আগস্টে এত বৃষ্টির মধ্যেও গরম যে কারণে

বর্ষাকালের বৃষ্টির পানির তাপমাত্রা বেশি থাকে, তাই বেশি সময় নিয়ে ভিজলেও ঠাণ্ডা লাগে না
ফাইল ছবি

দেশের বেশির ভাগ এলাকায় বর্ষা জেঁকে বসেছে। সকাল থেকে আকাশ কালো করে মেঘ ভাসছে, তুমুল বৃষ্টিও ঝরছে। এত বৃষ্টির পরও গরম খুব একটা কমছে না; বরং বৃষ্টি থেমে যাওয়ার পর অনেক সময় ঘামঝরা গরম লাগছে। ঋতুচক্রের বৈশিষ্ট্য ও আবহাওয়া নিয়ে গবেষণা করেন, এমন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বছরের অন্য সময়ের তুলনায় বর্ষার বৃষ্টি একটু গরমই থাকে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে, গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে আজ শুক্রবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঢাকায় বৃষ্টি হয়েছে ৬০ মিলিমিটার। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর আকাশ ছিল কালো মেঘে ঢাকা। কিন্তু তাতে রাজধানীর তাপমাত্রা খুব বেশি কমেনি। দুপুরে রাজধানীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠেছিল।

বাংলাদেশে সাধারণত জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বর্ষা ঋতু থাকে। এই সময়ে গড়পড়তায় বৃষ্টির তাপমাত্রা থাকে ২৫ থেকে ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃষ্টির পানি কী ওই তাপমাত্রা নিয়েই বাংলাদেশে আসে, নাকি বাংলাদেশের আকাশ সীমায় এসে এর তাপ বাড়তে থাকে—এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে প্রথমে জানতে হবে, মৌসুমি বায়ু আসে কোথা থেকে। বিশাল মেঘমালা নিয়ে আসা ওই বায়ু কত ওপরে ওঠে। সেখানকার তাপমাত্রা কত?

আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে মূলত জুন থেকে কাগজে-কলমে বর্ষা শুরু হয়। কারণ, ওই সময় সুদূর মাদাগাস্কারের কাছে ভারত মহাসাগর থেকে বঙ্গোপসাগরের পথ ধরে বাংলাদেশ ও ভারতে মৌসুমি বায়ু প্রবেশ করে। বিশাল আয়তনের ওই বায়ুর সঙ্গে আসে বিপুল পরিমাণে মেঘ আর জলীয় বাষ্প। ওই মেঘমালা কক্সবাজার উপকূল দিয়ে প্রবেশ করে বাংলাদেশে। জুনের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে ওই বায়ু সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে শুরু হয় তুমুল বৃষ্টি। ওই বৃষ্টি থাকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। তাই জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে বর্ষাকাল হিসেবে ধরা হয়। জুনে আসা মৌসুমি বায়ু হিমালয়ের বিশাল আর সুউচ্চ পর্বতমালায় বাধা পেয়ে দেশের উপকূল থেকে শুরু করে বৃষ্টি ঝরায় উত্তরাঞ্চলসহ সবখানে।

বছরের অন্য সময়ের বৃষ্টির তুলনায় বর্ষার বৃষ্টির আলাদা একটি বিশেষত্ব আছে। বর্ষার মেঘমালাগুলো অনেক দীর্ঘ ও বিস্তৃত হয়। আর বৃষ্টি পড়েও অনেক সময় নিয়ে। এই সময়ে বাতাসের গতিবেগ থাকে কম। তাই তা মেঘগুলোকে সরিয়ে অন্যত্র নিতে পারে না। মেঘের ওপরে মেঘ জমে অনেক জায়গায় পুরো আকাশ কালো হয়ে যায়। বৃষ্টি চলে অনেক সময় ধরে। অনেক সময় টানা কয়েক দিন চলে বৃষ্টি।

বর্ষার বৃষ্টির পানি বছরের অন্য সময়ের তুলনায় অপেক্ষাকৃত উষ্ণ বা কম ঠান্ডা থাকে। কারণ, আকাশের যত উঁচুতে মেঘ থাকবে, তার তাপমাত্রা থাকবে তত কম। বর্ষার পরের সময়; অর্থাৎ অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে তাপমাত্রা সাধারণত কমতে থাকে। ওই সময় আবহাওয়ার বৈশিষ্ট্য এবং স্থানীয় উৎস, যেমন নদী-নালা, খাল-বিল থেকে মেঘ তৈরি হওয়ায় তা বেশি উঁচুতে ওঠে। সাধারণত ভূপৃষ্ঠ থেকে পাঁচ হাজার মিটার ওপরে উঠে যায় মেঘ। তিন থেকে চার হাজার মিটার উঁচুতে তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে চলে যায়। আর পাঁচ হাজার মিটার ওপরে তাপমাত্রা শূন্যের চেয়ে ১০ থেকে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম থাকে। ফলে পানি ঠান্ডা হয়ে জমাট বেঁধে নিচের দিকে নামতে থাকে। এ সময় আকাশে ভেসে থাকা মেঘ পেরিয়ে নিচের দিকে নামার সময় বৃষ্টির ফোঁটাও বড় হতে থাকে। এ সময়ের বৃষ্টির পানির তাপমাত্রা থাকে ২০ থেকে ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

অন্যদিকে বর্ষার বৃষ্টির মেঘ থাকে কিছুটা নিচে, ভূপৃষ্ঠ থেকে চার বা সাড়ে চার হাজার মিটার উঁচুতে। সেখানে তাপমাত্রাও একটু বেশি থাকে। ফলে বর্ষার ঝিরঝিরে বা মুষলধারার বৃষ্টিতে অনেক সময় নিয়ে ভিজলেও খুব বেশি ঠান্ডা লাগে না। বর্ষার মেঘ সাগরের পানি থেকে তৈরি হওয়ায় এ সময়কার বৃষ্টির তাপ ধারণের ক্ষমতাও বেশি থাকে। ফলে এটি ভূখণ্ডে নামার আগে আরও তাপ ধারণ করে।

বর্ষার বৃষ্টির আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এ সময় বৃষ্টির পানি বাতাসে আর্দ্রতা বাড়িয়ে দেয়। তাতে বাতাসও কিছুটা উষ্ণ হয়ে ওঠে। তাতে বৃষ্টি নামার আগে-পরেও গরম বেশি থাকে। ঘামও বেশি হয়। যেমন আজ রাজধানীতে বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯২ শতাংশ। বাতাসে ওই বাড়তি জলীয় বাষ্পের কারণেও ভ্যাপসা গরমের অনুভূতি হয়।