সিনহার পিস্তল, ফোন পরীক্ষা করাতে চান না তদন্তকারী

সিনহা মো. রাশেদ খান
ছবি: সংগৃহীত

সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানের গুলিভর্তি পিস্তল, দুটি মুঠোফোন ও একটি ডিএসএলআর ক্যামেরার ফরেনসিক ও ব্যালিস্টিক পরীক্ষা করাতে চান না মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। এ ব্যাপারে আদালতে তিনি আবেদনও দিয়েছেন।

এত গুরুত্বপূর্ণ আলামতের পরীক্ষা করা কেন হবে না, জানতে চাইলে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মনে করেন, এর কোনো প্রয়োজন নেই। সে কারণে তিনি এর কোনো পরীক্ষা করাতে চান না।

আদালত সূত্র জানায়, ৫ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা, র‍্যাবের সহকারী পুলিশ সুপার খাইরুল ইসলাম একটি আবেদন করেন। সেই আবেদনে তিনি বলেন, মামলাটি তদন্তকালে মামলার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীদের জবানবন্দি, মামলায় এজাহারভুক্ত আসামিসহ তদন্তে প্রাপ্ত আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে নিহত সেনা কর্মকর্তা সিনহা মো. রাশেদ খানের ব্যবহৃত পিস্তল থেকে গুলি হয়েছে বলে কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। আবার তাঁর গাড়ি থেকে জব্দ করা দুটি মুঠোফোন ও একটি ডিএসএলআর ক্যামেরার বিষয়েও সাক্ষ্যপ্রমাণে রাষ্ট্রের জন্য হুমকি হতে পারে, এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। সে কারণে এসব আলামত ফরেনসিক ও ব্যালিস্টিক পরীক্ষার জন্য পাঠানোর প্রয়োজন আছে বলে তিনি মনে করেন না।

এর আগে তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এসব আলামত ফরেনসিক ও ব্যালিস্টিক পরীক্ষার জন্য অনুমতি দিয়েছিলেন। ঘটনার রাতে পুলিশ এসব আলামত জব্দ করে।

আদালতে দেওয়া এই বক্তব্যের ব্যাপারে জানতে চেয়ে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা খাইরুল ইসলাম ফোন ধরেননি।

জানতে চাইলে কক্সবাজার আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি ফরিদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, আদালতের সিদ্ধান্তে মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খানের বিদেশি পিস্তল, দুটি আইফোন ও একটি ক্যামেরা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার হেফাজতে আছে। এগুলোর ব্যালিস্টিক ও ফরেনসিক পরীক্ষা হবে কি হবে না, তা তদন্তকারীর সিদ্ধান্ত। তিনি না চাইলে পরীক্ষা করা হবে না। তবে জব্দ তালিকার অন্যান্য মালামাল (ব্যক্তিগত মালামাল) শিপ্রা দেবনাথ নিয়ে গেছেন।

গত ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রের বরখাস্ত হওয়া পরিদর্শক লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান। তাঁর সঙ্গে থাকা সাহেদুল ইসলামকে (সিফাত) পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এরপর সিনহা যেখানে ছিলেন, সেই নীলিমা রিসোর্টে ঢুকে তাঁর ভিডিও দলের দুই সদস্য শিপ্রা দেবনাথ ও তাহসিন রিফাত নুরকে আটক করে। পরে নুরকে ছেড়ে দিলেও শিপ্রা ও সিফাতকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। পরে তাঁরা জামিনে মুক্তি পান।

সিনহা হত্যার ঘটনায় মোট চারটি মামলা হয়। ঘটনার পরপরই পুলিশ বাদী হয়ে বাকি তিনটি মামলা করে। পুলিশের মামলায় নিহত সিনহাকেও আসামি করা হয়। এর কয়েক দিন পর হত্যা মামলা করেন নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। চারটি মামলারই তদন্তের দায়িত্ব পায় র‍্যাব। পরে র‍্যাব এ ঘটনায় টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ১০ পুলিশ সদস্য এবং নিহত হওয়ার আগে সিনহা যে পাহাড়ে গিয়েছিলেন, সেই গ্রামের তিন বাসিন্দাকে গ্রেপ্তার করে। তাঁদের মধ্যে প্রদীপ ছাড়া পাঁচ পুলিশ সদস্য ও স্থানীয় তিন ব্যক্তি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। চার আসামি এখনো রিমান্ডে। ওসি প্রদীপসহ ৯ আসামি কারাগারে।