হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও আটক শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবি ক্ষুব্ধ নারীসমাজের
কোটা আন্দোলনকে ঘিরে সংঘটিত সব হত্যাকাণ্ডের বিচার ও আটক শিক্ষার্থীদের মুক্তিসহ ছয় দফা দাবি জানিয়েছে ক্ষুব্ধ নারীসমাজ।
আজ বুধবার ‘সকল লাশের হিসাব করো, গ্রেপ্তার-নির্যাতন বন্ধ করো’ শীর্ষক একটি সংবাদ সম্মেলনে ক্ষুব্ধ নারীসমাজ এসব দাবি জানিয়েছে। আজ সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সংবাদ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়। পরে বক্তাদের বক্তৃতা ও দাবি বিবৃতির মাধ্যমে সংবাদমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, দেশের বর্তমান অবস্থায় নারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করতে ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানাতে ক্ষুব্ধ নারীসমাজ গড়ে উঠেছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ঋতু সাত্তার। তিনি বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে ১৭ জুলাই থেকে টানা কয়েক দিন পুলিশ ও বিজিবি যেভাবে নিরস্ত্র মানুষের ওপর হামলা চালিয়ে মানুষ হত্যা করেছে, তা নজিরবিহীন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করেছেন।
সাম্প্রতিক সংঘাত-সংঘর্ষের দায় সরকার নিতে অস্বীকার করছে জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ঢাকা শহরসহ সারা দেশে অতিরিক্ত পুলিশ, বিজিবি ও সেনা মোতায়েন করে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। আন্দোলনকারী আহত শিক্ষার্থীরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে সেখানেও তাঁদের ওপর হামলা হয়েছে কিংবা ধরে নিয়ে গেছে। এমন ঘটনা নজিরবিহীন। কারফিউ জারি করে দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দিয়ে জনজীবনে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে।
আন্দোলনকারীরা কোনো অপরাধমূলক কাজ করেননি উল্লেখ করে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, শিক্ষার্থীরা এ দেশের ভবিষ্যৎ। অথচ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার কারণে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এলাকায় এলাকায় ব্লক রেইড করা হচ্ছে। গণহারে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডের নামে চরম নির্যাতন করা হচ্ছে। অনেককে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর ২৪ ঘণ্টা পার হলেও খবর পাওয়া যাচ্ছে না।
ক্ষুব্ধ নারীসমাজের ছয় দাবি—বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৯ দফা দাবি মেনে নিতে হবে। সব আটকৃত শিক্ষার্থীকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করতে হবে। কারফিউ প্রত্যাহার করে বিজিবি ও সেনাবাহিনী তুলে নিতে হবে। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা দিতে হবে। সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে হুমকি দেওয়া বন্ধ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন রেহনুমা আহমেদ, তাসলিমা আখতার, মাহা মির্জা, বহ্নিশিখা জামালী, শিরিন হক, শারমিন মোর্শেদ, জান্নাতুল মাওয়া, বিথী ঘোষ, কৃষ্ণকলি প্রমুখ।
সঞ্চালনা করেন নারীনেত্রী ফরিদা আখতার। এ সময় বিভিন্ন নারী সংগঠনের প্রতিনিধি, লেখক, শিল্পী, অভিনেত্রীসহ সমাজের বিভিন্ন পেশাজীবী নারীরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলন শেষে ক্ষুব্ধ নারীসমাজের একটি অংশ হাইকোর্টের সামনে অনুষ্ঠিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিতে যোগ দিতে এগিয়ে গেলে প্রেসক্লাবের সামনে পুলিশ তাঁদের আটকে দেয়। তাঁদের মহিলা পুলিশ দিয়ে ঘিরে রাখা হয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে বিবৃতিতে।