আগুনে ঘর হারানো বালুখালীর রোহিঙ্গারা ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের আতঙ্কে

বাঁশ আর ত্রিপল দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ঝুপড়ি ঘর। ঘূর্ণিঝড়ে এসব ঘর উড়ে যাওয়ার আতঙ্কে আছেন বসবাসকারীরা। আজ মঙ্গলবার উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে
প্রথম আলো

ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ আঘাত হানার শঙ্কায় কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী ঝুপড়ি ঘরে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা আতঙ্কে আছেন। গত ২২ মার্চ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বালুখালী রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের প্রায় ১০ হাজারের বেশি ঘর পুড়ে যায়। এরপর থেকে বাঁশ ও ত্রিপল দিয়ে বানানো ঝুপড়ি ঘরে থাকছেন রোহিঙ্গারা।

কক্সবাজার শহর থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরে (দক্ষিণে) এই আশ্রয়শিবির। কয়েকটি উঁচু পাহাড়ের ঢালুতে গড়ে তোলা হয়েছে এই শিবির। যদিও অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা বলছেন, ৩৪টি আশ্রয়শিবিরে দুর্যোগ মোকাবিলায় পাঁচ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

ক্যাম্পের অভ্যন্তরে এক হাজারের বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কার্যালয় খোলা রাখা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গার আশ্রয় হবে। এ ছাড়া ক্যাম্পের ভেতরে বেশ কিছু খোলা মাঠ প্রস্তুত রাখা হয়েছে, সেখানে ঘূর্ণিঝড়ে গৃহহীন এবং পাহাড়ের ঢালুতে ঝুঁকিতে থাকা পরিবারগুলোকে সাময়িকভাবে সরিয়ে নেওয়া হবে।

বালুখালী আশ্রয়শিবিরে অন্তত ৭০ হাজার রোহিঙ্গার বাস। ক্যাম্প-৮–এর বলীবাজার পাহাড়ের ঢালুতে ঝুঁপড়ি ঘরে বসবাস করছেন ছৈয়দ করিম (৫৫)। পরিবারে স্ত্রী ও পাঁচ ছেলেমেয়ে।

করিম বলেন, আগুনে তাঁর রেশন কার্ডটিও পুড়ে গেছে। তাঁর শঙ্কা ঘূর্ণিঝড়ে যদি তেমন ক্ষতি না-ও হয়, ঝোড়ো হাওয়ায় ক্যাম্পের ছাউনিগুলো উড়ে যাবে। তখন তাঁর মতো হাজার হাজার রোহিঙ্গা মাথা গোঁজার ঠাঁই হারাবেন।

বালুখালী ক্যাম্প-৮–এর রোহিঙ্গা সাজেদা বেগম (৩৪) বলেন, প্রচণ্ড দাবদাহে ত্রিপলের ছাউনির নিচে থাকা যেমন কষ্টের, আবার ঝড়বৃষ্টিতে ছাউনির ভেতর পানি প্রবেশ করে। তখন ঘরে থাকাও কষ্টের।

উখিয়ার কুতুপালং, লম্বাশিয়া, মধুরছড়া, জুমশিয়া আশ্রয়শিবিরেও একই অবস্থা। রোহিঙ্গা বসতিগুলো তৈরি হয়েছে ২০ থেকে ২৫টি উঁচু পাহাড়ের ‍ওপর ও ঢালুতে। পাহাড়ের নিচে সমতলেও আছে রোহিঙ্গা বসতি। ভারী বৃষ্টিপাত হলে সমতলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।

দুর্যোগ মোকাবিলায় আশ্রয়শিবিরে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের সচেতন করেন এপিবিএনের সদস্যরা। গত সোমবার উখিয়ার কুতুপালং আশ্রয়শিবিরে
সংগৃহীত

২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে অন্তত আট লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এর আগে পালিয়ে আসে আরও কয়েক লাখ। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১১ লাখ।

বালুখালী শিবিরের রোহিঙ্গানেতা কামাল আহমদ (৫০) জানান, করোনা সংক্রমণ রোধে ২৩ মে থেকে উখিয়ার কুতুপালংসহ চারটি ও টেকনাফের একটি আশ্রয়শিবিরে আট দিনের কঠোর লকডাউন চলছে। ৩০ মে লকডাউন শেষ হবে। লকডাউনের কারণে ৯ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অনেকটাই গৃহবন্দী। এমন পরিস্থিতিতে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে ও ভারী বৃষ্টিপাত হলে একাধিক স্থানে পাহাড় ধসে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটতে পারে।

কামাল বলেন, পাহাড়ের ঢালুতে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করা অন্তত দেড় লাখ রোহিঙ্গাকে ঝড় আঘাত হানার আগেই নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া উচিত।

রোহিঙ্গা শিবিরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক ও পুলিশ সুপার নাইমুল হক বলেন, ক্যাম্পে কঠোর লকডাউন কার্যকরের পাশাপাশি দুর্যোগ মোকাবিলার বিষয়ে রোহিঙ্গা তরুণ-যুবকদের সচেতন করা হচ্ছে। ক্যাম্পের বিভিন্ন গলিতে গিয়ে পুলিশ রোহিঙ্গাদের দুর্যোগ বিষয়ে সচেতন করছে। ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে স্বেচ্ছাসেবীরা যাতে ক্যাম্পের ভেতর থেকে রোহিঙ্গা নারী-শিশুদের দ্রুত আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসেন, সে বিষয়ে বলা হয়েছে।