আদমজী ইপিজেডে তিতাসের ফেটে যাওয়া পাইপলাইনটি এখনো মেরামত হয়নি

আদমজী ইপিজেডে পাইলিংয়ের সময় গতকাল সকালে তিতাস গ্যাসের প্রধান পাইপলাইন ফেটে আগুন ধরে যায়। আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও ২৪ ঘণ্টায় সেটি মেরামত করা সম্ভব হয়নি
ছবি: প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে আদমজী ইপিজেডের ভেতরে পাইলিংয়ের সময় ফেটে যাওয়া তিতাস গ্যাসের পাইপলাইনটি ২৪ ঘণ্টায়ও মেরামত করা সম্ভব হয়নি। গ্যাস সরবরাহ বন্ধের পরও আজ শনিবার সকালে ফেটে যাওয়া পাইপলাইন থেকে গ্যাস বের হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ জন্য সঞ্চালন লাইন বন্ধ রাখায় সিদ্ধিরগঞ্জ ও রূপগঞ্জের বেশ কিছু এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ আছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা।

তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা পাইপলাইনটি মেরামতের কাজ করছে। পাইপলাইনের যে অংশে দেড় শ টন ওজনের পাইলটি দেবে গেছে, সেটি এখনো ওঠানো সম্ভব হয়নি। সেটি ওঠানো গেলেই পাইপলাইনটি মেরামত করা হবে।

আরও পড়ুন

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিদ্ধিরগঞ্জ উপজেলার মিজমিজি, দক্ষিণপাড়া, নিমাইকাসারী, সানারপাড়, সুমিলপাড়া ও রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা, গোলাকান্দাইল, দীঘি বরাব, বরপাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ আছে। গ্যাস বন্ধ থাকায় এসব এলাকার শিল্পকারখানার উৎপাদনও বন্ধ।

ভুলতা এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আদমজী ইপিজেডে অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ। গ্যাস বন্ধ থাকায় হোটেল থেকে খাবার এনে খেতে হচ্ছে। অনেকে মাটির চুলায় রান্নার কাজ করছেন। তিনি বলেন, পুরো রূপগঞ্জ এলাকায় গ্যাস নেই।

সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি দক্ষিণপাড়া এলাকার বাসিন্দা আসমা বেগম বলেন, গতকাল সকালে হঠাৎ গ্যাস চলে যায়। দুপুরে ও রাতে বাসায় রান্না করতে পারেননি। আজ সকালে ও দুপুরে একই অবস্থা। হোটেল থেকে খাবার এনে খেতে হচ্ছে। তিনি বলেন, মাটির চুলায় রান্নার জন্য বাজার থেকে লাকড়ি কিনে এনেছেন। কবে গ্যাস আসবে জানেন না।

আদমজী ইপিজেডের সিনিয়র স্টেশন মাস্টার রুহুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, সকালে আদমজী ইপিজেডের ফেটে যাওয়া পাইপলাইন দিয়ে গ্যাস বের হওয়ার খবর পেয়ে তাঁরা ঘটনাস্থলে গিয়ে সেটি নিশ্চিত হন। তিনি বলেন, লাইনটি হাইপ্রেসারের লাইন হওয়ায় হয়তো গ্যাস বের হচ্ছে, ছিদ্র মেরামত করতে একটু সময় লাগছে। তবে গ্যাস বের হলেও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেনি। তিতাসের লোকজন সেখানে কাজ করছেন। আশপাশের অনেক জায়গায় গ্যাস নেই বলে তিনি জানান।

আরও পড়ুন

তিতাস গ্যাসের নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমাম উদ্দিন বলেন, তিতাসের প্রধান পাইপলাইনটি ১৯৯৯ সালের পুরোনো। ওই পাইপলাইন থেকে একটু গ্যাস বের হতেই পারে। এটি কোনো সমস্যা নয়। যাতে গ্যাস না বের হয়, তাঁরা সেই ব্যবস্থা নিচ্ছেন। তিনি বলেন, তিতাসের প্রধান সঞ্চালন লাইনের যে অংশে পাইলিংয়ের পাইলটি দেবে গেছে, সেটি এখনো ওঠানো সম্ভব হয়নি। পাইলটির ওজন প্রায় দেড় শ টন। সেটি ওঠানো সম্ভব হলেই ফেটে যাওয়া পাইপলাইনটি মেরামত করা সম্ভব হবে। এ জন্য গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখতে হয়েছে।

ইমাম উদ্দিন আরও বলেন, গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় সিদ্ধিরগঞ্জ ও রূপগঞ্জের বেশ কিছু এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ আছে। পাইপলাইনটি মেরামতের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন তাঁরা। মেরামতের কাজ শেষ হলেই গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

ফায়ার সার্ভিসের নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আরেফিন প্রথম আলোকে বলেন, গ্যাস বের হলেও আজ কোনো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেনি। তিতাস গ্যাসের লোকজন সেখানে কাজ করছেন।

আদমজী ইপিজেডে পলমল গ্রুপের একটি খালি প্লটে ভবন নির্মাণের পাইলিংয়ের সময় মাটির ২০ ফুট গভীরে তিতাস গ্যাসের প্রধান পাইপলাইনটি ফেটে আগুন ধরে যায়। পৌনে পাঁচ ঘণ্টার চেষ্টায় ফায়ার সার্ভিসের নয়টি ইউনিট ও তিতাস গ্যাসের লোকজন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। তবে আগুনে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।