আইন মানার বালাই নেই

  • খুলনা শহর এবং জেলার ৯টি উপজেলায় ২৬টি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করা হয়েছে।

  • এর মধ্যে রয়েছে খুলনা শহরে লাইসেন্সবিহীন আটটি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার।

  • চিকিৎসা খাতে শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতা আনা এবং মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করতে অভিযান চলমান থাকবে।

খুলনায় বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অভিযান চলমান রয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, চিকিৎসা খাতে শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতা আনা এবং মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করতে অভিযান চলমান থাকবে। খুলনার নাগরিক সমাজের নেতারা অভিযানকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। আরও বড় পরিসরে এ অভিযান চলমান রাখার দাবি তাঁদের।

গত ২৬ মে সারা দেশের অনিবন্ধিত বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধের নির্দেশনা দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এরপর থেকে সারা দেশে শুরু হয় অভিযান।

নাগরিক সমাজের নেতারা অভিযানকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। আরও বড় পরিসরে অভিযান চালানোর দাবি।

খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তর এবং খুলনা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২৬-৩১ মে পর্যন্ত খুলনা শহর এবং জেলার ৯টি উপজেলায় ২৬টি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করা হয়েছে। এর মধ্যে খুলনা শহরে অভিযান পরিচালনা করে লাইসেন্সবিহীন আটটি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ৯টি উপজেলার মধ্যে ফুলতলা, তেরখাদা ও বটিয়াঘাটায় অভিযান পরিচালনা করে ১৮টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করা হয়েছে। ফুলতলা ও বটিয়াঘাটায় সাতটি করে এবং তেরখাদায় চারটি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে।

তথ্যউপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বটিয়াঘাটা, তেরখাদা ও ফুলতলায় বন্ধ করে দেওয়া ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার মধ্যে সাতটি ক্লিনিক ও হাসপাতাল, সাতটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং বাকি চারটিতে ডায়াগনসিসের পাশাপাশি চিকিৎসাসেবা দেওয়া হতো। শহরে বন্ধ করে দেওয়া আটটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সাতটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার, অন্যটি হাসপাতাল। এ অভিযানের সময় জেলার আটটি চিকিৎসাসেবা–সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানকে নবায়ন হালনাগাদ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, বটিয়াঘাটার পাঁচটি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক, অপারেশন থিয়েটার সহকারী (নিবন্ধিত ডাক্তার), পর্যাপ্তসংখ্যক সিনিয়র স্টাফ নার্স, আয়া ও গার্ড না থাকায় সিলগালা সহকারে বন্ধ করা হয়। এগুলো হলো সোনালী ক্লিনিক, সুন্দরবন ক্লিনিক, সফুরা ক্লিনিক, নোভা ক্লিনিক ও খারাবাদ বাইনতলা ক্লিনিক। তেরখাদার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সরফরাজ ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও প্রাইভেট হাসপাতালটি নবায়ন না থাকার পাশাপাশি হাসপাতালে ডিউটি ডাক্তার ও নার্স না থাকায় নবায়নের নির্দেশের পাশাপাশি হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। বাকি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করা হয়েছে অনিবন্ধিত থাকায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকের মধ্যে চিকিৎসকেরাও আছেন।

গত ২৯ মে খুলনা নগরে যে আটটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ক্লিনিক বন্ধের নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ‘এবি হাসপাতাল’ এর মধ্যে একটি। নগরের সোনাডাঙ্গা কেডিএ আউটার বাইপাস রোডের যুব উন্নয়ন ভবনের ঠিক বিপরীত পাশে হাসপাতালটির অবস্থান। হাসপাতালটির মালিক গোলাম মোস্তফা। তিনি অর্থোপেডিক কনসালট্যান্ট। নিজ বাড়িতে তাঁর এ হাসপাতাল।

গোলাম মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, বছরখানেক আগে এ হাসপাতাল চালু করেন। প্রথমদিকে শুধু ল্যাবে টেস্ট করাতেন। সাত-আট মাস আগে রোগী ভর্তি শুরু করেছেন। সব ধরনের কাগজপত্র প্রস্তুত করে হাসপাতাল এবং ল্যাবের লাইসেন্সের জন্য তিনি প্রথম থেকেই আবেদন করে রেখেছেন। তবে পরিদর্শনের জন্য আসা হবে এ রকম একটা বার্তা ছাড়া আর কিছু পাননি। হাসপাতাল করার আগেই লাইসেন্স দরকার, তা তিনি জানতেন না। তিনি মনে করেছিলেন, লাইসেন্সের জন্য আবেদন করার পর চালু করা যায়। হাসপাতাল চলমান অবস্থায় লাইসেন্স নিতে হয়।

অভিযানে বন্ধ করে দেওয়া বটিয়াঘাটার সুন্দরবন ক্লিনিকের পরিচালক তুষার কান্তি মণ্ডল বলেন, ‘আমাদের লাইসেন্স আছে। যথেষ্ট জনবলও আছে। তবে তারা যে পরিমাণ জনবলের কথা বলছে, উপজেলা পর্যায়ের ক্লিনিকে ওই পরিমাণ জনবল নিয়ে সেবা দেওয়া সম্ভব না। আমাদের অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক ও অপারেশন থিয়েটার সহকারী (নিবন্ধিত ডাক্তার) নিয়োগ দেওয়া আছে। তবে সার্বক্ষণিক তাঁরা তো হাসপাতালে থাকবেন না, এটাই বাস্তবতা।’

খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তরের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) হারুন-অর-রশীদ বলেন, এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের কাছে থাকা তালিকা অনুয়ায়ী নগরের ৩৯টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পুরোপুরি অনিবন্ধিত অবস্থায় আছে। আগেই সেগুলোকে বন্ধ করার জন্য চিঠি দিয়ে লিখিত নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া যেগুলোর লাইসেন্স নবায়ন করা নেই, তাদের যত দ্রুত সম্ভব নবায়নের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্দেশ না মানলে সেগুলোও বন্ধ করা হবে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) খুলনার সাধারণ সম্পাদক কুদরত-ই-খুদা বলেন, আরও বড় পরিসরে অভিযান চালানো দরকার। তবে শেষ পর্যন্ত এটা যেন লোক দেখানো না হয়, সে বিষয়টা খেয়াল রাখা দরকার।