অপরাধমূলক কাজে অতিষ্ঠ মানুষ

এ নির্বাচনে যাঁদের সমস্যা সমাধানে আন্তরিক মনে হবে, তাঁদেরই ভোটাররা ভোট দেবেন বলে জানিয়েছেন।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. সোহেল ও তাঁর সহযোগী হরিপদ সাহাকে গত বছরের ২২ নভেম্বর বিকেলে গুলি করে হত্যা করা হয়। কাউন্সিলর সোহেল মাদক ব্যবসা ও নানা ধরনের অপরাধমূলক কাজে বাধা দেওয়ায় তাঁকে হত্যা করা হয়।

অপরাধপ্রবণ এলাকাগুলোর মধ্যে অন্যতম পাথুরিয়াপাড়া, সংরাইশ, নবগ্রাম, সুজানগর ও বউবাজার। এলাকাগুলো সিটি করপোরেশনের
১৬ ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের। ভারতীয় সীমান্ত থেকে এলাকাগুলোর দূরত্ব ছয় কিলোমিটার। ফলে সীমান্ত দিয়ে মাদক, শাড়ি ও প্রসাধনসমগ্রী এখানে প্রবেশ করে।

মাদক ব্যবসা ঘিরে এলাকায় প্রতিনিয়ত মারামারির ঘটনা ঘটে। কথায় কথায় এখানে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনাও ঘটছে। এ ছাড়া ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের নূরপুর, হযরতপাড়া ও কাটাবিলেও মাদক ব্যবসা ঘিরে সন্ত্রাসী হামলার ঘটছে।

আগামী ১৫ জুন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এ নির্বাচনে যাঁদের সমস্যা সমাধানে আন্তরিক মনে হবে, তাঁদেরই ভোটাররা ভোট দেবেন বলে জানিয়েছেন।

১৬ নম্বর ওয়ার্ড

১১ বছর আগে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সুজানগর বউবাজারের বাসিন্দা জানু মিয়া খুন হন। এ ঘটনার পর জানু মিয়ার হত্যাকারীকে গুলি করে হত্যা করেন তাঁর (জানু মিয়া) ছেলে শাহআলম। শাহআলম একসময় ছাত্রশিবিবের রাজনীতি করতেন। পরে তিনি আওয়ামী লীগের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক আমির হোসেনের অনুসারী হন। গত ২২ নভেম্বর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সোহেলকে গুলি করে হত্যা করেন শাহআলম ও তাঁর সহযোগীরা। এ ঘটনায় শাহআলম পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যান। ২০১৫ সালে মাদক ব্যবসা নিয়ে পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলি হয় সন্ত্রাসী শাহআলম বাহিনীর। ওই সময়ে তিনি জখম হন। শাহআলম বন্দুকযুদ্ধে মারা যাওয়ার পর কিছুদিন স্বস্তিতে ছিলেন এলাকাবাসী। এখন নির্বাচন ঘিরে সন্ত্রাসীরা আবার এলাকায় ফিরেছে। এ ওয়ার্ডে বিভিন্ন বাহিনী আছে। নির্বাচন ঘিরে ৫ মে তারা সন্ত্রাসী হামলা করেছে এলাকায়। এ ঘটনায় বর্তমান কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। প্রতিদিন বিকেলের পর এলাকার বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হচ্ছে মাদক। সংরাইশ, বউবাজার ও নবগ্রাম নিয়ে ১৬ নম্বর ওয়ার্ড। এ ওয়ার্ডে ভোটার ৯ হাজার ১৩৯ জন।

কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হোসেন, মো. আমির হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম ও আনোয়ার হোসেন।

জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘আমির হোসেন এলাকায় সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে ত্রাস করছেন। তাঁর বাহিনীর কাছে জিম্মি আমরা।’

তবে আমির হোসেন বলেন, জাহাঙ্গীর হোসেনের কাছেই জিম্মি এলাকাবাসী।

১৭ নম্বর ওয়ার্ড

নগরের পাথরিয়াপাড়া, সাহাপাড়া ও সুজানগরের কিছু অংশ নিয়ে ১৭ নম্বর ওয়ার্ড। এখানে মাদকের কারবার, জমি ব্যবসা, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে হরহামেশাই মারামারি হয়। এ নিয়ে মানুষ অতিষ্ঠ। ২০১২ ও ২০১৭ সালে মো. সোহেল কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। তিনি মাদক ব্যবসা, মাদক কেনাবেচা ও চোরাচালান নিয়ন্ত্রণে সোচ্চার ছিলেন। এতে মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তাঁর বিরোধ বাড়ে।

আধিপত্য বিস্তার নিয়েও সোহেলের সঙ্গে শত্রুতার সৃষ্টি হয়। ফলে গত বছরের ২২ নভেম্বর নগরের পাথুরিয়াপাড়া থ্রিস্টার এন্টারপ্রাইজ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে কাউন্সিলর সোহেল ও তাঁর সহযোগী হরিপদকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় গত ২৩ নভেম্বর সোহেলের ছোট ভাই সৈয়দ মো. রুমন ১১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৮ থেকে ১০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। পরে এ ঘটনায় ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সুজানগর বউবাজারের শাহআলম, নগরের সুজানগর পানির ট্যাংক এলাকার সাব্বির হোসেন ও সংরাইশ রহিম ডাক্তারের গলির ভেতরের বাসিন্দা সাজন পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা যান।

সাহাপাড়ার এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ওই এলাকায় আমার বিশাল বাড়ি। হানাহানির কারণে কোনো ধরনের স্থাপনা করছি না। ফ্ল্যাট কিনে শহরের অন্য জায়গায় থাকছি।’

এ ওয়ার্ডে ভোটার ১০ হাজার ৬৮৫ জন। এখানে প্রয়াত কাউন্সিলর সোহেলের সহধর্মিণী রুনা বেগম, সোহেলের ছোট ভাই মো. সৈয়দ রুমন আহমেদ, মো. সাইফুল ইসলাম, হানিফ মাহমুদ, মো. হাবিব ও মো. মোস্তফা কামাল নির্বাচন করবেন।

রুনা বেগম বলেন, ‘দল আমাকে একক সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী করেছে। নির্বাচনে জয়ী হব।’ রুমন আহমেদ বলেন, ‘আমি নির্বাচন করার জন্যই প্রার্থী হয়েছি।’

১৮ নম্বর ওয়ার্ড

নূরপুর, হযরতপাড়া, কাটাবিলের একটি অংশ ও হাউজিং এস্টেট এলাকা নিয়ে এই ওয়ার্ড। এখানেও মাদক ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্ব আছে। ভারতীয় সীমান্ত থেকে বালুতুপা এলাকা দিয়ে খুব সহজে এখানে মাদক প্রবেশ করে। পার্শ্ববর্তী মুরাদপুরের লোকজন এসে এখানে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে। তার ওপর আছে জলাবদ্ধতা ও নালার সমস্যা।

স্থানীয় বাসিন্দা সাংবাদিক মোতাহের হোসেন বলেন, এ ওয়ার্ড মাদকের আখড়া। কোনোভাবেই এগুলো নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না।

এখানে কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর আফসান মিয়া, মোহাম্মদ শত্তকত আকবর ও মো. নাসিম হোসেন। এখানে ভোটার ১০ হাজার ৪২১ জন।

আফসান মিয়া বলেন, মাদক কিছুটা কমে ছিল। এখন বেড়ে গেছে। মাদক ব্যবসা নিয়ে ছোটখাটো মারামারি ও হাতাহাতিও হয়।