সিঙ্গাপুরে জঙ্গিবাদে জড়িত সন্দেহে বাংলাদেশি গ্রেপ্তার

আহমেদ ফয়সল

জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে সিঙ্গাপুরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ মাসের শুরুতে আহমেদ ফয়সল নামের এক বাংলাদেশি নির্মাণশ্রমিককে গ্রেপ্তার করেছে। ২৬ বছর বয়সের বাংলাদেশি ওই যুবক ২০১৭ সাল থেকে দেশটিতে থাকছেন।

আজ মঙ্গলবার সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। সিঙ্গাপুরের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা আইনের আওতায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশটিতে সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কায় এ বছরের সেপ্টেম্বর থেকে নিরাপত্তা অভিযান জোরদার করা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিভাগ এ পর্যন্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ৩৭ জনের সন্দেহভাজন কর্মকাণ্ড নিয়ে তদন্ত চালায়।

সন্দেহভাজন এসব ব্যক্তির মধ্যে বিদেশি ২৩ জন এবং স্থানীয় ১৪ জন। তদন্ত শেষে বাংলাদেশের ১৫ জন এবং মালয়েশিয়ার ১ জনকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

তাঁদের অধিকাংশই নির্মাণশ্রমিক। সিঙ্গাপুরের গোয়েন্দাদের ভাষ্য, সন্দেহভাজন এসব লোকজন ফ্রান্সে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সহিংসতা কিংবা ধর্মীয় অস্থিতিশীলতা উসকে দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন।

সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, এই মুহূর্তে সিঙ্গাপুরে জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার সাতজন বিদেশির মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশের আহমেদ ফয়সল। তাঁকে ২ নভেম্বর গ্রেপ্তার করা হয়। সিঙ্গাপুরের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিভাগের কর্মকর্তারা প্রাথমিক তদন্তে জেনেছেন, আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএসের অনলাইন কর্মকাণ্ডে আকৃষ্ট হয়ে জঙ্গিবাদে জড়িয়েছেন।

সিরিয়ায় খেলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াইয়ে শামিল হতে সেখানে যাওয়ার ইচ্ছা তাঁর। তাঁর বিশ্বাস, সিরিয়ায় যুদ্ধের ময়দানে প্রাণ দিলে শহীদের মর্যাদা পাবেন।

গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, আহমেদ ফয়সল নজরদারি এড়াতে ছদ্মনামে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। এসব অ্যাকাউন্ট থেকে তিনি সশস্ত্র লড়াই আর সংঘাতের বিভিন্ন রকম পোস্ট দিয়েছেন। ২০১৯ সালের মাঝামাঝি থেকে সিরিয়ায় খেলাফত প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে শামিল জঙ্গি সংগঠন হায়াত তাহরির আল শামের (এইচটিএস) প্রতি ঝুঁকে পড়েন। এইচটিএসের তহবিলে চাঁদাও দিয়েছেন ফয়সল। এ ছাড়া তিনি আল–কায়েদা ও সোমালিয়ার আল–শাবাবের মতো জঙ্গিগোষ্ঠীর সমর্থনে বিভিন্ন সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়েছেন।

আহমেদ ফয়সল সিঙ্গাপুরের গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, তিনি দেশে ফিরে জঙ্গি হামলা চালানোর উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ধরনের ছুরি কিনেছেন। তবে তিনি যে সিঙ্গাপুরে কোনো ধরনের সহিংস হামলার পরিকল্পনা করেননি, সে ব্যাপারে নিশ্চিত সেখানকার গোয়েন্দারা।

ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের উপকমিশনার সাইফুল ইসলাম আজ সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, সিঙ্গাপুর থেকে ১৫ বাংলাদেশি নাগরিক ফেরত পাঠানোর বিষয়টি সম্পর্কে তাঁরা জানেন না। তবে গ্রেপ্তার ফয়সাল সম্পর্কে তাঁরা খোঁজখবর নেবেন। এই নামে একজন জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন, সে সম্পর্কে তাঁরা জানতে পেরেছিলেন আগেই। তখন থেকেই খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছিল।

এদিকে সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র ও আইনমন্ত্রী কে শানমুগাম দেশটিতে এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন, আহমেদ ফয়সলের বিরুদ্ধে জঙ্গি অর্থায়নের তদন্ত চলছে। সিঙ্গাপুরের স্ট্রেইট টাইমস পত্রিকা জানিয়েছে, ধর্মীয় পুনর্বাসন গোষ্ঠীর (আরআরজি) ষোড়শ বার্ষিক সেমিনারে কে শানমুগাম এ তথ্য জানান।