হাজি সেলিমের আরও দখল

দখল হয়ে যাওয়া পাঁচ কোটি টাকার কৃষি জমি উদ্ধারে নেমেছেন কৃষকেরা। দখলের অভিযোগ মদিনা গ্রুপের অস্বীকার।

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের পায়রা বন্দরমুখী চার লেন সড়ক এলাকায় ঢাকার সাংসদ হাজি সেলিমের নিয়ন্ত্রণে থাকা পৌনে পাঁচ একর কৃষিজমি প্রকৃত মালিকেরা পুনরুদ্ধার করতে তৎপরতা শুরু করেছেন। গতকাল শনিবার ১৩ কৃষক পরিবার তাদের বেহাত হওয়া জমি উদ্ধার করার কাজে হাত দেয়। হাজি সেলিমের মালিকানাধীন মদিনা গ্রুপের লোকজন ২০১৬ সালের মে মাসে অন্তত পাঁচ কোটি টাকা মূল্যের এ পরিমাণ কৃষিজমি দখল করে নেন বলে অভিযোগ।

এই নিয়ে সরকারি দলের এই সাংসদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি ১১টি জমি দখলের অভিযোগ পাওয়া গেল।

হাজি সেলিমের দখল করা জমির মধ্যে আছে পুরান ঢাকার ছোট কাটারায় ৮ কাঠা জমি, চকবাজারে ঐতিহ্যবাহী ‘জাহাজবাড়ি’, কামরাঙ্গীরচরের ঝাউচরে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) এক একর জমি, সবুজবাগে একটি বাড়ি, গ্রিন রোডে সরকারি ওয়াপদা বাংলোর ৮ কাঠা জমি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তিব্বত হল, বধির স্কুলের জমি, মৌলভিবাজারে অগ্রণী ব্যাংকের জমি এবং নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে ১৫ বিঘা সরকারি জমি দখল ও পার্শ্ববর্তী গ্রামবাসীর ৮ বিঘা জমি।

সম্প্রতি নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনায় হাজি সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিম গ্রেপ্তার ও তাঁর বাড়িতে র‌্যাবের অভিযানের পর পুরান ঢাকার দাপুটে এই সাংসদের একের পর এক দখলকাহিনি নতুন করে বেরিয়ে আসে।

কলাপাড়ার ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের ভাষ্য, রজপাড়া গ্রামের কৃষক আনোয়ার মিনা, শহিদুল মিনা, দেলোয়ার মিনা, আবুল কালাম, ফুলবানু, আবদুল মান্নান, সৈয়দ আহসান উদ্দিন, ইসমাইল গাজী, ফিরোজা বেগম, মোজাম্মেল হাওলাদার, কামরুল ইসলাম ও ইউসুফ মিনা গং পৌনে পাঁচ একর কৃষিজমির প্রকৃত মালিক। টিয়াখালী ইউনিয়নের রজপাড়া মৌজার এসএ ৯০, ১১২, ১১৩, ১১৫, ১২২ খতিয়ানের এই জমিতে বছরের পর বছর ধরে তাঁরা শান্তিপূর্ণভাবে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন। হঠাৎ ২০১৬ সালের মে মাসে মদিনা গ্রুপের লোকজন স্থানীয় একটি সন্ত্রাসী বাহিনীর মদদে জোর করে পৌনে পাঁচ একর কৃষিজমি দখল করে নেন। এরপর ২০১৯ সালে জমির চারদিকে বালু ভরাটের জন্য রিং বাঁধ দেন। তখন জমির মালিকেরা প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ধরনা দিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি। মদিনা গ্রুপের ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও প্রভাবের কারণে অসহায় কৃষকেরা পিছু হটেন।

স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, মদিনা গ্রুপ জমি দখলের পর ২০১৬ সালের মে মাসে ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকেরা বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছিল থানায়

গতকাল বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, কৃষকেরা তাঁদের দখলচ্যুত হওয়া চাষের জমি পুনরুদ্ধারের কাজ করছেন। তাঁরা খননযন্ত্র দিয়ে মদিনা গ্রুপের দেওয়া রিং বাঁধ কেটে মালিকানা ফিরিয়ে নেওয়ার কাজ করছেন।

ভুক্তভোগী কৃষক পরিবারের সদস্য সৈয়দ আহসান পাভেল জানান, তাঁদের ১ একর ৪৩ শতক জমি হাজি সেলিমের লোকজন দখল করে নেন। বিষয়টি নিয়ে হাজি সেলিমের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেও কোনো সুরাহা হয়নি। অপর জমির মালিকেরাও দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। স্থানীয় প্রশাসনও কোনো সহায়তা করেনি।

অভিযোগের বিষয়ে মদিনা গ্রুপের উপমহাব্যবস্থাপক (ভূমি) মো. নুরুল হামিদ বলেন, ‘ওই জমি একজন মালিকের কাছ থেকে কেনা হয়েছে। তা ছাড়া জমি ক্রয়ের আগে সাইনবোর্ড দেওয়া হয়। তখন কেউ যোগাযোগ করেনি। কাগজপত্র ঠিক দেখে পুরো বাজারদরে ৪ একর ৭৪ শতক জমি ক্রয় করা হয়। পরে ৩ একর ৯২ শতক জমির মালিকানা নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়, যা নিরসনে দাবিদারদের সঙ্গে সমঝোতা বৈঠক করা হয়। একই জমি এখন দুবার কিনতে হচ্ছে। উল্টো প্রতারণার শিকার আমরা হয়েছি। এ নিয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, মদিনা গ্রুপ জমি দখলের পর ২০১৬ সালের মে মাসে ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকেরা বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছিল থানায়। কলাপাড়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন পর্যন্ত করেছিলেন। এসব খবর ওই সময় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল।