স্ত্রী ও বাড়িওয়ালাসহ তিনজনকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা

মামলার আসামি বাদল মিয়া একজন কাঠমিস্ত্রি। রোববার ভোরের দিকে বাদল ও তাঁর স্ত্রী নাজমা বেগমের মধ্যে কথা-কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে ধারালো ছুরি দিয়ে নাজমাকে কুপিয়ে জখম করেন বাদল।

নরসিংদীর শিবপুরে স্ত্রীসহ তিনজনকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় আটক বাদল মিয়া
প্রথম আলো ফাইল ছবি

নরসিংদীর শিবপুরে মো. বাদল মিয়ার (৫০) বিরুদ্ধে তাঁর স্ত্রী ও বাড়িওয়ালাসহ তিনজনকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। সোমবার সকালে শাহীন আলম নামের এক ব্যক্তি বাদী হয়ে শিবপুর থানায় মামলাটি করেন। বাদী বাড়িওয়ালার ছেলে।

রোববার ভোরে উপজেলার পুটিয়া ইউনিয়নের কুমরাদী এলাকার ওই বাড়িটিতে দাম্পত্য কলহের জেরে উত্তেজিত অবস্থায় একাই পাঁচজনকে কোপান বাদল। এতে তিনজন নিহত ও দুজন আহত হন। নিহত তিনজন হলেন বাদলের দ্বিতীয় স্ত্রী নাজমা বেগম (৪০), বাড়িওয়ালা তাইজুল ইসলাম (৭০) ও তাঁর স্ত্রী মনোয়ারা বেগম (৬০)। গুরুতর আহত দুজন হলেন নিহত নাজমা বেগমের ছেলে সোহাগ (১৫) ও বাড়িওয়ালা তাইজুলের মেয়ে কুলসুম (২৬)। আহত দুজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বাদলকে গ্রেপ্তার করে। বর্তমানে তিনি পুলিশ প্রহরায় নরসিংদী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

মামলার আসামি বাদল মিয়া একজন কাঠমিস্ত্রি। তিনি দ্বিতীয় স্ত্রী নাজমা ও তাঁর আগের সংসারের ৩ সন্তানকে নিয়ে ওই এলাকার তাইজুল ইসলামের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। বাদলের বাড়ি কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার জাঙ্গালিয়া এলাকায়।


মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, রোববার ভোরের দিকে বাদল ও তাঁর স্ত্রী নাজমা বেগমের মধ্যে কথা-কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে ধারালো ছুরি দিয়ে নাজমাকে কুপিয়ে জখম করেন বাদল। এ সময় তাঁর ছেলে নাদিম বাড়িওয়ালা তাইজুল ও তাঁর স্ত্রী মনোয়ারা বেগমের সাহায্য চান। বাড়িওয়ালার মেয়ে কুলসুম ও নিহত নাজমার আরেক ছেলে সোহাগ কী হয়েছে জানতে ঘটনাস্থলে যান। কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে সোহাগ, তাইজুল, মনোয়ারা ও কুলসুমকে ওই ছুরি দিয়েই এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন বাদল। সকাল ৭টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বাদলকে আটক করে এবং আহত ৫ জনকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে পাঠায়। নাজমা ও মনোয়ারাকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন। অন্যদিকে তাইজুল, সোহাগ ও কুলসুমকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাইজুলের মৃত্যু হয়। ঘটনার সময় বাদল নিজেও আহত হন।

একমাত্র আসামি বাদল মিয়া পুলিশ প্রহরায় নরসিংদী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর পুরোপুরি সুস্থ হতে আরেকটু সময় লাগবে। সুস্থ হওয়ামাত্রই তাঁকে আদালতে পাঠানো হবে।
মোল্লা আজিজুর রহমান, ওসি, শিবপুর থানা

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নিহত নাজমার ছেলে নাদিম মিয়ার ভাষ্য, ‘রোববার ভোরের দিকে পাশের ঘর থেকে সৎবাবা ও মায়ের মধ্যে কথা-কাটাকাটি ও চিৎকারের শব্দ শুনি আমি আর ছোট ভাই সোহাগ। ঘর থেকে বের হয়ে তাঁদের ঘরের দরজা বন্ধ দেখতে পাই। আমি হাতের সামনে পাওয়া একটি বাঁশ দিয়ে দরজা ভেঙে ওই ঘরে ঢুকি। এ সময় দেখি সৎবাবার হাতে ছুরি আর আমার মা অচেতন অবস্থায় মেঝেতে পড়ে আছেন। ওই সময় একটি ইটের টুকরা দিয়ে ঢিল মেরে তাঁর হাতের ছুরি ফেলে দিই। পরে ওই ছুরি আবার হাতে নিয়ে আমাকে আঘাত করতে এগিয়ে এলে আমি দৌড়ে গিয়ে বাড়িওয়ালাসহ তিনজনকে ডেকে আনি। উত্তেজিত হয়ে ওই ছুরি দিয়েই চারজনকে কুপিয়ে জখম করেন তিনি। আমি বাঁশ দিয়ে তাঁর মাথায় আঘাত করলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।’ তিনি বলেন, ‘আমি স্থানীয় বাজারে কসাইয়ের কাজ করি। দীর্ঘদিন ধরে গরু জবাইয়ের একটি ছুরি ঘরের ভেতরে রেখেছিলাম। আমার রেখে দেওয়া ওই ছুরিতে আমার মা খুন হলেন। এখন কষ্ট হচ্ছে, কেন ছুরিটা ঘরে রেখে দিয়েছিলাম?’

মামলার বাদী শাহীন আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘রোববার ভোরে আমার স্ত্রীর ডাকাডাকিতে ঘুম থেকে উঠে বাদল মিয়ার ঘরের সামনে যাই। দেখি এরই মধ্যে পাঁচজনকে কুপিয়ে আহত করে ফেলেছেন তিনি। স্ত্রীর সঙ্গে কথা-কাটাকাটি থেকেই বাদল পাঁচজনকে কুপিয়েছেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ আসে। তাদের সহযোগিতায় আমি আহতদের নিয়ে হাসপাতালে যাই। এ ঘটনায় আমার মা নরসিংদী সদর হাসপাতালে এবং বাবাকে ঢাকায় নেওয়ার পরে মারা যান। আর আমার বোন কুলসুম এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। সে হাত নাড়াতে পারলেও কথা বলতে পারছে না।’


শিবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোল্লা আজিজুর রহমান বলেন, নিহত বাড়িওয়ালা তাইজুল ইসলাম ও মনোয়ারা বেগমের ছেলে শাহীন আলম বাদী হয়ে বাদল মিয়াকে আসামি করে মামলা করেছেন। একমাত্র আসামি পুলিশ প্রহরায় নরসিংদী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর পুরোপুরি সুস্থ হতে আরেকটু সময় লাগবে। সুস্থ হওয়ামাত্রই তাঁকে আদালতে পাঠানো হবে।