আগামী মাসে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের জন্য দুই প্রান্তেই প্রস্তুতি নিচ্ছে সেতু বিভাগ

পদ্মা সেতু
ফাইল ছবি

জুনের শেষ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন। মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্ত থেকে উদ্বোধন করে তিনি সেতু পার হয়ে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে আসবেন। জাজিরা প্রান্তের টোল প্লাজায় উদ্বোধনী কাজ শেষ করে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়িতে জনসভা করবেন। এমনটা ধরে নিয়েই সে লক্ষ্যে কাজ করছে সেতু বিভাগ স্থানীয় প্রশাসন।

গত রোববার সেতু বিভাগের কর্মকর্তা ও প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় নিয়োজিত স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) কর্মকর্তারা সেতুর জাজিরা প্রান্তের বিভিন্ন স্থান ও কাঁঠালবাড়ি এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

সেতু বিভাগের শীর্ষস্থানীয় এক প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, জুনের শেষ সপ্তাহে পদ্মা সেতু উদ্বোধন করা হচ্ছে, এটা একরকম চূড়ান্ত। প্রধানমন্ত্রী এখন দিনক্ষণ ঠিক করবেন। সে লক্ষ্য নিয়ে সেতু বিভাগ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্থানীয় প্রশাসন ও প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় নিয়োজিত এসএসএফের কর্মকর্তারা কাজ করছেন। সেতুর মাওয়া প্রান্তে প্রথমে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর সেতু দিয়ে পার হয়ে তিনি জাজিরা প্রান্তের টোল প্লাজায় আসবেন। সেখানে আরেকটি উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে। এরপর তিনি মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটে জনসভা করবেন। সেতুর মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে ৪০ ফুট উচ্চতার দুটি ম্যুরাল নির্মাণ করা হচ্ছে। দুটি ম্যুরালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি থাকবে।

এসব কার্যক্রম পরিদর্শনের জন্য সেতু বিভাগসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা প্রতিদিন মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তের বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করছেন। গত সপ্তাহে মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর ও মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তারা সভা করেছেন।

সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, গত মাসে সেতুতে পিচ ঢালাইয়ের কাজ, বাতি বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। এখন তাতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার কাজ চলছে। এ ছাড়া সেতুতে সাইন, সংকেত ও মার্কিং বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। সেতুর সীমানাদেয়ালের ওপর স্টিলের রেলিং বসানোর কাজ চলছে।

সেতুর আগেই দুই প্রান্তে নির্মাণ করা হয়েছে সংযোগ সড়ক। ১০ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার সংযোগ সড়কটি ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ পাঁচ বছর ধরে ওই সংযোগ সড়ক ব্যবহার করে নৌপথে ঢাকা যাতায়াত করছেন। আর নদীশাসন কাজও প্রায় শেষ প্রান্তে। জাজিরার নাওডোবা থেকে শিবচরের মাদবরচর পর্যন্ত সাড়ে ১০ কিলোমিটার নদীশাসন এলাকা এখন দৃষ্টিনন্দন বিনোদনকেন্দ্র। খুব কাছ থেকে সেতু দেখার জন্য সেখানে প্রতিদিন শত শত মানুষ ভিড় করছেন।

পদ্মা সেতুর (মূল সেতু) দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। দুই প্রান্তের উড়ালপথ (ভায়াডাক্ট) ৩ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার। সব মিলিয়ে সেতুর দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার। পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ২৭ হাজার ৩৪১ কোটি টাকার মতো।

এপ্রিল মাসের অগ্রগতি প্রতিবেদন অনুসারে, মূল সেতুর কাজ এগিয়েছে ৯৮ শতাংশ। নদীশাসনের কাজের অগ্রগতি ৯২ শতাংশ। সব মিলিয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি ৯৫ শতাংশ। দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৯টি জেলাকে সারা দেশের সঙ্গে সড়কপথে যুক্ত করবে পদ্মা সেতু। এ সেতুর মাধ্যমে মোংলা বন্দর ও বেনাপোল স্থলবন্দরের সঙ্গে রাজধানী ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। চলাচল সহজ করার পাশাপাশি অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে পদ্মা সেতু। সমীক্ষা অনুযায়ী, পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ১ দশমিক ২৩ শতাংশ হারে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বৃদ্ধি পাবে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জিডিপি বাড়বে ২ দশমিক ৩ শতাংশ।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সেতুটি জুনের মধ্যে প্রস্তুত করার কাজ করছি আমরা। এখন ফিনিশিংয়ের কাজ চলছে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে সেতু উদ্বোধনের দিনক্ষণ ঠিক করবেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং সচিব। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের জন্য সেতুর দুই প্রান্তকে প্রস্তুত করা হচ্ছে। কোথায় কী অনুষ্ঠান হবে, তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। তবে আমরা দুই প্রান্তেই প্রস্তুতি নিচ্ছি।’