এক বছরে নতুন ক্যানসার রোগী সাড়ে ছয় হাজার

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত এক বছরে ২০ হাজার ক্যানসার রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। কক্সবাজার অঞ্চলে ক্যানসার রোগী বেশি।

ক্যানসার
প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রাম অঞ্চলে বাড়ছে ক্যানসার রোগী। চট্টগ্রাম ও আশপাশের ছয় জেলায় গত এক বছরে নতুন করে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছে ৬ হাজার ৫১০ জন। এই সময়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের রেডিও থেরাপি বিভাগে এ অঞ্চলের ২০ হাজার ক্যানসার রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। জেলা ও উপজেলাগুলোতে ক্যানসারের কোনো বিশেষায়িত হাসপাতাল না থাকায় চমেক হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

চমেক হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, আক্রান্ত ক্যানসার রোগীদের ৫৫ ভাগই নারী। এর মধ্যে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিশেষ করে কক্সবাজার ও সংলগ্ন অঞ্চলের রোগী বেশি। কক্সবাজারে রোগী বেশি হওয়ার পেছনে খাদ্যাভ্যাসের ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা।

চট্টগ্রামে নতুন শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে খাদ্যনালির ক্যানসার সর্বোচ্চ ১৭ শতাংশ বলে জানা গেছে। এ ছাড়া মুখগহ্বর ও গলার ক্যানসার রয়েছে দ্বিতীয়স্থানে প্রায় ১৫ শতাংশ। এর পরই আছে স্তন, ফুসফুস ও জরায়ু ক্যানসার।

কক্সবাজার থেকে চিকিৎসা নিতে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পেটে ব্যথা ছিল তাঁর। এর পর স্থানীয় এক চিকিৎসকের ওষুধ খান তিনি। সুরাহা না হওয়ায় চট্টগ্রাম চলে আসেন। চমেক হাসপাতালে পরীক্ষা–নিরীক্ষার পর তাঁর গলব্লাডার ক্যানসার ধরা পড়ে। 

চিকিৎসকদের মতে, চট্টগ্রাম ছাড়া জেলা পর্যায়ে ক্যানসার শনাক্তকরণের জন্য স্ক্রিনিং পরীক্ষাসহ পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই।

দু-একজন চিকিৎসক আশপাশের জেলায় রোগী দেখলেও রোগনির্ণয়ের ব্যবস্থা না থাকায় তাঁরাও রোগীদের সঠিক চিকিৎসা দিতে পারছেন না। তাই রোগীদের বেশির ভাগই চমেক হাসপাতালে চলে আসেন।

জানতে চাইলে চমেক রেডিওথেরাপি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আলী আজগর চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, আশপাশের জেলা থেকে রোগীরা এখানে চলে আসেন। সেখানে ক্যানসারের চিকিৎসা নেই। এ কারণে প্রতি বছর চট্টগ্রামে রোগী বাড়ে। যদি জেলা পর্যায়ে কিছু কিছু চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হতো, রোগীদের ভোগান্তিও কমে যেত। এখানে কক্সবাজার এবং দক্ষিণ চট্টগ্রামের রোগী বেশি। সম্ভবত খাদ্যাভ্যাসের কারণে এই রোগ ওখানে বেশি হচ্ছে।

চমেক হাসপাতালে তিন পার্বত্য জেলা, কক্সবাজার, ফেনী ও নোয়াখালীর রোগী ভর্তি হয়। এসব জেলা হাসপাতালে ক্যানসারের বিশেষায়িত চিকিৎসা নেই। চমেক হাসপাতালে একটি কোবাল্ট রেডিওথেরাপি মেশিন রয়েছে। এ ছাড়া ব্রেকেথেরাপি মেশিন থাকলেও সেটি এখন নষ্ট।

ক্যানসার রোগীদের জন্য রেডিওথেরাপি প্রয়োজনীয় একটি চিকিৎসা। চমেক হাসপাতালে এ জন্য খরচ পড়ে প্রায় আট হাজার টাকা। চট্টগ্রামে বেসরকারি পর্যায়ে এই সুবিধা নেই।

তবে রাজধানী ঢাকায় বেসরকারি হাসপাতালে এই সুবিধা থাকলেও সেখানে খরচ কয়েকগুণ বেশি পড়ে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের রোগ শনাক্তে অতি জরুরি পরীক্ষা প্যাট সিটিস্ক্যানের ব্যবস্থাও নেই চট্টগ্রামে। 

চমেক হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাকিবুল হাসান বলেন, বেসরকারি পর্যায়ে এখনো চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। কিছু পরীক্ষা–নিরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়া ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখা হয়। সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সুবিধা গড়ে উঠলে রোগীদের জন্য ভালো হবে।

অবশ্য চমেক হাসপাতালের পাশেই গড়ে উঠছে একটি পূর্ণাঙ্গ ক্যানসার হাসপাতাল। এই হাসপাতালে সব ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থাকবে। অনকোলজি, রেডিওথেরাপি, ব্রেকেথেরাপি এবং অনকোসার্জারিও থাকবে।

শয্যাসংখ্যা প্রাথমিকভাবে ৩০০ বলা হলেও তা কমে আসতে পারে। একই ভবনে কিডনি রোগীও থাকবে। ২০২৪ সালে এটি চালু হওয়ার কথা রয়েছে। 

এদিকে, বেসরকারি পর্যায়ের মধ্যে এভারকেয়ার হাসপাতাল মাসখানেকের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ ক্যানসার ইউনিট চালু করতে যাচ্ছে। একইভাবে মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালও নতুন করে ক্যানসার ইউনিটের উদ্বোধন করেছে। তবে ওখানেও এখনো রেডিওথেরাপি মেশিন বসেনি।