ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে মামলার রায় ২১ জুন

মিজানুর রহমান
প্রথম আলোর ফাইল ছবি

বরখাস্ত হওয়া পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানসহ চারজনের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে করা মামলায় যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ হয়েছে। ২১ জুন মামলার রায় ঘোষণার দিন ঠিক করেছেন আদালত।

ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬–এর বিচারক মঞ্জুরুল ইমাম আজ সোমবার রায় ঘোষণার দিন ঠিক করেন। প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ওই আদালতের বেঞ্চ সহকারী জাহিদুল ইসলাম।

এর আগে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় গত বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি ডিআইজি মিজানুর রহমানকে তিন বছর কারাদণ্ড দেন ঢাকার আরেকটি আদালত।

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০১৯ সালের ২৪ জুন মিজানসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদকের পরিচালক মঞ্জুর মোর্শেদ।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন মিজানের স্ত্রী সোহেলিয়া আনার রত্না, তাঁর ছোট ভাই মাহবুবুর রহমান এবং ভাগনে মাহমুদুল হাসান।

আসামিদের মধ্যে ডিআইজি মিজান কারাগারে আছেন। তাঁর স্ত্রী সোহেলিয়া আনার পলাতক। তবে তাঁর ছোট ভাই মাহবুবুর রহমান এবং ভাগনে মাহমুদুল হাসান জামিনে আছেন।

মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ২৮ লাখ ৬৮ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ৩ কোটি ৭ লাখ ৫ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়।

মামলাটি তদন্ত করে গত বছরের ৩০ জানুয়ারি মিজানসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। দুদকের পক্ষ থেকে ২৭ জন সাক্ষীকে আদালতে হাজির করা হয়।

মামলার বাদী দুদক পরিচালক মঞ্জুর মোর্শেদ আদালতকে বলেছিলেন, দুর্নীতির মাধ্যমে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ডিআইজি মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়। প্রাথমিক অনুসন্ধানে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পর তাঁকে সম্পদের হিসাব দিতে নোটিশ দেওয়া হয়। পরে ২০১৮ সালের ১ আগস্ট দুদকে সম্পদের হিসাব জমা দেন তিনি। সেখানে তিনি মোট ১ কোটি ১০ লাখ ৪২ হাজার ২৬০ টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ৪৬ লাখ ২৬ হাজার ৭৫২ টাকার অস্থাবর সম্পদের হিসাব দেখান।

মঞ্জুর মোর্শেদ আদালতকে আরও বলেন, অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ডিআইজি মিজান অবৈধ অর্থ দিয়ে নিকটাত্মীয়দের নামে সম্পদ কিনে তা কৌশলে ভোগদখল করেন। মিজানুর রহমান তাঁর ভাগনে মাহমুদুল হাসানের নামে ২০০২ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ২৪ লাখ ২১ হাজার ২২৫ টাকা দিয়ে গুলশান-১–এর পুলিশ প্লাজা কনকর্ডে একটি দোকান বরাদ্দ নেন। ওই দোকান তাঁর স্ত্রীর নামে ভাড়া গ্রহণ করে নিজের দখলে রাখেন।

আদালতকে মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, এ ছাড়া মাহমুদুল হাসানের নামে ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর রাজধানীর কারওয়ান বাজারের একটি বেসরকারি ব্যাংকের শাখায় একটি স্থায়ী আমানত (ফিক্সড ডিপোজিট) হিসাব খোলেন। সেখানে ৩০ লাখ টাকা জমা রাখেন তিনি।

দুদক অনুসন্ধান শুরুর কিছুদিনের মধ্যেই মিজানুর রহমান সেই টাকা তুলে নেন জানিয়ে মঞ্জুর মোর্শেদ আদালতকে বলেন, সুদসহ টাকার পরিমাণ ৩৮ লাখ ৮৮ হাজার ৫৭ টাকা, যা তিনি তাঁর সম্পদের বিবরণীতে জমা দেননি। এ ছাড়া মিজানুর রহমান তাঁর ভাই মাহমুদুর রহমানের নামে ২০১৬ সালের ২১ মার্চ ৬৫ লাখ ৯৯ হাজার ৭১৯ টাকা দিয়ে রাজধানীর বেইলি রোডে একটি ফ্ল্যাট কেনেন। মাহবুবুর রহমানের ফ্ল্যাট কেনার বৈধ কোনো উৎস পাওয়া যায়নি। ওই ফ্ল্যাটও মিজানুর রহমানের দখলে আছে।

এ ছাড়া মিজানুর রহমান ২০১১ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর স্ত্রীর নামে একটি বাণিজ্যিক ফ্ল্যাট কেনেন, যার দাম ১ কোটি ৭৭ লাখ ৯৬ হাজার ৩৫০ টাকা। এভাবে আসামি মিজানুর রহমান অপরাধলব্ধ অর্থ দিয়ে নিজের আত্মীয়স্বজনের নামে সম্পদ কিনেছেন, যে তথ্য তিনি গোপন করেছেন বলে আদালতকে জানান মামলার বাদী মঞ্জুর মোর্শেদ।