অভাবের সংসারে একসঙ্গে জন্ম নেওয়া তিন সন্তান নিয়ে বিপাকে বাবুল ইসলাম

তিন শিশু ঠিকমতো মায়ের বুকের দুধ পায় না বলে চিকিৎসকের পরামর্শে গুঁড়া দুধ খাওয়াতে হয়। দুধের খরচ মেটাতে গিয়ে পরিবারটি এখন হিমশিম খাচ্ছে
ছবি: প্রথম আলো

চাঁপাইনবাবগঞ্জের ইজিবাইকচালক বাবুল ইসলামের অভাবের সংসার। এর মধ্যে গত ১৫ জানুয়ারি বাবুলের মেয়ে তাজরিন খাতুনের কোলজুড়ে একসঙ্গে এসেছে তিন সন্তান। একসঙ্গে তিন শিশুর জন্মের খবরে পরিবারে খুশির বন্যা বয়ে যায়। তবে দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিশুদের খরচ মেটাতে গিয়ে তিনি হিমশিম খাচ্ছেন।

বাবুলের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর চরাগ্রাম নতুন পাড়ায়। প্রায় পাঁচ বছর আগে বাবুল তাঁর ছোট মেয়ে তাজরিন খাতুনকে পাশের চরমোহনপুর গ্রামের মাসুদ রানার সঙ্গে বিয়ে দেন। মাসুদ রানা পেশায় রাজমিস্ত্রি। সন্তান প্রসবের কিছুদিন আগে তাজরিন বাবার বাড়িতে আসেন। এর পর থেকে তিনি সেখানেই আছেন।

জানুয়ারিতে রাজশাহীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাজরিনের দুই মেয়ে ও এক ছেলের জন্ম হয়। তবে জন্মের পর থেকেই তিন শিশু ঠিকমতো মায়ের বুকের দুধ পায় না। তাই চিকিৎসকের পরামর্শে গুঁড়া দুধ খাওয়াতে হচ্ছে। বাবুল ইজিবাইক চালিয়ে যা আয় করেন, তার বেশির ভাগ টাকা দুধ কিনতেই খরচ হয়ে যায়।

বাবুল ইসলাম বলেন, ৪০০ গ্রামের এক কৌটা গুঁড়া দুধের দাম ৬৭৫ টাকা। প্রথম দিকে এক কৌটায় তিন দিন চলে যেত। দামও কম ছিল। কিন্তু বাচ্চারা বড় হওয়ায় দুধ বেশি লাগে। এক থেকে দুই দিনেই এক কৌটা দুধ শেষ হয়ে যায়। কিন্তু মাঝেমধ্যে তো সারা দিনে ৫০০ টাকাও আয় হয় না। জামাতা মাসুদ রানার তেমন আয়রোজগারও নেই। তাই খরচ দিতে পারেন না। ফলে সন্তান প্রসবের পর থেকে নাতি–নাতনির খরচ তাঁর কাঁধেই পড়েছে।

তাজরিন বলেন, তাঁর স্বামী পরিবারের বড় ছেলে। বিদেশ যাওয়ার জন্য দালালকে কয়েক দিন আগে দুই লাখ টাকা দিয়ে প্রতারিত হয়েছেন। তাই তাঁর স্বামীর হাতেও টাকা নেই।
বাবুল ইসলামের তিন মেয়ের মধ্যে তাজরিন ছোট। বড় দুই মেয়েরও বিয়ে হয়ে গেছে। পুরো সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। তিন শিশুর দুধের খরচের জোগান দিতে বাবুলকে প্রায়ই ঋণ করতে হচ্ছে।

বাবুল ইসলাম বলেন, ‘দুধের শিশুকে তো আর না খাইয়ে রাখা যায় না। দুধ কিনেই বাড়ি ফিরতে হয়। ধারদেনা করে বড়দের জন্য খাবার কিনি। আমার আবার নিউমোনিয়া আছে। বৃষ্টিবাদলের দিনে অটো (ইজিবাইক) নিয়ে বের হতে পারি না। শরীরে বৃষ্টির ফোঁটা পড়লে সমস্যা হয়। ওই দিন তো আয় হয় না। দিন যেন চলতে চায় না, এমন অবস্থা হয়েছে আমার। মেয়ের অপারেশনের সময়ও দেনা করছি। সেটাও এখনো শোধ করতে পারিনি।’

এ বিষয়ে ১১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল হাই প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাবুল ইসলামের চরম সংকটে থাকার কথা আমি জানি। সন্তানদের বাবাও গরিব। তাঁর সামর্থ্য নেই। কিন্তু আমার পক্ষ থেকে কোনো সহায়তা দেওয়া সম্ভব হয়নি।’ পৌর মেয়র মোখলেসুর রহমান বলেন, তিনি বিষয়টি জানেন না। তাঁর কাছে সহায়তার জন্য আবেদনও জানানো হয়নি। তবে তিনি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।