আনাস মাদানীকে মাদ্রাসা থেকে অব্যাহতির ঘোষণা

হাটহাজারীর দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসায় বুধবার ছাত্ররা বিক্ষোভ করেন। পরে ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে
ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামের হাটহাজারীর দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষাসচিব আনাস মাদানীকে মাদ্রাসা থেকে অব্যাহতির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

বুধবার রাতে মাদ্রাসা পরিচালনার শুরা কমিটির সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে আনাস মাদানীকে অব্যাহতির ঘোষণা দেওয়া হয়। শুরা কমিটির সদস্য মাওলানা নোমান ফয়েজী এই তথ্যের সত্যতা প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন।

নোমান ফয়েজী বলেন, শুরা কমিটির সভাপতি (শাহ আহমদ শফী), কয়েকজন সদস্য ও মাদ্রাসার কয়েকজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষক সভায় একমত হওয়ার পর আনাস মাদানীকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

আনাস মাদানী মাদ্রাসাটির মহাপরিচালক ও হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফীর ছেলে। আনাস হেফাজত ইসলামের প্রচার সম্পাদক।

আনাসকে মাদ্রাসা থেকে অব্যাহতিসহ ছয় দফা দাবিতে গতকাল জোহরের নামাজের পর থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন ছাত্ররা। তাঁরা মাদ্রাসার সব কটি ফটকে তালা লাগিয়ে দেন। আনাসসহ কয়েকজন শিক্ষকের কক্ষে ভাঙচুর করা হয়। এ সময় হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মঈনুদ্দীন রুহীকে মাদ্রাসার ভেতরে পেয়ে মারধর করেন ছাত্ররা। আহত অবস্থায় তিনি এখন নগরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

তিনি আনাসের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। ছাত্ররা মাদ্রাসার মূল ফটকে তালা লাগিয়ে দিলে আইনশৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কায় মাদ্রাসার বাইরে গেটের সামনে অবস্থান নেন র‍্যাব ও পুলিশের সদস্যরা। তবে তাঁরা রাত ১২টার দিকে সেখান থেকে সরে যান।

আজ বৃহস্পতিবারও মাদ্রাসাটি ছাত্রদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। মাদ্রাসার সব কটি ফটকে তালা লাগানো রয়েছে। বন্ধ রয়েছে ক্লাস। মাদ্রাসার ভেতরে মাঠে অবস্থান করছেন ছাত্ররা। দেশের সর্বোচ্চ এই কওমি মাদ্রাসায় সাত হাজার ছাত্র অধ্যয়ন করেন।

বুধবার ঘটনাস্থলে এসেছিলেন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এটি মাদ্রাসার অভ্যন্তরীণ বিষয়। নিজেরা ঠিক করছেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যাতে অবনতি না হয়, সে জন্য অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স নিয়ে গিয়েছিলেন। এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।

হাটহাজারীর দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসায় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে
ছবি: সংগৃহীত

ঘটনাস্থলে আসা হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউওনও) রুহুল আমীনও বলেন, এটি তাদের (মাদ্রাসা) অভ্যন্তরীণ বিষয়।

ছাত্ররা মাদ্রাসার ভেতরে বিক্ষোভের সময় বিভিন্ন প্রচারপত্র বিলি করেন। সেখানে তাঁরা প্রথম দাবি দেন, আনাসকে মাদ্রাসা থেকে অব্যাহতির। অন্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—আনাস কর্তৃক অব্যাহতি দেওয়া তিনজন শিক্ষককে পুনর্বহাল করা। আনাস কর্তৃক নিয়োগ করা সব অযোগ্য শিক্ষককে ছাঁটাই করা। ছাত্রদের ওপর জুলুম-হয়রানি বন্ধ করা। আহমদ শফী বয়স্ক হওয়ায় একজন দক্ষ আলেমকে মাদ্রাসার পরিচালক নিয়োগ করা। শুরা কমিটির সদস্য আবদুল কুদ্দুস, নুরুল আমীন, আবুল কাসেম ফেনীসহ বিতর্কিতদের বাদ দেওয়া।

ছাত্রদের বিক্ষোভের একপর্যায়ে জরুরি শুরা কমিটির বৈঠক ডাকেন আহমদ শফী। রাত সাড়ে ১০টার দিকে বৈঠক শেষ হয়। বৈঠক শেষে শুরা কমিটির সদস্য মাওলানা নোমান ফয়েজী ছাত্রদের বলেন, আহমদ শফীর সভাপতিত্বে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে আনাসকে অব্যাহতি দেওয়ার। ছাত্রদের হয়রানি করা হবে না। বাকি সিদ্ধান্ত আগামী শনিবার মাদ্রাসার শুরার বৈঠকে নেওয়া হবে। এরপর ছাত্ররা শান্ত হন।

ঘটনার বিষয়ে জানতে আনাস মাদানীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হয়। রিং হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

হেফাজতে ইসলামের নেতারা জানান, আমির আহমদ শফী ও মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীর মধ্যে দীঘদিনের দ্বন্দ্বের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে। গত ১৭ জুন জুনায়েদ বাবুনগরীকে দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তাঁর জায়গায় দায়িত্ব দেওয়া হয় মাদ্রাসার জ্যেষ্ঠ শিক্ষক শেখ আহমেদকে। তিনি হেফাজতের আমির শাহ আহমদ শফীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। এ ছাড়া বাবুনগরীর ভাগিনা মাদ্রাসার শিক্ষক আনোয়ার শাহকে মাদ্রাসা থেকে এক মাস আগে বের করে দেওয়া হয়। সবকিছু মিলিয়ে বাবুনগরীর অনুসারীরা ক্ষুব্ধ হন আনাসের ওপর। তাঁদের অভিযোগ, আহমদ শফী বয়স্ক হওয়ায় তাঁকে ভুল বুঝিয়ে আনাস এসব কাজ করিয়েছেন। এতে বিতকের সৃষ্টি হয়।

হেফাজতে ইসলামের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৩ সালে ১৩ দফা দাবি নিয়ে হেফাজতে ইসলাম গঠন করা হয়। বছর দুয়েক না যেতেই আমির ও মহাসচিবের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। ঘনিষ্ঠ কাউকে মাদ্রাসা পরিচালনার দায়িত্বে রাখতে ২০১৮ সালের মে মাসে ফটিকছড়ির নানুপুর ওবাইদিয়া মাদ্রাসার শাইখুল হাদিস শেখ আহমেদকে হাটহাজারী মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে আনা হয়। এর আগে তিনি হাটহাজারী মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে ছিলেন। তখন তাঁকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।