সাক্ষ্য দিলেন সুরতহালের সাক্ষী, পরবর্তী সাক্ষ্য ৩ জানুয়ারি

ব্লগার অনন্ত বিজয়
সংগৃহীত

সিলেটে বিজ্ঞান লেখক ও ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ (৩২) হত্যা মামলার সুরতহাল প্রতিবেদনের সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সিলেটের সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য নির্ধারিত তারিখে সাক্ষ্য গ্রহণ হয়। সিলেটের মদনমোহন কলেজের সহকারী অধ্যাপক আবুল কাশেম ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন।

আদালত সূত্র জানায়, শিক্ষক আবুল কাশেম মামলার সুরতহাল প্রতিবেদনের সাক্ষী ছিলেন। অনন্ত বিজয় দাশের লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে পুলিশ। আবুল কাশেম পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির সময় সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন। পুলিশ সুরতহাল তৈরি করে তাঁকে সাক্ষী হিসেবে রাখে। ট্রাইব্যুনালে শিক্ষক আবুল কাশেম হাজির হয়ে পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির একজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন। সাক্ষ্য গ্রহণকালে কারাগারে আটক আসামি আবুল খায়ের রশিদ আহমদকে সিলেট কারাগার থেকে এবং শফিউর রহমান ফারাবীকে ঢাকা কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মামলায় মোট ২৯ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল আমিন বিপ্লব আগামী ৩ জানুয়ারি সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন।

২০১৫ সালের ১২ মে সিলেট নগরের সুবিদবাজারে নূরানি আবাসিক এলাকার নিজ বাসার সামনে খুন হন অনন্ত। বিজ্ঞান নিয়ে লেখালেখির পাশাপাশি তিনি ‘যুক্তি’ নামে বিজ্ঞানবিষয়ক একটি পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। এ ছাড়া বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন অনন্ত। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজকর্ম বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে অনন্ত সুনামগঞ্জের জাউয়াবাজারে পূবালী ব্যাংকের ডেভেলপমেন্ট অফিসার পদে কর্মরত ছিলেন।

হত্যাকাণ্ডের এক দিন পর অনন্তের বড় ভাই রত্নেশ্বর দাশ বাদী হয়ে সিলেট বিমানবন্দর থানায় অজ্ঞাত চারজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। এতে বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখির কারণে অনন্তকে ‘উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠী’ পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে বলে অভিযোগ করা হয়।

মামলাটি পুলিশ থেকে অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) স্থানান্তর হয়। সিআইডির পরিদর্শক আরমান আলী তদন্ত করে ২০১৭ সালের ৯ মে সম্পূরক অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেন। এতে সন্দেহভাজন আটক ১০ জনকে অব্যাহতির সুপারিশ করে ৬ জনকে অভিযুক্ত করা হয়।

অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হচ্ছেন সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার আবুল হোসেন (২৫), খালপাড় তালবাড়ির ফয়সাল আহমদ (২৭), সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বিরেন্দ্রনগরের (বাগলী) মামুনুর রশীদ (২৫), কানাইঘাটের পূর্ব ফালজুর গ্রামের মান্নান ইয়াইয়া ওরফে মান্নান রাহী ওরফে এবি মান্নান ইয়াইয়া ওরফে ইবনে মঈন (২৪), কানাইঘাটের ফালজুর গ্রামের আবুল খায়ের রশীদ আহমদ (২৫) ও সিলেট নগরের রিকাবীবাজার এলাকার সাফিউর রহমান ফারাবী ওরফে ফারাবী সাফিউর রহমান (৩০)।

আসামিদের মধ্যে আবুল হোসেন, ফয়সাল আহমদ ও মামুনুর রশীদ পলাতক। ফারাবী বিজ্ঞান লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলারও আসামি। অভিযুক্ত আসামিদের মধ্যে মান্নান রাহী আদালতে অনন্ত হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছিলেন। ২০১৭ সালের ২ নভেম্বর মান্নান হঠাৎ অসুস্থ হয়ে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে কারা হেফাজতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, গত বছরের ৭ মে সিলেটের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে এই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। কিন্তু সাক্ষীদের অনুপস্থিতির কারণে বারবার পেছানো হয় সাক্ষ্যগ্রহণ। দীর্ঘদিন সিলেটের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ চলার পর সম্প্রতি মামলাটি সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর হয়।