কর্নেল নাজমুল হুদা হত্যা মামলায় আসামিদের সম্পর্কে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ শুরু: পুলিশ

১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদাকে হত্যার ঘটনায় গত বুধবার রাতে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় হত্যা মামলা করেছেন তাঁর মেয়ে সংসদ সদস্য নাহিদ ইজাহার খান
সৌজন্যে ডিএমপি নিউজ

১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদাসহ (বীর বিক্রম) তিন মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তা হত্যা মামলায় আসামিদের সম্পর্কে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ শুরু করেছে পুলিশ। পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার এইচ এম আজিমুল হক আজ শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, মামলা তদন্তের কাজ শুরু হয়েছে। তবে আসামি গ্রেপ্তারে কোনো অভিযান শুরু হয়নি।

পুলিশের তেজগাঁও অঞ্চলের আরেকজন কর্মকর্তা বলেছেন, ৪৭ বছর আগে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এখন পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ আসামিদের সম্পর্কে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছে। পরে আসামি গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হবে। তবে বেঁচে থাকা এজাহারভুক্ত একমাত্র আসামি মেজর (অব.) জলিলের অবস্থান জানা যায়নি।

তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, মামলার বিবরণে থাকা তিন আসামি ইতিপূর্বে মারা গেছেন। তাঁরা হলেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবু তাহের ও মেজর (অব.) মো. আসাদ উজ্জামান।

১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর জাতীয় সংসদ ভবন প্রাঙ্গণে গুলি চালিয়ে নাজমুল হুদাকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় গত বুধবার রাতে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন তাঁর মেয়ে সংসদ সদস্য নাহিদ ইজাহার খান। তিনি মামলায় বলেছেন, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর ঢাকায় জাতীয় সংসদ ভবন প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিপথগামী ও বিশৃঙ্খল সদস্যদের হাতে কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা বীর বিক্রম নিহত হন। তিনি তখনকার সেনাবাহিনীর রংপুরের ৭২ ব্রিগেড কমান্ডার ছিলেন। নাজমুল হুদার সঙ্গে অপর দুই সেক্টর কমান্ডার শহীদ মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ টি এম হায়দার বীর উত্তমও নিহত হন।

আরও পড়ুন

নাহিদ ইজাহার খান মামলায় উল্লেখ করেন, তাঁরা বাবা (নাজমুল হুদা) নিহত হওয়ার সময় তিনি ও তাঁর ভাই ছোট ছিলেন। তাঁরা বড় হয়ে বাবার কোর্সমেট, সহকর্মী ও বিভিন্ন সূত্র থেকে অনুসন্ধানে জানতে পারেন, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সকালে দশম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট অফিসে (এখনকার জাতীয় সংসদ ভবনের এমপি হোস্টেল) শহীদ কর্নেল নাজমুল হুদার সঙ্গে অপর দুই সেক্টর কমান্ডার শহীদ মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ টি এম হায়দার বীর উত্তমও অবস্থান করছিলেন।

নাজমুল হুদা সকালে নাশতা করার সময় দশম ইস্ট বেঙ্গলের সিও লেফটেন্যান্ট কর্নেল নওয়াজেশের কাছে দ্বিতীয় ফিল্ড আর্টিলারি থেকে একটি ফোন আসে। এরপর দশম ইস্ট বেঙ্গলের কর্মকর্তারা নাজমুল হুদাসহ তিন কর্মকর্তাকে বাইরে নিয়ে যান।

মামলার বিবরণে নাহিদ ইজাহার খান লিখেছেন, ১৯৭৫ সালে তখনকার সেনাবাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান এবং জাসদ নেতা লে. কর্নেল আবু তাহেরের (অব.) নির্দেশে দশম ইস্ট বেঙ্গলের কর্মকর্তা, জেসিও ও সৈনিকেরা সংঘবদ্ধভাবে ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ড ঘটান। লেফটেন্যান্ট কর্নেল সিরাজ (তৎকালীন ক্যাপ্টেন), মেজর মুকতাদির (তৎকালীন ক্যাপ্টেন) ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা আরও জানতে পারেন, দশম ইস্ট বেঙ্গলের কর্মকর্তা, জেসিও এবং সৈনিকদের সঙ্গে মেজর মো. আসাদ উজ্জামান (অব.), মেজর মো. আবদুল জলিল (অব.) সাবেক তিন সেনা কর্মকর্তা নাজমুল হুদা, খালেদ মোশাররফ ও এ টি এম হায়দারকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করেন। মৃত্যু নিশ্চিত করতে গুলি করার পর তাঁদের বেয়নেট দিয়ে আঘাত করা হয়।