জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের দুই নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

ছাত্র ইউনিয়নের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি অমর্ত্য রায় ও সাধারণ সম্পাদক ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এই সংগঠনের সদস্য ৫৮ জন শিক্ষক আজ রোববার এক বিবৃতিতে এ দাবি জানান। একই সঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তাঁরা।

বিবৃতিতে বলা হয়, একের পর এক সংকটের জেরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যায়তনিক কার্যক্রম ক্রমাগত সংকুচিত হয়ে পড়েছে। এর প্রধান কারণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবহেলা, অদূরদর্শিতা ও অপতৎপরতা এবং ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের দুর্দমনীয় স্বেচ্ছাচারিতা।

জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলাভবনে পুরোনো দেয়ালচিত্র মুছে ধর্ষণবিরোধী গ্রাফিতি অঙ্কনের অভিযোগে গত মঙ্গলবার অমর্ত্য রায় ও ঋদ্ধ অনিন্দ্যকে বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ছাত্র ইউনিয়ন নেতাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বহিষ্কারাদেশ ও ছাত্রনেতাদের বহিষ্কার করার প্রক্রিয়ার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।

সংগঠনটির বিবৃতিতে বলা হয়, কোনো কারণ দর্শানোর নোটিশ ও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে দুই ছাত্রনেতাকে বহিষ্কার করাটা বিস্ময়কর। এ ছাড়া ওই তদন্ত কমিটির প্রধান এক সহকর্মীকে যৌন নিপীড়নের দায়ে অভিযুক্ত হয়ে নৈতিক স্খলনের দায়ে পদাবনতির মুখোমুখি হয়েছিলেন। এমন একজন ব্যক্তিকে তদন্ত কমিটির প্রধান করায় কমিটির নৈতিক অবস্থান নিয়েও স্বভাবতই প্রশ্ন এসে যায়।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক বলছে, তদন্ত কমিটির যেকোনো সুপারিশই আসলে প্রত্যাখ্যানযোগ্য। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান আন্দোলন দমাতে ‘চিরাচরিত প্রশাসনিক কায়দায়’ সাজা দেওয়ার এ ঘটনা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেই প্রতীয়মান হয়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও বিভিন্ন ঘটনার উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, পূর্ণাঙ্গ চিত্র বিশ্লেষণে মনে হয় যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনাকে ঢাকতে, যুক্তিসংগত আন্দোলনের বাঁক অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে এবং সর্বোপরি বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কণ্ঠরোধ করতে এরূপ একটি ‘অন্যায্য সিদ্ধান্ত’ বহিষ্কৃত ছাত্রনেতাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।

অবিলম্বে এ বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে যৌক্তিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতিহিংসামূলক আচরণ না করার আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, গীতি আরা নাসরীন, কামরুল হাসান, মির্জা তাসলিমা সুলতানা, সাঈদ ফেরদৌস, রোবায়েত ফেরদৌস, কাজী মারুফুল ইসলাম, রায়হান রাইন, তাসনীম সিরাজ মাহবুব, আ-আল মামুন, মোশাহিদা সুলতানা, সৈয়দ মইনুল আলম, মো. মাসউদ ইমরান, মানস চৌধুরী, সৌমিত জয়দ্বীপ, শেখ নাহিদ নিয়াজী, সামিনা লুৎফা, ফাহমিদুল হক, মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, রুশাদ ফরিদী, স্বাধীন সেন, জোবাইদা নাসরীন, কাজলী সেহরীন ইসলাম, জাকিয়া সুলতানা, ইমরান কামাল, ইসমাইল সাদী, মো. মনিরুল ইসলাম, তৈমুর রেজা, জি এইচ হাবীব, সৌভিক রেজা, সৌম্য সরকার, অভিনু কিবরিয়া ইসলাম, অলিউর সান প্রমুখ।