সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তাকে অপহরণ-মুক্তিপণে কিশোর গ্যাং, গ্রেপ্তার ১০: পুলিশ

প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রামে সাবেক এক ব্যাংক কর্মকর্তাকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনায় কিশোর গ্যাংয়ের একটি দল জড়িত বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৬ কিশোরসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গতকাল রোববার রাতে নগরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে এই ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার প্রাপ্তবয়স্ক চার ব্যক্তি হলেন আহসান আহম্মেদ, মো. পারভেজ, জাহেদ উল্লাহ ও মো. আরমান। গ্রেপ্তার বাকি ছয়জন কিশোর।

পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তার ১০ জনই বখাটে। তারা কেউ স্কুলের গণ্ডি পার হয়নি। গ্রেপ্তার প্রাপ্তবয়স্ক চারজন কিশোরদের ‘বড় ভাই’।

ঘটনার শুরু ১১ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে আটটায়। নগরের বাকলিয়া ডিসি রোডের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা কফিল উদ্দিন পাঁচলাইশ ২ নম্বর গেট থেকে সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশায় ওঠেন। তাঁর গন্তব্য ছিল চান্দগাঁও বহদ্দারহাটের বহদ্দারপুকুর পাড় এলাকা।

কফিলের ভাষ্যমতে, অটোরিকশায় আগে থেকে চালকসহ তিনজন ছিল। নগরের শুলকবহরে পৌঁছালে চালক অটোরিকশাটি উড়ালসড়কে তোলার চেষ্টা করে। এ সময় কফিল বাধা দেন। তখন তাঁর পাশে বসে থাকা দুই যুবক ছুরির ভয় দেখিয়ে তাঁকে চুপচাপ বসে থাকতে বলেন। নইলে মেরে ফেলার হুমকি দেন। পরে অটোরিকশাটি চান্দগাঁও সিঅ্যান্ডবি বিসিক শিল্প এলাকার একটি পরিত্যক্ত ভবনের সামনে যায়।

অটোরিকশা থেকে কফিলকে নামিয়ে তাঁকে ভবনটির পঞ্চম তলায় নেওয়া হয়।
কফিলের ভাষ্য, অটোরিকশায় ৩ জন থাকলেও ভবনটিতে ১০ থেকে ১৫ জন ছিলেন।

তাঁদের মধ্যে বয়সে কিশোর থেকে শুরু করে যুবকেরাও ছিলেন। অপহরণকারীরা তাঁর কাছে ৩০ লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে পারবে না বললে তাঁকে মারধর করা হয়।

তাঁর কাছে থাকা ৭ হাজার ৮৫০ টাকা ও মুঠোফোন ছিনিয়ে নেন অপহরণকারীরা। তাঁর মুঠোফোন থেকে ছেলে মঈন উদ্দিনকে কল করে মুক্তিপণ হিসেবে ৩০ লাখ টাকা চাওয়া হয়। তা না দিলে বিভিন্ন নারীর সঙ্গে ছবি তুলে তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। একপর্যায়ে অপহরণকারীরা ৩০ হাজার টাকা মুক্তিপণে রাজি হন।

পরে বিকাশের মাধ্যমে অপহরণকারীদের পাঁচ হাজার টাকা দেওয়া হয়। এই টাকা পাওয়ার পর অপহরণের রাতেই কফিলকে একটি অটোরিকশায় তুলে দেয় অপহরণকারীরা।

ঘটনার তিন দিন পর গত রোববার রাতে চান্দগাঁও থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন কফিল।

চান্দগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাজেস বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, মামলার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে। তাঁদের কাছ থেকে দুটি ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার ১০ জন এলাকায় বখাটে হিসেবে পরিচিত। ঘটনায় জড়িত অটোরিকশাচালক ও সেলিম নামের এক ‘বড় ভাইকে’ গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, গ্রেপ্তার ১০ জন এলাকায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মিছিল-মিটিংয়ে অংশ নিতেন। তাঁরা একত্রিত হয়ে এলাকায় চাঁদা আদায়সহ মুক্তিপণ আদায় করতেন। তবে ভুক্তভোগীরা মামলা না করায় তাঁরা এত দিন ধরা পড়েননি।