'জিনের বাদশা'র খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত এক নারী

ঢাকার ধামরাইয়ের কান্দাকাওয়ালি গ্রামের রেহানা আক্তার নামের এক নারী কথিত জিনের বাদশার খপ্পরে পড়ে সাড়ে ছয় লাখ টাকা খুইয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ধার-দেনা আর পালের গরু বিক্রি করে তিনি এই টাকা জোগাড় করেছিলেন।
ওই গ্রামের খলিলুর রহমানের স্ত্রী রেহানা আক্তার (৩৫) জানান, তাঁদের দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। ১০ বছর আগে খলিল আরেকটি বিয়ে করে অন্যত্র চলে যান। মাঝেমধ্যে তাঁদের খোঁজখবর নেন। এর পর থেকে গাভির দুধ বিক্রি করে এবং অন্যের বাড়িতে কাজ করে সন্তানদের নিয়ে কোনো রকমে সংসার চালাচ্ছিলেন তিনি। ৩ অক্টোবর রাত আড়াইটার দিকে তাঁর মুঠোফোন বেজে ওঠে। ফোন ধরার পর পরই অপর প্রান্ত থেকে এক ব্যক্তি নিজেকে জিনের বাদশা পরিচয় দিয়ে ব্যতিক্রমী কণ্ঠে ধর্মীয় নানা কথা বলতে থাকে। একপর্যায়ে শত কোটি টাকার মালিক বানানোর প্রলোভন দেখিয়ে ওই প্রতারক বিকাশের মাধ্যমে রেহানাকে ৫০০ টাকা পাঠাতে বলে। কথামতো পরদিন তিনি ৫০০ টাকা পাঠিয়ে দেন। এভাবে দফায় দফায় তিনি প্রায় সাড়ে ছয় লাখ টাকা এবং দুই ভরি স্বর্ণ দেন ওই প্রতারককে।
রেহানা বলেন, তাঁর স্বামী তাঁদের দেখভাল না করায় দুটি গাভি ও দুটি গরুই ছিল তাঁর পরিবারের আয়ের একমাত্র উৎস। লোভের বশে সেই গরু তিনি বিক্রি করে দেন। এরপর প্রকৃত ঘটনা গোপন রেখে জমি কেনার কথা বলে আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের কাছ থেকে বাকি টাকা ধার করেন। গত বুধবার সকালে সব পাওনাদারের টাকা পরিশোধ করার কথা ছিল তাঁর। কারণ ওই প্রতারক মঙ্গলবার গভীর রাতে তাঁর ঘরে স্বর্ণের হাঁড়ি আর মোহর পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল। এ জন্য প্রতারকের কথামতো তিনি ওই রাতে (মঙ্গলবার) ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে ধ্যান করতে থাকেন। কিন্তু রাত পেরিয়ে সকাল হলেও মোহর আর স্বর্ণের হাড়ি তাঁর ঘরে পৌঁছায়নি। এর পরই বুঝতে পারেন, তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
রেহানার মেয়ে দিলরুবা বলে, বুধবার সকাল থেকেই সব পাওনাদার তাঁদের বাড়িতে টাকার জন্য ভিড় করতে থাকেন। বিপদ বুঝে এর আগেই তাঁরা মাকে নিয়ে সরে যান। এখন টাকার শোকে তাঁর মা পাগলপ্রায়। সুযোগ পেলেই তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
স্থানীয় নান্নার ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য শাজাহান মোল্লা বলেন, তিনি নিজেও ধার করে প্রায় ৬০ হাজার টাকা রেহানাকে দিয়েছেন। এ ছাড়া রেহানার বিপদ বুঝে অন্যদেরও টাকা ধার দিতে উৎসাহ দিয়েছেন। এর পরও তাঁর কাছে সত্য কথা খুলে বলেননি রেহানা। তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ দিতে বুধবার তাঁরা ধামরাই থানায় গিয়েছিলেন। থানার কর্মকর্তারা বিকাশের নম্বরগুলো সংগ্রহ করে থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।