অনির্দিষ্টকালের অবরোধ শুরু, ক্লাস হয়নি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতিসহ দিয়াজ হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে গতকাল রোববার থেকে ক্যাম্পাসে অনির্দিষ্টকালের অবরোধ শুরু হয়েছে। অবরোধকারীদের বাধায় চলেনি শাটল ও ডেমু ট্রেন। যে কারণে শহর থেকে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে যেতে না পারায় ক্লাস হয়নি। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসম্পাদক দিয়াজ ইরফান চৌধুরীকে হত্যার অভিযোগে তাঁর অনুসারী নেতা-কর্মীরা ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের’ ব্যানারে এ কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন।

অবরোধের সমর্থনে গতকাল বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট এলাকায় দুটি ব্যাটারিচালিত রিকশা ভাঙচুর করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এর আগে সকালে নগরের বটতলী স্টেশনে শাটল ট্রেনের হোসপাইপ কেটে (ইঞ্জিনের ব্রেকের সঙ্গে সংযোগ থাকে) দেন অবরোধকারীরা। এরপর ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। চট্টগ্রাম শহর ও ক্যাম্পাসের মধ্যে দিনে মোট ১৮ বার ট্রেন যাতায়াত করে। এ ছাড়া দুপুরে হাটহাজারীর চৌধুরীহাট এলাকায় অবরোধের সমর্থনে মিছিল বের করেন দিয়াজের অনুসারীরা।
ট্রেন না চলায় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল খুব কম।

অবরোধকারীদের পাঁচ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে দিয়াজ হত্যা মামলা সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেন চৌধুরীকে প্রক্টরিয়াল বডি থেকে দ্রুত অপসারণ ও চাকরিচ্যুত করা, মামলার সব আসামিকে দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা, আগের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন বাতিল করে নতুন করে ময়নাতদন্ত করা, শিক্ষায় সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও দিয়াজের অনুসারী মো. মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘দিয়াজ হত্যার বিচারের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমরা সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি পালন করছি। দিয়াজের মায়ের মতো আর কোনো মায়ের বুক যেন খালি না হয়। আমরা এ হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই।’

অবরোধের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের ৫ দফার মধ্যে যৌক্তিক দাবিগুলোর সঙ্গে ছাত্রলীগ সহমত পোষণ করে। কিন্তু অবরোধ দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাজীবনের মূল্যবান সময় নষ্ট করা অযৌক্তিক। আমি তাঁদের বলতে চাই, অবরোধ প্রত্যাহার করে গঠনমূলক কর্মসূচির মাধ্যমে দাবি আদায়ের আন্দোলন চালিয়ে যান।’

২০ নভেম্বর রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ২ নম্বর গেট এলাকার নিজ বাসা থেকে দিয়াজের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর ২২ দিন আগে দিয়াজসহ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের চার নেতার বাসায় তাণ্ডব চালানো হয়। ৯৫ কোটি টাকার দরপত্রের ভাগ-বাঁটোয়ারাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতির অনুসারী নেতা-কর্মীরা ওই হামলা চালান বলে অভিযোগ ওঠে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি ভবন নির্মাণের দরপত্রকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে আড়াই মাস ধরে একের পর এক পাল্টাপাল্টি হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। এই সময়ের মধ্যে অন্তত ছয়বার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। এতে ১০ জন আহত হন।

দিয়াজ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পরে কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে গেলেও ক্যাম্পাসে তাঁর বেশ প্রভাব ছিল।

দিয়াজকে হত্যা করা হয়েছে—এমন আলামত ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে মেলেনি, তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে মত দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তাঁর পরিবার ও ছাত্রলীগের একটি অংশ এ প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের দাবি, দিয়াজকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার পর লাশ ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখে খুনিরা।

হত্যার অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেন, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর টিপুসহ ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক নয় নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেন দিয়াজের মা জাহেদা আমিন চৌধুরী।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি নিয়ে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ কামরুল হুদা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘দিয়াজের ঘটনায় আমরা সবাই মর্মাহত। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরাও চাই, দিয়াজের মৃত্যুর ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত হোক। আমরা বিষয়টি নিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠকে বসব।’