের স্ত্রী আছমা ইসলাম, বোন শামসুন্নাহার, মালয়েশিয়াপ্রবাসী ভাতিজা মো. নাছির, ভাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া পরিবহন শ্রমিক সমিতির সভাপতি মো. সেলিম, মো. আলমগীর, শ্যালক তাজুল ইসলাম ও শফিকুল ইসলাম, বোনের দেবর আতাউর মিয়া, লুৎফুর মিয়া, মাহবুব মিয়াসহ ২২ জন স্বজনের নাম দেন। পরে তালিকা থেকে তাঁদেরসহ ৯১ জনের নাম বাতিল করতে পৌরসভাকে নির্দেশ দেয় জেলা প্রশাসন।

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শাহ আলম ওএমএসের ডিলার ছিলেন। অনিয়মে জড়িত থাকার অভিযোগে গত বছরের ১৪ মে তাঁর ডিলারশিপ বাতিল করে জেলা ওএমএস কমিটি। এ ছাড়া গত বছরের ৯ জুন কাউতলী এলাকার একটি মুদিদোকান থেকে টিসিবির ৩১ বস্তা পণ্য জব্দ করেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সন্দ্বীপ তালুকদার। সে সময় আটক হওয়া মুদি ব্যবসায়ী লোকমান হোসেন গণমাধ্যমের কাছে স্বীকার করেন, তিনি এসব পণ্য টিসিবির তৎকালীন ডিলার শাহ আলমের কাছ থেকে কিনেছেন।

শাহ আলম সাংবাদিকদের বলেছেন, সম্মাননা পেতে তিনি সমাজসেবা কার্যালয়ে যাননি। সমাজসেবা অধিদপ্তরই তাঁকে এই সম্মাননা দিয়েছে। ১৯৯৬ সাল থেকে তিনি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একজন সমাজকর্মী। তাই সমাজসেবা অধিদপ্তর তাঁকে এই সম্মাননার জন্য বাছাই করে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মাহমুদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, শাহ আলম জাতীয় অন্ধকল্যাণ সমিতি, সরকারি শিশু পরিবারের ব্যবস্থাপনা কমিটির সঙ্গে যুক্ত। এ ছাড়া কিছুদিন আগে তিনি শীতবস্ত্র বিতরণ করেছেন। হিজড়া সম্প্রদায়ের পুনর্বাসনের জন্য কাজ করেন। এ জন্য তাঁকে সম্মাননা দেওয়া হয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিনয়ের সঙ্গে বলছি, কোভিডের সময়ের ওএমএস চাল নিয়ে অনিয়মের বিষয়টি আমার জানা ছিল না।’