আটকে পড়া জাহাজের নাবিকদের নিয়ে ‘মনগড়া সংবাদ হচ্ছে’

ইউক্রেনে আটকা পড়া ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজের প্রকৌশলী মো. সেলিম
ছবি: সংগৃহীত

ইউক্রেনে অলভিয়া বন্দরে আটকা পড়া ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজে কর্মরতদের মধ্যে আছেন প্রকৌশলী মো. সেলিম। তাঁর বাড়ি কিশোরগঞ্জের ভৈরবের শ্রীনগর ইউনিয়নের জাফরনগর গ্রামে। তাঁকে নিয়ে প্রতিটি মুহূর্ত শঙ্কা আর উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে পার করছেন পরিবারের সদস্য ও স্বজনেরা। সেলিমের নিরাপদ জীবন কামনায় আজ বাদ জুমা গ্রামের মসজিদে মসজিদে দোয়া হয়েছে।

সেলিমের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা হয় তাঁর লন্ডনপ্রবাসী চাচাতো ভাই তোফাজ্জল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বললেন, শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ফেসবুক মেসেঞ্জারে তাঁর ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। আটকে পড়াদের নিয়ে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদ দেখে হতাশা ও বিরক্তি প্রকাশ করেছেন সেলিম।

তোফাজ্জল বলেন, সেলিম লিখেছে তাঁদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে সময় যাচ্ছে। এই মুহূর্তে তাঁরা বাংকারে আছেন। সেলিম আক্ষেপ করে লিখেছেন, গণমাধ্যমে মনগড়া সংবাদ প্রচার হচ্ছে। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সত্যের কাছাকাছি কেউ পৌঁছাতে পারছে না। বলা হচ্ছে তাঁদের পোল্যান্ড সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এসব তথ্য ভুল।
তোফাজ্জলের মনে হয়েছে সেলিম মেসেঞ্জারে আরও সত্য লিখতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পারেননি। সব মিলিয়ে তাঁর মনে হয়েছে আটকা পড়া সবাই এই মুহূর্তে খুব বিপদে রয়েছেন।

স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জাফরনগর নয়াহাটি গ্রামের মফিজ উদ্দিনের চার সন্তানের মধ্যে সেলিম একমাত্র পুত্রসন্তান। সেলিমের দুটি কন্যাসন্তান রয়েছে। সেলিম কর্মজীবনে প্রবেশ করেন ২০০৮ সালে। তাঁর বর্তমান জাহাজ যাত্রা শুরু হয় ছয় মাস আগে। এই যাত্রায় যাওয়ার আগে গ্রামে ছিলেন পাঁচ মাস। তাঁর বাবা মফিজ উদ্দিন কয়েক বছর ধরে অসুস্থ। ছেলের জীবন নিয়ে শঙ্কায় তিনি আরও মুষড়ে পড়েছেন। বিছানা থেকে উঠতে পারছেন না। মা নুরজাহান বেগমের প্রতিটি মুহূর্ত কাটছে অস্থিরতায়।

শুক্রবার বিকেলে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সেলিমদের ঘরে কেউ নেই। পরিবারের সদস্যরা পৌর শহরের কমলপুর এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করছেন। বাড়ির সামনের দোকানে বসা লোকজনের কথা বলার বিষয় ছিল ইউক্রেন ইস্যু। সেলিমের আপন চাচাতো ভাই হান্নান মিয়া তাঁদের ঘরের বারান্দায় কয়েকজন নিয়ে বসে একই বিষয় নিয়ে কথা বলছিলেন।

মুঠোফোনে কথা হয় সেলিমের বাবা মফিজ উদ্দিনের সঙ্গে। তাঁর একটাই দাবি, সরকার যেন তাঁর ছেলেসহ আটকা পড়া সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।

ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের আগে থেকেই অলভিয়া বন্দরে অবস্থান করছিল ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’। এর মধ্যে গত বুধবার রকেট হামলায় হাদিসুর রহমান নামে জাহাজের একজন প্রকৌশলী প্রাণ হারান। এ ঘটনার পর জাহাজটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে ২৮ জন নাবিক ও মারা যাওয়া নাবিক হাদিসুর রহমানের মরদেহ সরিয়ে নেওয়া হয়। তাঁদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে যেতে নানা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার।