উগ্রবাদীদের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ

বাউল আয়নাল হকের পরিবেশনা। গতকাল রাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারেছবি: দীপু মালাকার

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লালন সাঁইয়ের সুর ও বাণী কণ্ঠে নিয়ে মানবতার জয়গান গাইলেন দেশের স্বনামধন্য ও নবীন প্রজন্মের শিল্পীরা। উগ্রবাদ, ধর্মান্ধতা ও এসবের মদদদাতাদের ষড়যন্ত্রের তীব্র প্রতিবাদ জানালেন সংস্কৃতি অঙ্গনের অগ্রগণ্য ব্যক্তিত্বরা। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ‘লালনসংগীতের আসর’ নামের এই আয়োজন করেছিল সাঁইজির গান নিয়ে সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে যে অপপ্রচার চলছে এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেপ্তার ও পুলিশি হয়রানির প্রতিবাদে।

আয়োজকেরা জানান, সম্প্রতি শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জের সঞ্জয় রক্ষিত নামের এক লালন–ভক্ত সাঁইজির একটি গান তাঁর ফেসবুকে দিয়েছিলেন। পরে অনেকে গানটির ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, গানটি ধর্মবিরোধী। এতে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। একপর্যায়ে পুলিশ সঞ্জয়কে গ্রেপ্তার করে। পরে অবশ্য তিনি আদালত থেকে ছাড়া পেয়েছেন। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই লালন সাঁইয়ের গান ও প্রতিবাদী বক্তব্য নিয়ে শহীদ মিনারে এই আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল তরুণ প্রজন্মের শিল্পী মণিকা দেওয়ানের গান দিয়ে। তিনি ‘দেখ দেখ মন মনরায় চাঁদ হয়েছে উদয়’ গানটি দিয়ে সাঁইজির গানের ভেলা ভাসান। পরে গেয়েছেন ‘যেখানে সাঁইর বারামখানা’। নবনীতা চৌধুরী গেয়েছেন ‘এমন মানবসমাজ কবে গো সৃজন হবে/ যেদিন হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রিষ্টান জাতি গোত্র নাহি রবে’, ‘এমন মানবজীবন আর কি হবে’, তামান্না নিগার গেয়েছেন, ‘জাত গেল জাত গেল বলে’, ‘বেঁধেছ এমন ঘর’ গেয়েছেন রফিয়া রুনা। অনুষ্ঠানে শিল্পীরা সাঁইজির এমন গানে গানেই ধর্মান্ধ, উগ্র, মানবতাবিরোধীদের প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

আলোচনা করেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি প্রাবন্ধিক মফিদুল হক, নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, মুক্তিযোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। আলোচনার মাঝে মাঝে গান শুনিয়েছেন স্বনামখ্যাত শিল্পী ফরিদা পারভীন, চন্দনা মজুমদার, অনিমা মুক্তি গমেজ, আবুবকর সিদ্দিক, ফকির শাহাবুদ্দিন, দিল আফরোজ, পল্লবী সরকার, লাভলী দেব, লামিয়া ঐশ্বর্য, সরদার হিরক রাজা, আয়নাল হক, খগেন্দ্রনাথ বৈরাগী প্রমুখ।