ফিলিস্তিনের গাজায় দুই বছর ধরে আগ্রাসী ইসরায়েলি বাহিনী যে বর্বর গণহত্যা চালাচ্ছে, তার প্রতিবাদ জানালেন ঢাকার কবি, শিল্পী, সংস্কৃতিজনেরা। গান গেয়ে, আবৃত্তি করে, ছবি এঁকে আর অভিনয়ে প্রতিবাদ জানালেন তাঁরা। সংহতি প্রকাশ করলেন ফিলিস্তিনের মানুষের স্বাধীনতার দাবির প্রতি।
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ‘আওয়াজ তোলো, রুখে দাঁড়াও’ স্লোগান নিয়ে গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে দৃক গ্যালারি এই প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক আয়োজন করেছিল। দৃকপাঠ ভবনের অষ্টম তলায় এ অনুষ্ঠানে রাজধানীর প্রতিবাদী শিল্পী–সংস্কৃতিকর্মীদের পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক তরুণ অংশ নিয়ে ফিলিস্তিনের মানুষের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন। অবিলম্বে তাঁরা গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা বন্ধের দাবি করেন। বিশ্ববিবেকের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে তাঁরা বললেন, গাজায় গণহত্যা বন্ধ করো।
মিলনায়তনে দর্শকদের সামনের দেয়ালে টাঙানো হয়েছিল বিশাল আকারের ফিলিস্তিনের পতাকা। সেখানে সুমুদ ফ্লোটিলার আদলে এক বড় নৌযান আঁকা। অনুষ্ঠানের শুরুতেই দৃকের পরিচালক সায়দিয়া গুলরুখ দর্শকদের বলেন, গাজার মানুষের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে এ আয়োজন। সেখানে মানবিক ত্রাণ সাহায্য নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে জাহাজবহর যাত্রা করেছে। এই ফ্লোটিলায় বাংলাদেশের বিশিষ্ট আলোকচিত্রী শহিদুল আলমও রয়েছেন। সুমুদ ফ্লোটিলাতেও হামলা করেছে আগ্রাসী ইসরায়েল বাহিনী। এখানে কাগজ দিয়ে বিভিন্ন রঙের বেশ কিছু নৌকা তৈরি করে রাখা আছে। ফ্লোটিলায় হামলার প্রতিবাদ হিসেবে দর্শকেরা ইচ্ছা হলে এই নৌকায় তাঁদের সংহতিমূলক বার্তা লিখে ফিলিস্তিনের পতাকায় সাঁটিয়ে দিতে পারেন। এই ঘোষণার পর দর্শকসারি থেকে অনেকে গিয়ে মঞ্চের নেপথ্য পর্দায় ফিলিস্তিনের পতাকাটি ভরিয়ে তুললেন তাঁদের সংহতি, প্রতিবাদ, হামলা বন্ধের দাবি লেখা প্রতীকী নৌযানে।
অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল শিল্পী দর্শক সবাই মিলে ‘ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সি/ প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি’ স্লোগানে। প্রথমেই ছিল শিল্পী সায়ানের পরিবেশনা। তিনি ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, একদিন ফিলিস্তিন অবশ্যই স্বাধীন হবে।’ এরপর আবৃত্তি করেন ‘মাই নেম ইজ ফিলিস্তিন’ নামের কবিতা। পরে গেয়ে শোনান তাঁর গান ‘আমার একটা দুঃখের নাম ফিলিস্তিন/ আমার সকল স্পর্ধার নাম ফিলিস্তিন/ আমার সকল সাহসের নাম ফিলিস্তিন’।
এরপর কবিতা আবৃত্তি করেন কবি অরূপ রাহী ও মুনিমা মহরীন। আবৃত্তির পর মুইজ মাহফুজ প্রথমে গেয়ে শোনান পরিবেশ নিয়ে গান ‘এই ভাবে পাখিরা একদিন হারিয়ে যাবে’। পরে গেয়েছেন শোষণ–বঞ্চনার নিগড় ভেঙে নতুন করে গড়ার প্রতিবাদী গান।
কবি ও সংগীতশিল্পীরা যখন তাঁদের প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন সুরে ও ছন্দে, তখন মঞ্চের দুই পাশে ইজেলে ক্যানভাসে চারুশিল্পীরা মগ্ন ছিলেন রংতুলিতে গাজার নিপীড়িত মানবতার পাশে দাঁড়িয়ে ইসরায়েলি বর্বরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ছবি আঁকায়। তাঁরা এঁকেছেন রক্তস্নাত গাজার দৃশ্য। ছবি আঁকায় অংশ নিয়েছেন সুমন হালদার, জান্নাতুল ইসলাম, নজির আমীন চৌধুরী ও রিফাত ফাতেমা।
এদিকে অনুষ্ঠানও এগিয়েছে গানে–আবৃত্তিতে। আবৃত্তি করেছেন ফেরদৌস আরা, রুম্মানা জান্নাত, জাহিদ জগৎ, সোনিয়া হাসান, সৈকত আমীন, তাহমীদ চৌধুরী ও সৈয়দ আবু মুসা।
গান করেছেন অর্জন কর, সূচী মারমা ও সমগীতের শিল্পীরা।
অমল আকাশের লেখা ও সানন্দা ভাবনার নির্দেশনায় ফিলিস্তিনের মুক্তি নিয়ে নাটক পরিবেশন করে সমগীত।