অন্যের জমিতে যুবলীগ নেতার মাছ চাষের চেষ্টা, বাধা দেওয়ায় হামলা

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে আবাদি জমিতে জোরপূর্বক মাছ চাষের চেষ্টা করছিলেন মির্জাপুর পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান আল মামুন। এতে বাধা দেওয়ায় মামুনসহ তাঁর অনুসারীদের হামলায় বিএনপি নেতাসহ ছয়জন আহত হয়েছেন। এই অভিযোগ ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের। বৃহস্পতিবার দুপুরে পৌর এলাকার বাইমহাটী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

দেওয়ান আল মামুনের দাবি, তিনিও আহত হয়েছেন। তাঁর জাল কেটে ফেলায় ঝগড়া হয়েছে।

আহত ব্যক্তিদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় মির্জাপুর পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলামকে (৪৫) টাঙ্গাইলের ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া বিল্লাল হোসেন নামের একজনক প্রথমে মির্জাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে অবস্থার অবনতি হলে কুমুদিনী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে চারজনকে আটক করেছে।

এলাকাবাসী জানান, পৌর এলাকার বাইমহাটি গ্রামের পূর্বপাড়া ও পার্শ্ববর্তী গোড়াই ইউনিয়নের মীর দেওহাটা এলাকাটি অপেক্ষাকৃত নিচু, যেখানে প্রায় ৫০ একর জমি রয়েছে। ২০১৫ সালে সেখানে মাছ চাষ করতে দেওয়ান আল মামুন জমির মালিকদের সঙ্গে চার বছর মেয়াদি চুক্তি করেন। দুই বছর আগে মেয়াদ শেষ হয়। গ্রামবাসী নতুন করে চুক্তি না করলেও গত বছর মামুন ওই জমিতে জোরপূর্বক মাছ চাষ করেন

বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার গ্রামের লোকজনের সঙ্গে বৈঠকের পর জমির মালিকেরা মৌখিকভাবে এক বছর মাছ চাষে রাজি হন। এ নিয়ে গ্রামবাসীর সঙ্গে মামুনের আপসনামা হয়। মির্জাপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. গিয়াস উদ্দিন কর্তৃক গত বছরের ১৯ জুলাই গৃহীত আপসনামায় উল্লেখ করা হয়, পরবর্তী বছর (২০২১ সাল) থেকে জমিগুলোতে মালিকেরা ধানের আবাদ করতে পারবেন।

এদিকে ওই আপসের পরও মামুন এ বছর সেখানে মাছ চাষ করার চেষ্টা করেন। তিনি প্রায় দুই মাস আগে সেচের মাধ্যমে আবাদি জমিগুলো পানিতে ডুবিয়ে দেন। এ নিয়ে গ্রামবাসীর পক্ষে ছানোয়ার হোসেন মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে আবাদি জমি রক্ষার জন্য লিখিত আবেদন করেন। পরে বিষয়টি নিয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তদন্তপূর্বক ইউএনওর কাছে প্রতিবেদন দেন। এতে তিনি ওই এলাকায় মাছ চাষ নিয়ে আইনশৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কা রয়েছে বলে উল্লেখ করেন। এ ছাড়া আবাদি জমিতে মাছের বিষ্ঠা ও খাদ্যের কারণে ধানের ফলন হয় না এবং জমির সীমানা নির্ধারণ করা যায় না উল্লেখ করে মাছ চাষ থেকে বিরত থাকতে ছানোয়ার হোসেন গত ১৮ মে দেওয়ান আল মামুনকে আইনি নোটিশ পাঠান। তা ছাড়া মাছ চাষ বন্ধে গত ৯ জুলাই বাইমহাটী গ্রামের কৃষকদের সংগঠন বাইমহাটী কৃষক একতা সংঘের সভা হয়।

সুলতান মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় কৃষকেরা ধানের আবাদি জমিতে মাছ চাষ বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একই সঙ্গে দেওয়ান আল মামুনকে মাছ চাষ থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করা হয়। কিন্তু তাতে তিনি রাজি না হয়ে বর্ষার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জমিগুলো জাল দিয়ে ঘেরাও করেন। বৃহস্পতিবার গ্রামের লোকজন এতে বাধা দিলে মামুনের অন্তত ২০ সমর্থক লাঠি, রামদা, টেঁটা ও লাঠি নিয়ে তাঁদের ওপর হামলা চালান। এতে নজরুল ইসলাম, বিল্লাল হোসেন, শাহিন মিয়া, শামীমসহ ছয়জন আহত হন।

গ্রামের বাসিন্দা বাদশা মিয়া জানান, ওই এলাকায় তাঁদের পরিবারের প্রায় ৯ একর আবাদি জমি রয়েছে, যেখানে আগে প্রচুর পরিমাণে ধান হতো। কিন্তু মাছ চাষের পর থেকে তাঁরা ঠিকমতো ধান পাচ্ছেন না। এ জন্য তাঁরা মাছ চাষে আগ্রহী নন।
মুঠোফোনে দেওয়ান আল মামুন বলেন, জমিগুলোতে মাছ চাষের জন্য নতুন করে অনেকেই ১০ বছরের জন্য চুক্তিতে বদ্ধ হয়েছেন। সে জন্য তিনি মাছ চাষের জন্য জাল ফেলেছিলেন। ওই জাল কয়েকজন কেটে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন।

সুলতান মিয়া বলেন, মাছের খাদ্য ও বিষ্ঠায় জমির উর্বরতা শক্তি কমে যায়। এ জন্য সেখানে তাঁরা মাছ চাষ বন্ধের অনুরোধ করেন।

মির্জাপুর থানার উপরিদর্শক (এসআই) রুবেল হোসেন জানান, বিষয়টি এলাকায় মীমাংসার জন্য দুই পক্ষকে নিয়ে তিনি সভা করেছিলেন। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। এ ঘটনায় মামুনের বাবা আরফান দেওয়ান, সোলেমান মিয়া, রায়হান ও সোবহান নামে চারজনকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে আরফান দেওয়ান একটি মামলার বাদী হবেন। দুই পক্ষই পাল্টাপাল্টি মামলার প্রক্রিয়ায় আছে।