রামপাল ও বৃষ্টি মিলে স্বস্তি, শঙ্কা কাটেনি পায়রার

বিদ্যুৎ খাত
ফাইল ছবি

জ্বালানিসংকটে ২৩ দিন বন্ধ থাকার পর আবার উৎপাদনে গেছে কয়লাভিত্তিক রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। চলমান গ্যাস–সংকটের মধ্যে এটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কিছুটা বাড়িয়েছে। দুই দিনের বৃষ্টিতে তাপমাত্রা কমায় বিদ্যুতের চাহিদাও কমেছে। এতে লোডশেডিং থেকে অনেকটা স্বস্তি পেয়েছেন গ্রাহকেরা। তবে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধের শঙ্কা কাটেনি এখনো।

বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের একমাত্র রাষ্ট্রীয় সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) বলছে, গত মঙ্গলবার বিকেলেও প্রায় তিন হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে সারা দেশে। সন্ধ্যায় বৃষ্টি শুরু হলে বিদ্যুতের চাহিদা কমতে থাকে। একই দিন রাত ৯টা ১০ মিনিটে রামপালে উৎপাদন শুরু হয়। এর পর থেকে গতকাল বুধবার বিকেল পর্যন্ত কোনো লোডশেডিং করতে হয়নি।

এর আগে গত ১৫ এপ্রিল রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ হয়ে যায়। এর চার দিন পর এটি আবার চালু হয়। কিন্তু কয়লার অভাবে ২৪ এপ্রিল থেকে আবার বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। এরপর ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে গত শনিবার রাতে এলএনজি সরবরাহ বন্ধ হলে দেখা দেয় গ্যাস–সংকট। একসঙ্গে কয়েকটি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়। বিদ্যুৎ উৎপাদন নেমে আসে ১০ হাজার মেগাওয়াটের নিচে। এর ফলে টানা চার দিন ধরে দিনে আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং করা হয়।

তবে গতকালও দিনে বিদ্যুৎ উৎপাদন ১০ হাজার মেগাওয়াটের নিচেই ছিল। সকালে এ মাসের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের কারণে আবহাওয়া ঠান্ডা ছিল। এতে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়েনি। এর আগে গত কয়েক দিন বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৩ হাজার মেগাওয়াটের মতো।

এদিকে টানা তিন দিন বন্ধের পর সোমবার এলএনজি সরবরাহ শুরু হয়েছে। ওই দিন এলএনজি থেকে সর্বোচ্চ ২৮ কোটি ঘনফুট সরবরাহ করা হয়। মঙ্গলবার এটি ৪০ কোটি ঘনফুট করা হয়েছে। গতকাল এটি বাড়িয়ে ৫০ কোটি ঘনফুট করা হয়।

চাহিদা কমেছে ঢাকায়

গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী ছয়টি বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থার তথ্য বলছে, গতকাল সারা দিন কোথাও কোনো লোডশেডিং হয়নি। এর মধ্যে ঢাকার দুই বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) ও ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) একই তথ্য দিয়েছে। চাহিদা কমে যাওয়ায় লোডশেডিং করতে হয়নি তাদের।

ডেসকো বলছে, গতকাল তাদের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ৯১০ মেগাওয়াট। এর আগের দিন তাদের চাহিদা ছিল ১ হাজার ১৩৫ মেগাওয়াট।

ডিপিডিসি বলছে, গতকাল দিনে তাদের চাহিদা ছিল ১ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। আগের দিন তাদের চাহিদা ছিল ১ হাজার ৭৯৫ মেগাওয়াট।

পিডিবি বলছে, গতকাল সন্ধ্যায় সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছে ১১ হাজার ৯৫০ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে গ্যাসের সরবরাহ ছিল ৮২ কোটি ঘনফুট। আগের দিন এটি ছিল ৭৯ কোটি ঘনফুট।

পেট্রোবাংলা বলছে, দিনে মোট গ্যাস সরবরাহ বেড়েছে। গতকাল সরবরাহ করা হয়েছে ২৬৪ কোটি ঘনফুট। আগের দিন এটি ছিল ২৪৪ কোটি ঘনফুট।

কয়লা নিয়ে শঙ্কায় পায়রা

১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে পটুয়াখালীর কয়লাভিত্তিক পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। দিনে গড়ে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ করে কেন্দ্রটি। বিদ্যুৎ সরবরাহের দিক থেকে এটি দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র। বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশ-চীন পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসি) এটি নির্মাণ করে।

বিসিপিসি সূত্র বলছে, দীর্ঘদিন ধরে কয়লার টাকা বকেয়া রেখে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালিয়ে আসছে তারা। গত জানুয়ারিতে কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দেয় সরবরাহকারী বিদেশি কোম্পানি। এরপর মজুতকৃত কয়লা দিয়ে উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্রটি। এমন পরিস্থিতিতে গত ফেব্রুয়ারিতে কিছু ডলারের ব্যবস্থা করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে কেন্দ্রটির উৎপাদন সচল থাকে। এখন নতুন করে বকেয়া বিলের চাপে পড়েছে কেন্দ্রটি।

ডলার–সংকটের কারণে ছয় মাস পর কয়লার বিল নেয় সরবরাহকারীরা। কিন্তু সেই সময়েও বিল শোধ করা যাচ্ছে না। গত বছরের কয়লা বিল বাকি থাকায় সরবরাহ বন্ধ আছে। সব মিলে বিল বকেয়া প্রায় ৩০ কোটি ডলার। সম্প্রতি দুই কোটি ডলার ছাড় করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এত কম পরিশোধে সন্তুষ্ট হয়নি সরবরাহকারী কোম্পানি। তাই নতুন করে কয়লা আসার কোনো সম্ভাবনা তৈরি হয়নি।

বিসিপিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এম খোরশেদুল আলম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, মজুত কয়লা দিয়ে সর্বোচ্চ ৩০ মে পর্যন্ত উৎপাদন করা যাবে। বকেয়ার একটা ভালো অংশ পরিশোধ করলে হয়তো সরবরাহকারীরা কয়লা সরবরাহে রাজি হতো। তবু সমঝোতার চেষ্টা করা হচ্ছে। বৈশ্বিক সংকটের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও ডলার জোগাড়ের চেষ্টা করছে।

পিডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, তিন বছর ধরে পায়রা থেকে বিদ্যুৎ আসছে। এটি এক দিনের জন্যও বন্ধ হয়নি। দেশের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য এ বিদ্যুৎকেন্দ্র কয়লার অভাবে বন্ধ হয়ে গেলে উৎপাদন অনেক কমে যাবে। এটি বন্ধ হলে লোডশেডিং বেড়ে যাবে।