সরকারি পুকুরে ‘মামার’ পরিচয়ে চলছে মাছ চাষ

৩০ লাখ টাকার একটি প্রকল্পের আওতায় পুকুরে পানি শোধনাগার হওয়ার কথা। সে প্রকল্প চলমান অবস্থাতেই দখল করে মাছ চাষ হচ্ছে।

ছাত্রলীগ নেতাদের দখল করা সরকারি পুকুর। মাছ চাষের পাশাপাশি পুকুরের পাড়ে লাগানো হয়েছে বিভিন্ন সবজির গাছ। সম্প্রতি যশোর সদরের বসুন্দিয়া গ্রামে
প্রথম আলো

পানি সংরক্ষণ ও নিরাপদ পানি সরবরাহের জন্য যশোর সদর উপজেলার বসুন্দিয়া গ্রামের সরকারি সদুল্যাপুর পুকুরে নেওয়া হয়েছে ৩০ লাখ টাকার প্রকল্প। প্রকল্পে পুকুর খনন, বাঁধ নির্মাণ, ইটের তৈরি হাঁটার পথ, সংযোগ সড়ক ও বনায়ন রয়েছে। ইতিমধ্যে পুকুরটি খননের কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের কাজও চলমান। এ অবস্থায় পুকুরটিতে মাছ চাষ করছেন দুই ছাত্রলীগ নেতা। পুকুরপাড়ে করছেন কলা ও সবজি চাষ।

ওই দুই ছাত্রলীগ নেতা হলেন যশোর সদর উপজেলার বসুন্দিয়া ইউনিয়ন কমিটির আহ্বায়ক সজিব হোসেন ও সদস্যসচিব মুন্না বিশ্বাস। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সজিব হোসেন বলেন, পুকুরটি জেলা পরিষদের। জেলা পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ইকবাল হোসেন এবং জেলা পরিষদের সার্ভেয়ার এম এ মঞ্জুরের কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে তিন বছর ধরে মাছ চাষ হচ্ছে। আর জেলা পরিষদের সদস্য ইকবাল হোসেনকে মামা পরিচয় দিয়ে মুন্না বিশ্বাস বলেন, ‘পুকুরগুলো ইকবাল মামার অধীন। পুকুরটিতে পানি শোধনাগার হবে। যখন কাজ শুরু হবে, তখন পুকুরটি ছেড়ে দেব।’

এ প্রসঙ্গে ইকবাল হোসেন বলেন, ‘আমার নাম ভাঙিয়ে কেউ সেখানে মাছ চাষ করছে। মাছ চাষের জন্য একজন মৌখিকভাবে বলেছিল। কিন্তু কাউকে অনুমতি দেওয়া হয়নি।’ আর জেলা পরিষদের সার্ভেয়ার এম এ মঞ্জু বলেন, সরকারি পুকুরে মাছ চাষের অনুমতি দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।

জেলা পরিষদ সূত্র জানায়, সদর উপজেলার বসুন্দিয়া মৌজায় সদুল্যাপুর পুকুরটি অবস্থিত। পুকুরটিতে পানি সংরক্ষণ এবং এলাকায় নিরাপদ পানি সরবরাহের জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এ জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সঙ্গে একটি চুক্তি হয়েছে। সে অনুযায়ী ২০১৮ সালে পুকুরটি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের যশোর কার্যালয় সূত্র জানায়, ৩০ লাখ ১২ হাজার ৩২৪ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের কাজ করছে যশোরের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ কার্যাদেশ দেওয়া হয়। চলতি বছরের ২৭ মার্চ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে ঠিকাদার কাজ শেষ করতে পারেননি। ঠিকাদারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পুকুরের চারপাশের সীমানা ঘেঁষে সিমেন্ট, বালু ও লোহার রড দিয়ে তৈরি কংক্রিটের অনেকগুলো পিলার। এর সঙ্গে তার টানিয়ে সীমানাপ্রাচীর তৈরি করা হয়েছে। পুকুর ও রাস্তার মাঝের জায়গায় কলা, মানকচু, বেগুন চাষ করা হচ্ছে। সম্প্রতি লাগানো বেশ কয়েকটি নারকেল ও নিমের চারা চোখে পড়ল। পুকুরটি খনন করা হয়েছে। তবে কাজের কোনো সাইনবোর্ড চোখে পড়েনি।

পুকুরের পানিতে বড় পলিথিন ভিজিয়ে পরিষ্কার করছিলেন বসুন্দিয়া গ্রামের ইলিয়াস হোসেন। তিনি বলেন, পুকুরটি সাত-আট মাস আগে খনন করা হয়েছে। আর সীমানা দেওয়া হয়েছে দুই মাস আগে। খননের আগ থেকেই সজিব ও মুন্না মাছ চাষ করতেন। খননের পর পুকুরটি শুকনা ছিল। শ্যালো মেশিন দিয়ে পুকুরে পানি ভরে সেখানে পুনরায় সজিব ও মুন্না মাছ চাষ করছেন। তাঁরা পুকুরের চারপাশে কলাগাছ ও বিভিন্ন রকমের সবজি লাগিয়েছেন। এলাকাবাসীও এই পুকুরের পানি ব্যবহার করেন।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের যশোর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদ পারভেজ বলেন, ‘পুকুরটিতে মাছ চাষের ব্যাপারে জেনেছি। মাছ থাকায় পুকুরে পানি শোধনাগারের কাজ শুরু করতে সমস্যা হচ্ছে। পুকুর থেকে মাছ তুলে নেওয়ার জন্য ব্যবস্থা নিতে জেলা পরিষদে চিঠি দেওয়া হয়েছে। জেলা পরিষদ এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেবে।’