মেয়ের বাসায় ঈদ করতে এসে আগুনে পুড়ে মারা গেলেন মা

মহরনের নেচ্ছা

মেয়ের পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে ঢাকায় এসেছিলেন মহরনের নেচ্ছা (৮৭)। ঈদের কয়েক দিন পরেই কুমিল্লার লাকসামের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। তিনি বাড়ি ফিরেছেন ঠিকই, তবে লাশ হয়ে।

রাজধানীর ভাসানটেকের শ্যামলপল্লি এলাকায় গতকাল শুক্রবার ভোরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গুরুতর দগ্ধ হয়েছিলেন মহরনের নেচ্ছা। আজ শনিবার সকাল ৮টার দিকে তিনি শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে মারা যান। মহরনের নেচ্ছার শরীরের ৪৭ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল।

একই ঘটনায় দগ্ধ হন মহরনের নেচ্ছার মেয়ে সূর্যবানু (৪০), জামাতা মো. লিটন (৫২) ও তিন নাতি-নাতনি লিজা (১৮), সুজন (৮) ও লামিয়া (৭)। তাঁরা সবাই শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন। তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পুড়েছে সূর্যবানুর শরীর, ৮২ শতাংশ। আর লিটনের শরীরের ৬৭ শতাংশ, লামিয়ার ৫৫ শতাংশ, সুজনের ৪৩ শতাংশ ও লিজার ৩০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। হাসপাতাল সূত্র জানায়, তাঁদের সবার শ্বাসনালি পুড়ে গেছে। সবার অবস্থা সংকটজনক।

মহরনের নেচ্ছা কুমিল্লার লাকসামের চানগাঁও এলাকার বাসিন্দা। স্বামী আছাদ আলী বেশ কয়েক বছর আগে মারা গেছেন। মহরনের নেচ্ছার পাঁচ মেয়ে। সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় এলাকায় একটি ঘর পেয়েছিলেন তিনি। সেখানেই তাঁর সঙ্গে থাকত দ্বিতীয় মেয়ের পরিবার।

আজ বিকেলে হাসপাতাল থেকে মহরনের নেচ্ছার মৃতদেহ কুমিল্লায় দাফনের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাচ্ছিলেন নাতনিজামাই বিল্লাল হোসেন। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কোনো ছেলেসন্তান না থাকায় তিনি (মহরনের নেচ্ছা) মেয়েদের সঙ্গে থাকতেন।

বিল্লাল হোসেন আরও বলেন, তাঁকে দেখভাল করতে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে ওঠে দ্বিতীয় মেয়ে ফয়জুন্নেসার পরিবার। তবে অন্য মেয়েদের কাছেও বেড়াতে যেতেন। এ বছর ঈদ করতে ঢাকায় তৃতীয় মেয়ে সূর্যবানুর বাসায় গিয়েছিলেন তিনি। ঈদের পরের সপ্তাহেই তাঁর কুমিল্লায় ফেরার কথা ছিল।

বিকেলে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে গিয়ে দেখা যায়, লিটন ও সূর্যবানু দম্পতির নিকটাত্মীয় কেউ নেই। মহরনের নেচ্ছার দুই নাতনিজামাই লাশ নিয়ে গ্রামের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, সূর্যবানুর চিকিৎসা চলছে হাসপাতালের সাততলায় নারী এইচডিইউতে (হাইডিপেনডেন্সি ইউনিট)। সূর্যবানুর স্বামী লিটন ও ছেলে সুজনের চিকিৎসা চলছে ষষ্ঠ তলায় পুরুষ এইচডিইউতে। তাঁদের অগ্নিদগ্ধ দুই মেয়ের মধ্যে লিজা চতুর্থ তলায় আইসিউতে এবং লামিয়া রয়েছে পঞ্চম তলায় অস্ত্রোপচার-পরবর্তী পর্যবেক্ষণ কক্ষে।

শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক তারিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, চিকিৎসাধীন পাঁচজনের অবস্থা এখনো খুবই খারাপ। তাঁদের সবার অবস্থা আশঙ্কাজনক।

সাততলায় সূর্যবানুর সঙ্গে এইচডিইউতে ছিলেন প্রতিবেশী আছিয়া বেগম। একই বাসায় থাকার সূত্রে ১১ বছর ধরে তাঁদের পরিচয়। আছিয়া জানান, সূর্যবানুর স্বামী লিটন একটি আসবাবের দোকানে চাকরি করেন। আর সূর্যবানু গৃহিণী। তাঁদের বড় মেয়ে লিমা জর্ডানে চাকরি করেন। মেজ মেয়ে লিজা একটি তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। সুজন ও লামিয়া স্কুলে পড়ে।

শুক্রবার ভোর চারটার দিকে সূর্যবানুদের বাসায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

হাসপাতালে লিটনের স্বজন ফরহাদ হোসেন প্রথম আলোকে জানান, একটি কক্ষে তাঁরা সবাই থাকতেন। ভেতরে দুটি বিছানা ছিল। কক্ষটিতে একটি জানালা। কক্ষের বাইরে ছিল গ্যাসের সিলিন্ডার। সেই সিলিন্ডার থেকে পাইপের মধ্যে ঘরের এক কোণে মেঝেতে বসানো চুলায় সংযোগ দেওয়া হয়েছিল।

ফরহাদের ধারণা, হয় চুলা ঠিকমতো বন্ধ হয়নি, নয়তো পাইপে ছিদ্র ছিল। যে কারণে কয়েল জ্বালাতে ম্যাচে আগুন ধরাতেই আগুন ধরে যায়।