অসুস্থ ‘রংমালা’র ফেরার অপেক্ষায় দর্শনার্থীরা

কক্সবাজারের চকরিয়া বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে অসুস্থ্য হাতি ‘ রংমালা’র চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা
ছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে দর্শনার্থীদের অন্যরকম বিনোদন দিত ‘রংমালা’। শিশুদের পিঠে চড়িয়ে ঘুরে বেড়াত পার্কের এদিক-সেদিক। কয়েক দিন ধরে রংমালার দেখা পাচ্ছেন না দর্শণার্থীরা। তাতে মন বেজার শিশুদের। এত দূর থেকে এসে যদি ‘রংমালার’ পিঠে চড়া না যায়, তাহলে মন তো খারাপ হওয়ারই কথা!

রংমালা-হচ্ছে ৮০-৮৫ বছর বয়সী একটি মাদি হাতি। কয়েক দিন ধরে হাতিটি অসুস্থ। চোখের দুই কোনে দুটি টিউমার উঠেছে।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি দুপুরে রংমালর টিউমারের অস্ত্রোপচার করেছেন বন্যপ্রাণী চিকিৎসকেরা। এখন চলছে ড্রেসিং ও চিকিৎসা। পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে আরও কিছুদিন সময় লেগে যেতে পারে বলে জানাল পার্ক কর্তৃপক্ষ।

সাফারি পার্কের বন্যপ্রাণী চিকিৎসক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘রংমালা’র বয়স এখন ৮০-৮৫ বছর হতে পারে। একটি হাতি গড়ে ৯০ বছর পর্যন্ত বাঁচে। বার্ধক্যজনিত কারণ ছাড়াও রোগশোক রংমালাকে দুর্বল করে তুলেছে। বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভোগার পর গত ২৩ ফেব্রুয়ারি পার্কে সোহেল নামে ২২ বছর বয়সী একটি পুরুষ সিংহের মৃত্যু হয়।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সাফারি পার্কের হাতি বেষ্টনীতে গিয়ে দেখা গেছে, ভেতরে চারটি হাতি দাঁড়িয়ে আছে। আরেকটি হাতি শাবক আশপাশে দৌঁড়ঝাপ করছে। বেষ্টনীর বাইরে দাঁড়িয়ে দর্শনার্থীরা হাতির অবস্থা দেখছেন। বেষ্টনীর বাইরে আইসোলেশন কেন্দ্রে রাখা হয়েছে অসুস্থ রংমালাকে। মাঠের এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছে রংমালা।

পার্কের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক মো. মাজহারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, স্ত্রী হাতি রংমালার চোখের দুই কোনে দুটি টিউমার হয়েছিল। তন্মধ্যে একটি ফেটে পানি ঝরছিল, পার্কের হাসপাতালে নিয়ে ক্ষতস্থানে অস্ত্রোপচার করা হয়। এখন ড্রেসিং এর পাশাপাশি চিকিৎসাও চলছে। বয়সের ভারে ন্যুব্জ হাতিটি কাবু হয়ে পড়েছে। ঠিকমত খাবারও মুখে নিতে চাইছে না। তবে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে স্বাস্থ্যের কিছুটা উন্নতি ঘটছে।

বন্যপ্রাণী চিকিৎসক ও বনকর্মীদের চেষ্টায় সুস্থ হয়ে উঠছে রংমালা
ছবি: প্রথম আলো

ব্যক্তি মালিকানায় থাকা হাতি রংমালাকে চট্টগ্রাম থেকে জব্দ করে ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে পাঠানো হয়। হাতির মাহুত মোহাম্মদ হোছাইন বলেন, এক বছর ৭ মাস আগে রংমালাকে পার্কে আনা হয়। এই হাতি দিয়ে গাছপালাসহ ভারী মালামাল টানানো হতো। সর্বশেষ হাতিকে দিয়ে চট্টগ্রাম মহানগরীতে লোকজনের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করা হতো। এ সময় বনবিভাগ হাতিটিকে জব্দ করে চকরিয়ার এই সাফারি পার্কে পাঠায়। সাফারি পার্ক ভ্রমণে আসা দর্শণার্থীরা তাঁদের শিশুসন্তানদের রংমালার পিঠে চড়িয়ে আনন্দ উপভোগ করতেন। গত কয়েকদিন ধরে শিশুদের পিঠে চড়ানো বন্ধ আছে।

সুস্থভাবে বেড়ে উঠছে যমুনা

২০২১ সালের মার্চ মাসে টেকনাফের সংরক্ষিত বন থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল কয়েক দিন বয়সী একটি হাতি শাবক। প্রসবের কয়েক দিন পর বনাঞ্চলের পাহাড় থেকে নিচে ছিটকে পড়ে মারা যায় মা হাতিটি। এরপর বিপদে পড়ে হাতি শাবকটি। কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের কর্মীরা জঙ্গল থেকে হাতি শাবকটি উদ্ধার করেন। দেখাশোনার জন্য সেটিকে চকরিয়া বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে পাঠানো হয়। এখানে আসার পর হাতি শাবকটির নাম রাখা হয় ‘যমুনা’। মায়ের বয়সী বড় কয়েকটি হাতির সঙ্গে হেলেদুলে কাটছে যমুনার জীবন।

যমুনার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে পার্কের ভারপ্রাপ্ত তত্ববাধায়ক মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, প্রথম যখন দুগ্ধপোষ্য হাতি শাবকটি পার্কে আনা হয়েছিল-তখন অবস্থা ছিল শোচনীয়। মুখ ও পায়ে আঘাতের দাগ ছিল, ওজন ছিল প্রায় ১০৭ কেজি। বর্তমানে শাবকের ওজন ৪৫০ কেজি। প্রতিদিন হাতি শাবকের পেছনে খরচ হচ্ছে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা। এখন প্রতিদিন ১০ প্যাকেট ল্যাকটোজেন দুধ, ৮০টি কলার পাশাপাশি প্রতিদিন সকালে দুধ-দইয়ের সাথে জাওভাত (নরম ভাত) খাওয়ানো হচ্ছে। তাতে শরীরের ওজন দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

২০০১ সালের ১৯ জানুয়ারি ২ হাজার ২৫০ একর বনাঞ্চলে গড়ে তোলা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক। এর আগে ১৯৮০ সালে এটি ছিল হরিণ প্রজননকেন্দ্র। বর্তমানে পার্কে আছে জেব্রা, ওয়াইল্ড বিস্ট, জলহস্তী, ময়ূর, অজগর, কুমির, হাতি, বাঘ, ভালুক, সিংহ, হরিণ, লামচিতা, শকুন, কচ্ছপ, রাজধনেশ, কাকধনেশ, ইগল, সাদা বক, রঙিলা বক, সারস, কাস্তেচরা, মথুরা, নিশিবক, কানিবক, বনগরুসহ ৫২ প্রজাতির ৩৪১টি প্রাণী। এগুলো আবদ্ধ অবস্থায় আছে। এ ছাড়া উন্মুক্তভাবে আছে ১২৩ প্রজাতির ১ হাজার ৬৫টি প্রাণী। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো গুইসাপ, শজারু, বাগডাশ, মার্বেল ক্যাট, গোল্ডেন ক্যাট, ফিশিং ক্যাট, খ্যাঁকশিয়াল ও বনরুই।