৫২ হাজার টাকায় ছেলেকে বিক্রি করেন বাবা, তিন মাস পর উদ্ধার

রাউজান থানার পুলিশের সহায়তায় তিন মাস পর ছেলেকে ফিরে পেয়েছেন মা নাছিমা আকতার। রাউজান, চট্টগ্রাম, ২ অক্টোবর। ছবি: এস এম ইউসুফ উদ্দিন
রাউজান থানার পুলিশের সহায়তায় তিন মাস পর ছেলেকে ফিরে পেয়েছেন মা নাছিমা আকতার। রাউজান, চট্টগ্রাম, ২ অক্টোবর। ছবি: এস এম ইউসুফ উদ্দিন

টাকার লোভে নিজের সাত বছরের ছেলেকে এক প্রবাসীর স্ত্রীর কাছে বিক্রি করে দেন বাবা। এরপর ছেলের খোঁজে এলাকায় মাইকিং করেন। মাঝেমধ্যে স্ত্রীর অগোচরে ছেলের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলতেন। একদিন লুকিয়ে কথা বলার সময় শুনে ফেলেন তাঁর স্ত্রী। পরে ওই নম্বরে ফোন করে জানতে পারেন, তাঁর স্বামীই ছেলেকে বিক্রি করে দিয়েছেন। পরে পুলিশের কাছে সহায়তা চাইলে শিশুটিকে উদ্ধার করে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

বিক্রি করে দেওয়ার প্রায় তিন মাস পর আজ বুধবার বেলা দুইটার দিকে চট্টগ্রামের রাউজান থানার পুলিশ শিশুটিকে উদ্ধার করে। উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নের কচুখাইন গ্রামের বাসিন্দা মোরশেদ খানের বাসা থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। শিশুটির নাম মুহাম্মদ রাব্বি (৭)। বাবার নাম মুহাম্মদ হাসান উল্লাহ (৩৫)।

রাউজান থানার পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, হাসান উল্লাহ তাঁর স্ত্রী নাছিমা আকতার ও দুই সন্তানকে নিয়ে চট্টগ্রামের চাক্তাই এলাকায় বসবাস করতেন। তিন মাস আগে রাব্বি খেলতে বের হলে তাকে ধরে নিয়ে রাউজানের কচুখাইনের মোরশেদ খানের স্ত্রী বাচু আকতারের কাছে বিক্রি করে দেন। বিনিময়ে তিনি ৫২ হাজার টাকা পান। ছেলেকে বিক্রি করার পর নিখোঁজ হওয়ার নাটক সাজান হাসান। ছেলের খোঁজে এলাকায় মাইকিংও করেন। মাঝেমধ্যে স্ত্রীর অগোচরে ছেলের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলতেন তিনি। কিন্তু একদিন কথা বলার সময় শুনে ফেলেন হাসানের স্ত্রী নাছিমা। পরে ওই নম্বরে ফোন দিয়ে জানতে পারেন, তাঁর স্বামীই ছেলেকে বিক্রি করে দিয়েছেন। ছেলেকে ফেরত পাওয়ার আশায় গতকাল মঙ্গলবার রাউজান থানায় যান নাছিমা। পরে আজ দুপুরে পুলিশ রাব্বিকে উদ্ধার করে নাছিমার কাছে হস্তান্তর করে।

জানতে চাইলে শিশুটিকে কিনে নেওয়া বাচু আকতার প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিশুটির বাবা আমাকে বলেছেন, শিশুটির মা নেই। সৎমা নির্যাতন করে বলে বিক্রি করে দিতে চান। আমার কোনো ছেলেসন্তান না থাকায় আমিও ৫২ হাজার টাকা দিয়ে ছেলেটিকে কিনে নিই।’

শিশুটির মা নাছিমা আকতার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার স্বামী তাঁর ছেলেকে বিক্রি করে দেবেন, এমনটা কখনো ভাবতে পারিনি। ছেলে নিখোঁজ হওয়ার পর আমার স্বামী বাসায় এসে কান্নাও করেছিলেন, এলাকায় মাইকিং করেছিলেন।’

রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কেপায়েত উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাসানের বাড়ি কুমিল্লায়। ১০ বছর আগে মহেশখালীতে গিয়ে নাছিমাকে বিয়ে করেন। তিন মাস আগে ছেলে রাব্বিকে বিক্রি করে দিয়ে নাটক সাজান হাসান। পরে শিশুটির মা আমাদের কাছে সহায়তা চাইলে আমরা শিশুটিকে উদ্ধার করে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিয়েছি।’