আগুন নেভাতে গিয়ে নিখোঁজ ফরিদুজ্জামান, নির্বাক নববধূ

দুই বছর আগে সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে ফায়ার ফাইটার পদে যোগ দেন ফরিদুজ্জামান
ছবি: সংগৃহীত

গত শনিবার রাতে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিসের কর্মী ফরিদুজ্জামান (২২) কিছুটা অসুস্থ বোধ করছিলেন। তবে ওই সময় ফায়ার সার্ভিস অফিসে পাগলা ঘণ্টা বাজতে শুরু করে। ফলে দায়িত্বের প্রয়োজনে ফরিদুজ্জামান আর ঘরে বসে থাকতে পারেননি। অসুস্থ শরীর নিয়েই বিএম কনটেইনার ডিপোতে ছুটে গিয়েছিলেন। সেখানে যাওয়ার আগে একবার বাড়িতে ফোন করে ফরিদুজ্জামান জানিয়েছিলেন, তিনি কাজে যাচ্ছেন। এর কিছুক্ষণ পর থেকেই ফরিদুজ্জামানের মুঠোফোন বন্ধ হয়ে যায়। আজ সোমবার বেলা দেড়টা পর্যন্ত ফরিদুজ্জামানের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুন

ফরিদুজ্জামানের বাড়ি রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার ইমাদপুর ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়া গ্রামে। বাবা ভ্যানচালক সাইফুল ইসলাম ও গৃহিণী ফুলমতি বেগমের দুই ছেলেমেয়ের মধ্যে ফরিদুজ্জামান বড়। ফরিদুজ্জামানের বোন সাবিহা আক্তার পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী। ছেলের কোনো খোঁজ না পেয়ে গতকাল রোববার মধ্যরাতে অ্যাম্বুলেন্সযোগে সীতাকুণ্ড রওনা দিয়েছেন।

ফরিদুজ্জামানের কোনো খোঁজ না পেয়ে তাঁর স্ত্রী আশা মনি এখন পাগলপ্রায়
ছবি: মঈনুল ইসলাম

আজ সকালে ফরিদুজ্জামানের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ফরিদুজ্জামানের নববধূ আশা মনি (১৯) নির্বাক হয়ে বসে আছেন। মাত্র তিন মাস আগেই তাঁদের বিয়ে হয়েছে। কখনো তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন। কথা বলার মতো কোনো শক্তিও নেই তাঁর শরীরে। শনিবার মধ্যরাত থেকে কাঁদতে কাঁদতে অসাড় হয়ে পড়েছেন তিনি। ওই দিন রাতেই তাঁর স্বামীর সঙ্গে শেষ কথা হয়েছে। এরপর আর কোনো যোগাযোগ হয়নি।

আরও পড়ুন

ফরিদুজ্জামানের চাচা আমানউল্লাহ সরকার বলেন, ছোটবেলা থেকে ফরিদুজ্জামান পড়াশোনায় মনোযোগী ছিলেন। স্থানীয় আদারহাট হাইস্কুল থেকে এসএসসি এবং মির্জাপুর বশিরউদ্দিন কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন ফরিদুজ্জামান। ছেলেকে পড়াশোনা করানোর জন্য ফরিদুজ্জামানের বাবা অনেক কষ্ট করেছেন। কখনো তিনি দিনমজুরি করেছেন, কখনো ভ্যান চালিয়ে ছেলেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

ফরিদুজ্জামান নিখোঁজের খবর পেয়ে স্থানীয় লোকজন তাঁর গ্রামের বাড়িতে ভিড় করেছেন
ছবি: মঈনুল ইসলাম

ফরিদের আরেক চাচা তোতা মিয়া বলেন, ‘ফরিদ কয়েক দিন আগে তাঁর বাবাকে বলছিল, “চাকরি করছি। এখন তোমাকে আর কষ্ট করে ভ্যান চলাতে হবে না।” কিন্তু সেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হতে শুরু করেছে। এখন কী সংবাদ অপেক্ষা করছে, জানি না।’

আরও পড়ুন

রংপুর ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক ফরিদ আহাম্মদ চৌধুরী বলেন, দুই বছর আগে সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে ফায়ার ফাইটার পদে যোগ দেন ফরিদুজ্জামান। শনিবার রাতে বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর থেকে তাঁর কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তর থেকে অনুসন্ধান করা হচ্ছে।