আবার পায়ে হেঁটে সূর্যের আলো দেখতে চায় তিশা

তিশা আক্তার। অসুস্থতার আগে
সংগৃহীত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার শিকারপুর তালপট্টি গ্রামের মেধাবী শিক্ষার্থী তিশা আক্তার (১৩)। বাড়িতে ও বিদ্যালয়ে সবার আদরের ‘তিশা মনি’। সদা উৎফুল্ল এই মেধাবী শিক্ষার্থীর জীবনে এখন দুর্ভাগ্যের কালো মেঘ। গত বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়া ইন্ডিপেনডেন্ট স্কুল থেকে পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষায় জিপিএ–৫ ও ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পায় সে। এরপর ভর্তি হয়েছিল সাবেরা সোবহান সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে। এক মাস ধরে বাড়ির বিছানায় শুয়ে আছে এই কিশোরী। তার মেরুদণ্ডের হাড় ক্ষয় হয়ে হাড়ের ভেতরে মরণব্যাধি টিউমার ধরা পড়েছে। এরপর থেকে শয্যাশায়ী জীবন কাটাচ্ছে সে। তার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন ১০-১২ লাখ টাকা। কিন্তু টাকার অভাবে তিশার চিকিৎসা আটকে গেছে।

এদিকে মেধাবী এই কিশোরীকে বাঁচাতে আর্থিক সহযোগিতার আশায় তার শিক্ষক থেকে শুরু করে বিভিন্ন দপ্তরে কড়া নাড়ছেন মা আরজু আক্তার। বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খানের কাছে আর্থিক সহযোগিতার আবেদন করেন। জেলা প্রশাসক তাঁকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে কয়েক দিন পর দেখা করতে বলেছেন।

তিশার বাবা হাবিবুর রহমান নিজের ভাইয়ের কাঠের দোকানে মিস্ত্রির কাজ করেন। তাতে সামান্য আয়ই হয় তাঁর। তবে ছেলেমেয়েদের উচ্চশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে তিনি শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। জেলা শহরের কলেজপাড়ার ডিসি-এসপি বাংলোর পেছনে তাঁর ভাড়া বাসা। সেখানেই এখন শয্যাশায়ী তাঁর মেধাবী মেয়ে। চার মেয়ে ও দুই ছেলে মধ্যে তিশা হাবিবুর-আরজু দম্পতির পঞ্চম সন্তান।

তিশা খুব শান্ত স্বভাবের মেয়ে। পড়াশোনায় খুব মেধাবী। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় সে জিপিএ-৫ পেয়েছে। তার প্রাপ্ত নম্বর ছিল ৫৭৫। এই পরীক্ষায় ট্যালেন্টপুলে বৃত্তিও পেয়েছে আমার বোন। এর আগে প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত সব শ্রেণিতেই তাঁর ক্লাসরোল ছিল ১। কিন্ডারগার্টেনের সব বার্ষিক পরীক্ষায় সে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পায়। কিন্তু আজ সে বিছানায় শুয়ে আছে। টাকার অভাবে তার চিকিৎসা বন্ধ হয়ে আছে।
স্বর্ণা আক্তার, তিশার বড় বোন
বিছানায় পড়ে আছে অসুস্থ তিশা
প্রথম আলো

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত অক্টোবরে তিশার শরীরে প্রথম ব্যথা শুরু হয়। ১০ অক্টোবর পরিবারের লোকজন তাকে জেলার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করান। অবস্থার কোনো উন্নতি না হলে ১৩ অক্টোবর তাঁরা তিশাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তিশাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানকার চিকিৎসকদের পরামর্শে গত ২৭ অক্টোবর ঢাকার একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে তিশার এমআরআই পরীক্ষা করান। পরীক্ষায় তিশার মেরুদণ্ডের ৬ শতাংশ হাড় ক্ষয় হয়ে গেছে দেখা যায় এবং সেখানে একটি টিউমার ধরা পড়ে। টিউমারটি মেরুদণ্ডের হাড় থেকে বাইরে বের হয়ে এসেছে।

এ বিষয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করে। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য তিশাকে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানকার চিকিৎসকেরা জানান, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তিশার মেরুদণ্ডে হাড় প্রতিস্থাপন ও টিউমার সরানো বাবদ তিন মাস সময় লাগবে। এই চিকিৎসার জন্য ব্যয় হবে প্রায় ১০-১২ লাখ। এত টাকা না থাকায় তিশার নিরুপায় পরিবার তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাড়িতে নিয়ে আসে।

তিশার বড় বোন স্বর্ণা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিশা খুব শান্ত স্বভাবের মেয়ে। পড়াশোনায় খুব মেধাবী। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় সে জিপিএ-৫ পেয়েছে। তার প্রাপ্ত নম্বর ছিল ৫৭৫। এই পরীক্ষায় ট্যালেন্টপুলে বৃত্তিও পেয়েছে আমার বোন। এর আগে প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত সব শ্রেণিতেই তাঁর ক্লাসরোল ছিল ১। কিন্ডারগার্টেনের সব বার্ষিক পরীক্ষায় সে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পায়। কিন্তু আজ সে বিছানায় শুয়ে আছে। টাকার অভাবে তার চিকিৎসা বন্ধ হয়ে আছে।’

গত ১০ অক্টোবর তিশা শেষবার পায়ে হেঁটে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হাসপাতালে গিয়েছিল। এরপর থেকে তিশা বিছানায় শুয়ে আছে। উঠে দাঁড়াতে পারে না এখন। আমার মেয়ে আবার পায়ে হেঁটে সূর্যের আলো দেখতে চায়।
আরজু আক্তার, তিশার মা
মেধাবী তিশার অর্জন
প্রথম আলো

তিশার মা আরজু আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত ১০ অক্টোবর তিশা শেষবার পায়ে হেঁটে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হাসপাতালে গিয়েছিল। এরপর থেকে তিশা বিছানায় শুয়ে আছে। উঠে দাঁড়াতে পারে না এখন। আমার মেয়ে আবার পায়ে হেঁটে সূর্যের আলো দেখতে চায়।’ তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত মেয়ের চিকিৎসায় লাখ টাকা খরচ হয়েছে। সেটিও ঋণ করে জোগাড় করেছেন তাঁরা। সংসারে অভাব-অনটন আর সন্তানদের পড়াশোনার খরচ জুগিয়ে মেয়ের চিকিৎসার খরচ জোগানো এখন অসম্ভব তাঁদের কাছে। টাকার অভাবে মেয়ের চিকিৎসা বন্ধ হয়ে আছে। দ্রুত অস্ত্রোপচার না করালে তিশা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে যাবে বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন। তিনি মেয়ের চিকিৎসায় সহযোগিতার জন্য জন্য সবাইকে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান।

জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা যতটুকু সম্ভব একটা তহবিল গঠন করে প্রাপ্ত অর্থ পরিবারকে দেব। আর বাসায় তার চলাফেরার জন্য তাকে একটি হুইল চেয়ারও দেওয়া হবে।’

তিশাকে সহযোগিতার জন্য একটি ব্যাংক হিসাব নম্বর খোলা হয়েছে। ব্যাংক হিসাব নম্বরটি হলো ২১২১৫৭০০০৯৩১৬, ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া শাখা। কেউ চাইলে বিকাশের মাধ্যমে তিশাকে সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে পারেন। তিশার মা আরজু আক্তারের ব্যক্তিগত বিকাশ নম্বরটি হলো ০১৭৮০৪২০৯৩৫।