সৌদিপ্রবাসী স্ত্রীর বিয়ের গুজবে স্বামীর আত্মহত্যা

সৌদি আরবপ্রবাসী স্ত্রী সেখানে এক ব্যক্তিকে বিয়ে করেছেন—এমন গুজবে নওগাঁর রানীনগর উপজেলায় মানিক শেখ নামের এক ব্যক্তি আত্মহত্যা করেছেন। গত রোববার রাতে উপজেলার চকাদিন গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। গতকাল সোমবার সকালে পুলিশ তাঁর লাশ উদ্ধার করে। পরে ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি নওগাঁ সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

গ্রামবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছ, মানিক শেখের (৩৬) পৈতৃক বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমনুরা পাওয়েল এলাকায়। তিনি প্রায় ১৭ বছর আগে রানীনগর উপজেলার চকাদিন গ্রামে আসেন। তিনি লেপ, তোশক ও বালিশ তৈরির কাজ করতেন। একপর্যায়ে একই গ্রামের বাছেদ আলীর মেয়ে দিলরুবা আক্তারকে বিয়ে করেন। তাঁদের অভাবের সংসার। সচ্ছলতা আনতে দুই বছর আগে মানিক শেখ তাঁর স্ত্রী দিলরুবাকে সৌদি আরবে পাঠান। স্ত্রী মাসে মাসে টাকা পাঠাতেন। এই টাকায় তিনি জায়গা কেনেন। বাড়ি নির্মাণ করেন। তিন-চার মাস ধরে মানিক তাঁর স্ত্রী দিলরুবাকে বিদেশ থেকে বাড়ি ফিরে আসার জন্য চাপ দিতে থাকেন। তখন দিলরুবা তাঁকে জানিয়ে আসছিলেন, কাগজপত্রের জটিলতা আছে। এ কারণে চাইলেই তিনি হুট করে দেশে ফিরে আসতে পারবেন না। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মানিককে নানা লোকে নানা কথা বলেন। দিলরুবা সৌদি আরবে কাউকে বিয়ে করেছেন—এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এতে মানিক স্ত্রীর প্রতি সন্দেহ করতে থাকেন। তিনি স্ত্রীকে দেশে ফিরে আসার জন্য প্রচণ্ড চাপ দিতে থাকেন। এতে ব্যর্থ হয়ে মানিক নিজেই বলতে শুরু করেন, তাঁর স্ত্রী সৌদি আরবে বিয়ে করেছেন। এ জন্য দেশে ফিরে আসছেন না। রোববার রাতে তিনি সর্বশেষ তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেন। তখনো তাঁকে দেশে ফিরে আসতে বলেন। একপর্যায়ে তিনি গলায় দড়ি দিয়ে রাতেই আত্মহত্যা করবেন বলে হুমকি দেন।

গতকাল সোমবার জানতে চাইলে দিলরুবার মা নাজিরা বিবি বলেন, রোববার রাতে তাঁর মেয়ে তাঁকে মুঠোফোনে জানান মানিক গলায় দড়ি দেবেন। তাঁকে বাঁচাতে শিগগির তিনি যেন মানিকের বাড়ি যান। এ কথা শোনার পর তিনি (নাজিরা বিবি) দ্রুত জামাতার বাড়িতে যান। গিয়ে দেখেন ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। পরে জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে মানিকের ঝুলন্ত লাশ দেখতে পান।

নাজিরা বিবি বলেন, কয়েক দিন আগে থেকেই তাঁর জামাতা একে-ওকে বলছিলেন যে দিলরুবা নাকি সৌদি আরবে বিয়ে করেছেন। এই নিয়ে জামাতা-শাশুড়ির মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। তিনি এসব গুজবে কান না দিতে মানিককে বহুবার বলেছেন। তাঁর মেয়ে কাউকে বিয়ে করেননি। মানুষের কথায় মানিক যেন কান না দেন। কিন্তু মানিক শোনেননি।

মানিক আত্মহত্যা করবেন—এটি তাঁরা কেউ ভাবতে পারেননি। রোববার রাতে আতঙ্কিত গলায় তাঁর মেয়ে মুঠোফোনে কথা বলেন। মানিক গলায় দড়ি দিচ্ছেন বলে তাঁকে জানান। এ কথা শোনার পর তিনি দৌড়ে সেই বাড়িতে যান। কিন্তু ততক্ষণে মানিক গলায় রশি দেন। এই দৃশ্য দেখার পর তিনি চিৎকার দেন। আশপাশের লোকজন ছুটে এসে ঘরের টিনের চালা কেটে ঘরের ভেতরে নামেন। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। এর আগেই মানিকের মৃত্যু হয়। সকালে থানা-পুলিশ এসে লাশটি উদ্ধার করে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ নওগাঁ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।

এ ব্যাপারে রানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এস এম সিদ্দিকুর রহমান বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, সৌদি আরবপ্রবাসী স্ত্রীর সঙ্গে পারিবারিক কলহের জেরে মানিক গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে। এ ঘটনায় অপমৃত্যুর (ইউডি) মামলা হয়েছে।