বিদ্যুৎ বিপর্যয়: বিতরণ কোম্পানির কারা দায়ী, খতিয়ে দেখা হচ্ছে

৪ অক্টোবর জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় ঢাকাসহ দেশের প্রায় অর্ধেক এলাকা বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়ে
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের জন্য চারটি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিরও দায় আছে। ইতিমধ্যেই পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এটি উঠে এসেছে। তাই দায়ীদের চিহ্নিত করতে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোকে আজ সোমবার নির্দেশ দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। ইতিমধ্যেই নিজেদের দায় খতিয়ে দেখতে কাজ শুরু করেছে চার বিতরণ কোম্পানি।

ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি), ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো), বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটিগুলোকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

৪ অক্টোবরের বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ঘটনায় রোববার পিজিসিবির দুজন প্রকৌশলীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এরপর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ প্রথম আলোকে বলেন, বিতরণ কোম্পানির যাঁরা জড়িত, তাঁদেরও এ সপ্তাহের মধ্যেই বরখাস্ত করা হবে।

বিতরণ কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, প্রধান প্রকৌশলী (গ্রিড) এ এইচ এম মহিউদ্দিনকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের কমিটি করেছে ডিপিডিসি। ডেসকোর তিন সদস্যের কমিটির প্রধান করা হয়েছে প্রধান প্রকৌশলী (নেটওয়ার্ক অপারেশন) মো. মনজুরুল হককে, আরইবির তিন সদস্যের কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে প্রধান প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিনকে। আর প্রধান প্রকৌশলী (উৎপাদন) খন্দকার মোজাম্মেল হোসেনকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের কমিটি গঠন করেছে পিডিবি। প্রতিটি কমিটিতেই একজন করে বিদ্যুৎ বিভাগের প্রতিনিধি রাখা হয়েছে।

সংস্থাগুলোর দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, আজ থেকেই কাজ শুরু করেছে তিন তদন্ত কমিটি। তারা গ্রিড বিপর্যয়ের সময়কার বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতির তথ্য–উপাত্ত সংগ্রহ করছে। জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা ন্যাশনাল লোড ডেসপাচ সেন্টারের (এনএলডিসি) নির্দেশনা অমান্য করার বিষয়টি যাচাই করে দেখা হবে। বরাদ্দের চেয়ে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারের অভিযোগও খতিয়ে দেখবে তারা। বিতরণ এলাকার উপকেন্দ্র থেকে তথ্য নেওয়া হচ্ছে। এরপর সব তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন তৈরি করা হবে।

ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমির কাউসার আলী প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগের নির্দেশে তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। গ্রিড বিপর্যয়ের জন্য দায়ী কাউকে খুঁজে পাওয়া গেলে অবশ্যই তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এর আগে গত রোববার বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে পিজিসিবি। এতে ৪ অক্টোবরের বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের জন্য আরও কয়েকটি কারণের সঙ্গে বিতরণ কোম্পানির বাড়তি বিদ্যুৎ ব্যবহারকে দায়ী করা হয়। তবে বিতরণ কোম্পানির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, গ্রিড বিপর্যয়ের জন্য অতীতে কখনোই বিতরণ কোম্পানিকে দায়ী করা হয়নি। বাড়তি বিদ্যুৎ ব্যবহার করার কোনো কারণ নেই। কোনো কারণে এটি করলেও এনএলডিসি তাৎক্ষণিকভাবে সরবরাহ কমিয়ে দিতে পারে।

তবে পিজিসিবির তদন্ত কমিটির সদস্যরা বলছেন, মূলত দুটি কারণেই বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটেছে। এর একটি হলো বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণে সমন্বয়ের অভাব। আর দ্বিতীয়টি হলো বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার বিধিবদ্ধ নিয়ম (রুল বুক) ও গ্রিড কোড কঠোরভাবে না মানা। বিদ্যুৎ সরবরাহে জড়িত সবাইকে রুল বুক ও গ্রিড কোড মানতে হবে। এর ব্যত্যয় হলেই গ্রিড বিপর্যয়ের ঝুঁকি থাকে।

বিদ্যুৎ খাত বিশেষজ্ঞ ও ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাবের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এম শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, কেউ গ্রিড কোড মানতে চায় না। প্রয়োজনে বিদ্যুতের সরবরাহ (লোড) নিজেরাই কমাতে পারে বিতরণ কোম্পানি। তাই তাদের দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। তারা ভোক্তার কাছ থেকে টাকা নিয়ে মুনাফা করছে, বিভিন্ন প্রকল্প করছে; তাহলে বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা কেন স্বয়ংক্রিয় হবে না।