অন্য রকম স্থাপত্যশৈলীর অনন্য স্থাপনা ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল
সীমানাপ্রাচীর নেই। সেই জায়গায় আছে ১০ ফুট প্রশস্ত জলাশয়। এরপর খানিকটা জায়গা ফাঁকা রেখে একতলা আর দুইতলা কিছু ভবন। ভবনগুলোতে নেই পলেস্তারা। ইটের গাঁথুনি আর ঢালাইয়ে বানানো দেয়াল ও ছাদ। এটি একটি হাসপাতাল, নাম ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল। সাতক্ষীরার শ্যামনগরে অন্য রকম স্থাপত্যশৈলীর এ স্থাপনার অবস্থান।
এ স্থাপনা যুক্তরাজ্যভিত্তিক রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব ব্রিটিশ আর্কিটেক্টসের (রিবা) ২০২১ সালের আন্তর্জাতিক পুরস্কারের জন্য নির্বাচিতদের সংক্ষিপ্ত তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। ১৬ নভেম্বর এ তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
শ্যামনগর উপজেলার সোয়ালিয়া গ্রামে ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ২ একর জমির ওপর আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসংবলিত এ হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে। এ স্থাপনা ২০টি ভবনের সমন্বয়ে ৪৭ হাজার ৭৭২ বর্গফুট জায়গাজুড়ে বিস্তৃত। স্থানীয় প্রযুক্তি ও নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করে নির্মিত হাসপাতালে আউটডোর ও ইনডোর চিকিৎসাব্যবস্থার পাশাপাশি আছে অডিটরিয়াম, কনভেনশন সেন্টার, ক্যানটিন ও প্রার্থনাকক্ষ। চিকিৎসক-নার্সসহ ৫৬ কর্মকর্তা-কর্মচারীর আবাসিক সুবিধা আছে। আছে অত্যাধুনিক অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থাও।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, স্থপতি কাশেফ মাহবুব চৌধুরী ৮০ শয্যার এ হাসপাতালের নকশা তৈরি করেছেন। বাতাসের গতিপথ বিবেচনায় রেখে হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোর অবস্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। পরিবেশ বিপর্যয় রোধে মূল ভূখণ্ডের ওপর গড়ে তোলা এ স্থাপনার যাবতীয় বর্জ্য ধ্বংসে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এসটিপির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর আগে স্থপতি কাশেফ মাহবুব চৌধুরীর নকশা করা গাইবান্ধার আরবানা ভবনটি আগা খান স্থাপত্য পুরস্কার পায়।
স্থপতি কাশেফ মাহবুব চৌধুরী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার অন্যতম শ্যামনগর। সেই শ্যামনগরে যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা রেখে একটি হাসপাতালের নকশা তৈরির সময় স্বল্প বাজেটের বিষয়টিও বিবেচনায় নিতে বলা হয়। আধুনিকতার ছোঁয়া রেখে ও প্রাণপ্রকৃতিকে গুরুত্ব দিয়ে এ স্থাপনার নকশা তৈরি করা হয়।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ডের সামনে উঠানের মতো খালি জায়গা রাখা। ইটের গাঁথুনি আর ঢালাইয়ে বানানো ভবন শোভাবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে লবণাক্ততার ক্ষতিকর প্রভাব এড়াবে। হাসপাতাল এলাকাজুড়ে লাগানো হয়েছে নানা প্রজাতির ফলদ ও বনজ গাছ। এলাকার লোনাপানির উপস্থিতিকে বিবেচনায় নিয়ে স্থাপনার মধ্যে পানি শোধনে প্ল্যান্টের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ভবনগুলোর একাধিক অংশে ইট ও কাচের সমন্বয়ে ভেন্টিলেশন–ব্যবস্থা ও প্রশস্ত জানালার উপস্থিতি আলাদা নজর কাড়ছে। সুপরিসর করিডর আর প্রাকৃতিক আলো-বাতাসের উপস্থিতি চোখকে স্বস্তি দেয়।
শ্যামনগর ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা এহসানুল হক বলেন, ২০১৪ সালে এ হাসপাতালের নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১৮ সালে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর সেবা কার্যক্রম শুরু হয়। মূল স্থাপনার মধ্যে পাঁচটি ভবন আবাসিক ও ১৫টি স্বাস্থ্যসেবার কাজে ব্যবহৃত হয়।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক শাহিনুর রহমান বলেন, এখানে ২৪ ঘণ্টা জরুরি বিভাগে সেবা দেওয়া হয়। সার্বক্ষণিক ৬ জন চিকিৎসক ও ১২ জন নার্স থাকেন। প্রায় প্রতি মাসে দেশের বাইরে থেকে একাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে এসে রোগীদের চিকিৎসা দেন।
হাসপাতালটির পরিচালক অসীম রোজারিও বলেন, শুধু সাতক্ষীরা জেলা নয়, এখানে চিকিৎসা নিতে পারেন দেশের যেকোনো জেলার মানুষ।