সাদা পাজেরোতে ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ড লাগিয়ে ইয়াবা পরিবহন

সাদা রঙের মিতসুবিশি পাজেরো। সামনে একটি পতাকা লাগানোর দণ্ড (ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ড); যেমনটি উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের গাড়িতে লাগানো থাকে। এ রকম একটি গাড়ি থেকে গতকাল রোববার সন্ধ্যায় ৫০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একটি দল। গ্রেপ্তার করা হয়েছে মো. ইউসুফ নামের একজনকে। রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকা থেকে গাড়িটি আটক করা হয়।
পুলিশ বলছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে ইয়াবা পাচারের জন্য সরকারি গাড়ির মতো করে গাড়িটি সাজানো হয়েছিল। সাধারণত ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ডসহ গাড়ি দেখলে সরকারি কর্মকর্তাদের গাড়ি ভেবে পুলিশ থামায় না বা তল্লাশি করে না।
ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, গতকাল রাত আটটার দিকে সেগুনবাগিচার শিল্পকলা একাডেমির পাশ থেকে গাড়িটি আটক করা হয়। গ্রেপ্তার ইউসুফের বিরুদ্ধে রমনা থানায় মামলা করা হয়েছে। ইউসুফের বাড়ি কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থানার ঢেকিলার বিল গ্রামে। তিনি চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ইয়াবা এনে ঢাকায় সরবরাহ করেন।
কর্মকর্তারা বলছেন, ইয়াবা বিক্রিতে বেশি লাভ দেখে এখানে বিনিয়োগও বেশি। বিশেষ করে সরবরাহ বাধামুক্ত রাখতে তারা নানা কৌশল গ্রহণ করছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো বিলাসবহুল বা সরকারি গাড়ির মতো দেখতে গাড়ির ব্যবহার। অনেক সময় তথ্য থাকলেও সরকারি কর্মকর্তা বা প্রভাবশালী কারও হতে পারে ভেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এসব গাড়ি তল্লাশির জন্য থামায় না। এরা তারই সুযোগ নিচ্ছে। এ ছাড়া গাড়ির সামনে সাংসদ, পুলিশ, সাংবাদিক ইত্যাদি স্টিকার মেরেও মাদক পাচার চলে। মাঝেমধ্যে এরা ব্যবহার করে অ্যাম্বুলেন্সও।
২০১৪ সালের ২৪ আগস্ট রাজধানীর গুলশান থেকে সংসদ সদস্যের স্টিকার মারা বিলাসবহুল একটি পাজেরোসহ মো. জুবায়ের নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। ওই গাড়িতে ইয়াবা তৈরির কাঁচামাল ও মেশিন পাওয়া গিয়েছিল। এক সাংসদের ছেলের কাছ থেকে গাড়িটি কিনে ইয়াবা বহনের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছিল। পরে মো. জুবায়ের জামিনে বেরিয়ে যান বলে আজ জানিয়েছেন ডিবির একজন কর্মকর্তা।
এরপর গত বছরের ২০ ডিসেম্বর রাতে চট্টগ্রাম নগরের অনন্যা আবাসিক এলাকা থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার ইয়াবা বড়িসহ একটি টয়োটা র্যাভ ফোর গাড়ি আটক করে পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয় মোহাম্মদ সিরাজউদ্দিন ও আরাফাত নামের দুজনকে।
গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম কক্সবাজার সড়কে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের স্টিকার মারা গাড়ি থেকে ৪০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। গাড়িটিতে ওই চ্যানেলটির জেলা প্রতিনিধি মো. সেলিম ও তাঁর স্ত্রীও ছিলেন। কর্মকর্তারা জানান, গ্রেপ্তারের পরে সেলিম স্বীকার করেন, তিনি প্রায়ই নিজের পরিচিতিকে কাজে লাগিয়ে ওই মাইক্রোবাসে ইয়াবা বহন করতেন।