অবশেষে পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরিতে যোগ দিলেন আসপিয়া

আসপিয়ার আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদান করতে এলে বরিশালের পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন তাঁকে ফুল দিয়ে বরণ করেন। মঙ্গলবার দুপুরে বরিশাল পুলিশ সুপার কার্যালয়ে
ছবি: প্রথম আলো

পুলিশের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগ পেয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিলেন আলোচিত ‘ভূমিহীন’ কলেজছাত্রী আসপিয়া ইসলাম। আজ মঙ্গলবার দুপুরে বরিশাল পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মারুফ হোসেন তাঁকেসহ নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের ফুল দিয়ে বরণ করেন। এ সময় আসপিয়া পুলিশ সুপারকে তাঁর চাকরির ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়ায় কৃতজ্ঞতা জানান। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও গণমাধ্যমের প্রতিও তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

আসপিয়া বলেন, ‘শুধু চাকরি নয়, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমাদের মাথা গোঁজার ঠাঁইও হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর বরাদ্দ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। সেই ঘরের নির্মাণকাজও প্রায় শেষের দিকে। এর মধ্য দিয়ে বরিশালের হিজলায় নিজেদের স্থায়ী বসতি হচ্ছে।’

আরও পড়ুন

এ সময় সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান, মো. ইকবাল হোছাইনসহ জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন বলেন, ‘আসপিয়ার এই লড়াই ও দৃঢ়তা আমাদের মুগ্ধ করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আসপিয়া তাঁর কাঙ্ক্ষিত চাকরি ও মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছেন। এটা এক অনন্য উদ্যোগ। আসপিয়ার হাতে চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দিতে পেরে আমরা ভারমুক্ত, আনন্দিত।’

এর আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আসপিয়াকে জমিসহ ঘর এবং যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

এর আগে গত শনিবার রাত আটটার দিকে হিজলা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মিজানুর রহমান জেলা পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন স্বাক্ষরিত নিয়োগপত্র আসপিয়ার কাছে পৌঁছে দেন। জেলা পুলিশের সূত্র জানায়, আসপিয়াকে রাজশাহীর সারদা পুলিশ একাডেমিতে আনুষ্ঠানিকতা শেষে নারী টিআরসিদের ছয় মাসের প্রশিক্ষণের জন্য রংপুরে পাঠানো হবে।

আরও পড়ুন

বাবার মৃত্যুর পর আসপিয়া ইসলামের পরিবারে আর্থিক টানাপোড়েন শুরু হয়। এর মধ্যে গত বছর এইচএসসি পাস করেন আসপিয়া। সম্প্রতি পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরির আবেদন করার পর পরীক্ষার সব কটি ধাপে উত্তীর্ণ হন তিনি। কিন্তু নিজেদের কোনো জমি না থাকায় চাকরিটা তাঁর হচ্ছিল না।

আরও পড়ুন

জমি না থাকায় চাকরি হবে না, এটা জেনে ৮ ডিসেম্বর সকালে আসপিয়া ছুটে যান বরিশাল রেঞ্জ পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) এস এম আকতারুজ্জামানের কার্যালয়ে। চাকরি না হওয়ার কারণ জানার জন্য ডিআইজির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন আসপিয়া। ডিআইজি তাঁকে বলেন, পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগের বিধি অনুযায়ী প্রার্থীকে অবশ্যই নিজ জেলার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। কিন্তু তাঁর হিজলায় নিজস্ব কোনো জমি নেই। তাই আইন অনুযায়ী তাঁকে নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ নেই।

আরও পড়ুন

হতাশ আসপিয়া দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত বরিশাল পুলিশ লাইনসের মূল ফটকের সামনে বসে থাকেন। এ নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিষয়টি আলোচনার জন্ম দেয়। পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আসপিয়াকে জমিসহ ঘর এবং যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন বলেন, বরিশালের জেলা কোটাতেই আসপিয়া চাকরি পেয়েছেন।

আরও পড়ুন

যোগদানের পর আসপিয়া তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বললেন, ‘সবার সহযোগিতায় আজ আমার স্বপ্ন পূরণ হলো। আমি সবার শুভ কামনা ও আন্তরিকতাকে সম্মান দিয়ে আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে সবার সহযোগিতা ও দোয়া চাই।’